অনলাইন ডেস্ক :
বরগুনায় আলোচিত রিফাত হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার মামলার প্রধান সাক্ষী ও তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। এজলাসে পুরোটা সময় মিন্নি ছিলেন নীরব। এ নিয়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
মঙ্গলবার গ্রেফতারের পর বুধবার বিকালে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে হাজির করা হয় মিন্নিকে। তার পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী না থাকার বিষয়ে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। মিন্নির বাবার অভিযোগ, প্রতিপক্ষের ভয়ে আইনজীবীরা মিন্নির পক্ষে দাঁড়াননি। অন্যদিকে আইনজীবীরা বলছেন ভিন্নকথা।
মিন্নির পক্ষে আদালতে আইনজীবী না থাকার বিষয়ে তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি তিন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম, তাদের দাঁড়ানোর কথা ছিল, কিন্তু আমার মনে হয় প্রতিপক্ষের ভয়ে তারা আমার মেয়ের পক্ষে দাঁড়াননি।’
মিন্নির বাবা আরও বলেন, আমার মেয়েকে বুধবার আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আদালতে আমার মেয়ের পক্ষে অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিন, অ্যাডভোকেট গোলাম সরোয়ার নাসির ও অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদেরের দাঁড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু কী কারণে তারা দাঁড়াননি আমি বলতে পারব না। তবে ধারণা করছি, প্রতিপক্ষের ভয়ে হয়তো কোনো আইনজীবীরা দাঁড়াননি।’
কোন প্রতিপক্ষের কারণে আইনজীবী দাঁড়াননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোন প্রতিপক্ষ সেটি আপনারাই বুঝে নিন। আমি বলতে গেলে বরগুনা থাকতে পারব না। এ ছাড়া খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সে কারণেই হয়তো সব কাগজপত্র প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি।’
তবে মিন্নির বাবার অভিযোগের বিষয়ে আইনজীবীরা বলছেন ভিন্নকথা। এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, আমাকে মোজাম্মেল হোসেন তার মেয়ের পক্ষে দাঁড়ানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমি তার পক্ষে দাঁড়াইনি।
আইনজীবী জিয়াউদ্দিন আরও জানান, মিন্নির বাবা তার কাছে আইনি সহায়তা চেয়েছেন, তবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে পারেননি। তাই তিনি আদালতে দাঁড়াতে পারেননি। তবে তার কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নেননি। মিন্নির বাবার দাবি, কী ধরনের কাগজপত্র লাগবে, তা তিনি জানেন না। তারা তাকে পরামর্শ দিলে সেভাবে কাজ করতেন।
আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদের বলেন, হঠাৎ করে আমাকে মিন্নির পক্ষে দাঁড়াতে বলেছিলেন তার বাবা। কিন্তু ওকালতনামায় স্বাক্ষর না থাকায় আমরা মিন্নির পক্ষে দাঁড়াতে পারিনি।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, যদি কোনো আইনজীবী আসামির পক্ষে দাঁড়াতে চায় এবং সেই বিষয়টি আদালতের বিচারকের কাছে আর্জি জানায় তা হলে বিচারক তাকে আসামির পক্ষে কথা বলার সুযোগ দেন।
তিনি আরও বলেন, ‘মিন্নিকে যখন আদালতে হাজির করা হয়েছিল, বিচারক তখন উপস্থিত আইনজীবীদের বলেছিলেন- কেউ আসামির পক্ষে দাঁড়াতে চান কিনা। কিন্তু তখন কোনো আইনজীবীই আসামির পক্ষে দাঁড়ানোর কথা বলেননি।’
বরগুনা জেলা দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী এম মজিবুল হক কিসলু বলেন, ‘আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবীকে দাঁড়াতে হলে ওকালতনামায় আসামির স্বাক্ষর থাকতে হয়। কোনো আইনজীবী চাইলে পুলিশি হেফাজতে থাকা আসামির সঙ্গে দেখা করে ওকালতনামায় স্বাক্ষর নিতে পারেন, অথবা আসামিকে আদালতে হাজির করলে বিচারকের কাছে আবেদন করে আসামির পক্ষে দাঁড়ানোর অনুমতি নিতে হয়।’
এদিকে এ খবর শুনে মিন্নির পক্ষে মামলা পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ফেনীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যায় গ্রেফতার সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ। তিনি মিন্নির পক্ষে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দিতে ইচ্ছুক বলে জানিয়েছেন।
ফারুক আহম্মেদ বলেন, মিন্নির পরিবার চাইলে তার পক্ষে ফারুক অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস দাঁড়াতে চায়। ফারুক অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস সব সময় নির্যাতিত, অসহায় ও অসচ্ছল পরিবারের পক্ষে ন্যায়বিচারের জন্য মামলা পরিচালনা করে থাকে।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা ঢাকা থেকে মিন্নির জন্য মামলা পরিচালনা করব। এ জন্য মিন্নির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। আমরা তাকে লিগ্যাল এইড (বিনা পয়সায় মামলা পরিচালনা) দেব।’