অনলাইন ডেস্ক :
আলোচিত গলাকাটা শিশু ও ছেলেধরা ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার রহস্য বের করেছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, নেত্রকোনায় শিশু সজীবকে বলাৎকারের পর গলা কেটে হত্যা করে রবিন।
তারা বলেন, প্রতিবেশীর ছেলে সজীবকে ফুসলিয়ে নির্মাণাধীন ভবনের তিনতলার একটি কক্ষে নিয়ে বলাৎকার করা হয়। পরে ভয় ও আতঙ্কে গলা কেটে হত্যা করে শিশুটির মাথা ব্যাগে নিয়ে মদ খেতে যায় রবিন।
শিশু সজীবের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আক্কাস উদ্দিন ভূঁইয়া। নেত্রকোনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে বুধবার (২৪ জুলাই) মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান তিনি।
আক্কাস উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে এটা গুজব। যারা এ ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে (১৮ জুলাই) সজীবের (৭) কাটা মাথা ব্যাগে নিয়ে ঘোরাফেরা করার সময় নেত্রকোনা শহরের নিউ টাউন এলাকায় জনতার হাতে ধরা পড়ে গণপিটুনিতে নিহত হয় রবিন।
নিহত রবিন শহরের পূর্ব কাটলি এলাকার এখলাছুর রহমানের ছেলে। সে মাদকাসক্ত ছিল। গলা কেটে হত্যার শিকার শিশু সজীব একই এলাকার রিকশাচালক রইছ উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় থানায় দুটি মামলা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী বলেন, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে শিশু সজীবকে বলাৎকারের পর হত্যা করা হয়। তবে পারিবারিক দ্বন্দ্ব থেকেও এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী আরও বলেন, রবিন মিয়া মাদকাসক্ত ছিল। তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। রবিনের জব্দকৃত মুঠোফোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তদন্ত করা হচ্ছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হত্যার আগে শিশু সজীবকে বলাৎকার করে রবিন।
পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আক্কাস উদ্দিন ভূঁইয়া, পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম খান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সীতাংশু বিকাশ আচার্য, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুল আলম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ফখরুজ্জামান জুয়েল প্রমুখ।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের কাটলি এলাকায় রাস্তার পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবনের তিনতলার টয়লেটে শিশু সজীবকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এরপর সজীবের মাথা একটি ব্যাগে চকপাড়া সুইপার কলোনিতে নিয়ে যায় রবিন। সেখানে মদ খেতে গেলে স্থানীয়দের নজরে পড়ে বিষয়টি। এ সময় রবিন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা ধাওয়া করে নিউটাউনের অনন্তপুকুর পাড়ে তাকে ধরে গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
জানা যায়, রবিন মিয়া প্রায় পাঁচ বছর আগে সদর উপজেলার মইষাখালী গ্রামের মারুফা আক্তারকে বিয়ে করে। বিয়ের পর মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। তাদের একটি মেয়েসন্তান রয়েছে। বছর খানেক আগে স্ত্রী রবিনকে ছেড়ে চলে যায়। মাদক সেবনের কারণে রবিনকে তার বাবা চার মাস আগে পুলিশে দিয়েছিলেন। মাস দেড়েক আগে জেল খেটে বাইরে আসে রবিন। মাসখানেক আগে তাকে শিকলে বেঁধে পুলিশে খবর দিতে যান বাবা। এ সময় পালিয়ে যায় রবিন। এরপর থেকে আর বাড়ি আসেনি। এরই মধ্যে শিশু সজীবকে হত্যা করে রবিন।