31 C
Dhaka
এপ্রিল ১৯, ২০২৪
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জাতীয় প্রচ্ছদ বরিশাল রাজণীতি

ইতিহাসের আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বাংলাদেশের অহংকার

ইতিহাস বস্তুত রসবোধহীন। শুধু সময়কে ফ্রেমে আটকে দিয়ে চলে যায়। কারো মন্বন্তর বা কারো হিরোইজম ফুটিয়ে তোলার গরজ কখনো দেখায়নি। তবে অদেখানো প্রচেষ্টাগুলোতে অনেক পদাঙ্ক আঁকা থাকে যা সময়ের বির্বতনে খুব প্রাসঙ্গিক ও জরুরী হয়ে ওঠে। আমাদের গর্হিত কাজ হলো নিরাসক্ত ইতিহাসকে পর্যালোচনা না করা। ফলে প্রয়োজনীয় কিছু ঘটনা, প্রয়োজনীয় ব্যক্তিত্বকে হতে দেখা যায় নিশ্চুপ। এই ব্যক্তি বা ঘটনা আসলে কি অতাটা ক্ষণস্থায়ী, যতটা ইতিহাস দ্রুত পাল্টায়? আমরা অনুধাবন করতে পারি না। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো কর্নেল তাহের, কখনো শহীদ নূর হোসেন আবার শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে দেখা গেছে।এদিকে বছরের মধ্যে ২ ডিসেম্বর এলে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে স্তুতি করতে দেখা গেছে তার সমর্থকদের। কারন এদিন স্বাধীন বাংলার ইতিহাসে সবুজ সূর্যোদয়ের দিন। পার্বত্য চট্টগ্রামের হিংসা এবং রক্তাক্ত ঝর্ণাধারা বন্ধ করে শান্তি চুক্তির দিন। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন চিফ হুইপ থাকা অবস্থায় শান্তির নিশ্চয়তা করেছিলেন তিনি। কিন্তু আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ কি অতটুকুতে সীমাবদ্ধ কেউ? নতুবা শাসক দলের নীতি নির্ধারণি মহলের হেভিওয়েট একজন? অথবা জাতির জনকের ভাগ্নে? আমার মতে, এগুলো তার পরিচয় হতে পারে। কিন্তু ততোটুকু অবিন্যাস্ত যতবড় এই বিরল ব্যক্তিত্ব। এর কারণ আমাদের অদূরদর্শীতা কিংবা নিরাসক্ত ইতিহাসকে অনুপস্থিত করে রাখা। রাজনীতিতে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে নিয়ে কখনো কখনো চিন্ময়বোধন হচ্ছে, তবে আমি মনে করি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ প্রশ্নে ভূত-ভবিষ্যতের রাজনীতি কোন প্রসঙ্গ নয়। স্বাধীনোত্তর বাংলাদেশে তাকে নিয়ে আলোচনার আরো বৃহৎ পরিধি রয়েছে; যা সময়োচিত এবং কাঙ্খিত বাংলাদেশ বিনির্মানে রূপরেখা এঁকে দিয়েছেন। ফলত আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে জানাশোনা খুব বেশি প্রাসাঙ্গিক। অন্তত রাজনৈতিব বুহ্য বন্ধনে নয়, কারণ রাজনীতিতে এমন কোন মানদন্ড নেই যে; কেউ সফল না ব্যর্থ তা মেপে ঘোষণা করে দেবে।

আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ স্বাধীনোত্তর বাংলাদেশে দুটি স্পর্শকাতর স্থানে বীরোচিত দৃষ্টান্তের নাম। প্রথমত ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি করার জন্য। যে অধ্যায় কখনো অন্তঃনিরীক্ষায় আসেনি বা পর্যালোচনাও হয়নি তেমন। অখেয়ালে অদেখা থেকে হারিয়ে যাবার মত হয়েছে অবস্থা। দ্বিতীয়ত হল সেটি ১৫ আগস্টে মর্মভেদী রাতে তার ভূমিকা। অখন্ড বাংলাদেশ রক্ষা করতে পার্বত্য শান্তিচুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তার আগে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, স্বাধীন দেশে কেন দরকার হয়েছিল আবার কোন চুক্তি?

পার্বত্য চট্টগ্রামতো বাংলাদেশের আয়তনের বাইরে নয়। তবে কি এমন বিষফোঁড়া হয়ে উঠছিল ঐ অঞ্চল? এই উত্তরগুলো খুঁজতে গেলেই বেড়িয়ে আসবে একজন শান্তির সন্ধানী অগ্রপথিক। শান্তিচুক্তি ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পার্বত্য অঞ্চলের বিদ্রোহীদের সাথে সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল ৬’শ বছর আগে। পার্বত্য অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারকারী উপজাতিরা বন্তুত বাঙাল দেশের বংশদ্ভুত নয়। প্রাচীন ইতিহাস স্বাক্ষী দেয়, কুকি আদিবাসীরা ছিল এই জনপদের প্রাচীন গোষ্ঠী। চাকমাদের গোড়াপত্তন ঘটে পনেরো শতকে। চাকমা রাজা মোআন তসনি ১৪১৮ খ্রিঃ ব্রহ্মদেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে আশ্রয় নেয় রামু ও টেকনাফে এবং তিনি তাড়িয়ে দেন কুকিদের। মোআন তাসনির পাশাপাশি এসে বসতি স্থাপন করে চাকমা, মারমা (মগ)রা। সতেরো শতকে অর্থাৎ ১৬৬৬ সালে ভয়াবহ আওরঙ্গজেবের শাসনামলে মুঘলরা পার্বত্য চট্টগ্রাম অধিকার করে এবং শাসন ক্ষমতা দেয় ‘বাঙাল’ শাসকদের হাতে। বাঙালদের হাতে শাসনক্ষমতা মেনে নিতে পারে না আদিবাসিরা। এতে তারা মুঘলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। সম্ভবক ঐটিই ছিল পার্বত্য অঞ্চলের প্রথম বিদ্রোহ। ১৭৬০ সালে মীর কাশেম খাঁর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসন নেয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। এটিও মেনে নিতে পারে না চাকমারা। ইংরেজদের বিরুদ্ধে শুরু হয় গেরিলা যুদ্ধ। চলে ২৫ বছর, ১৭৮৫ সাল পর্যন্ত। ১৮৬০ সালে চট্টগ্রাম জেলা থেকে পৃথক জেলা ঘোষণা করা হয় পার্বত্য চট্টগ্রামকে। ইংরেজরা এই বিভক্তি দিয়েই মূলত সমতল বাঙালী এবং পর্বতের আদিবাসীদের মধ্যে তুষের আগুনে হাওয়া দিয়েছিল।

আর ১৯০০ সালে কোম্পানীর স্বার্থে উপজাতিদের নিয়ে প্রণয়ন করা হয় বিধিমালা; যেটি পার্বত্য চট্টগ্রাম ম্যানুয়েল নামে অভিহিত। এর মাধ্যমে চট্টগ্রামকে অশাসিত বা অনিয়ন্ত্রিত এলাকা বলে ঘোষণা করা হয়। কার্যত এর মাধ্যমে বাঙাল ভূঁখন্ড থেকে এ অংশটি আলাদা করে ফেলা হয়। পাওয়ার অফ এটর্নি প্রদান করা হয় আদিবাসীদের হাতে। যার বদৌলতে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টের পর রাঙামাটি এবং বিভিন্ন শহরে উপজাতিরা উত্তোলন করে রাখে ভারতীয় পতাকা ও ব্রাহ্ম পতাকা। মজার কথা হল মুঘল বা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী শাসন যেমন উপজাতিরা মানতে পারেনি। তেমনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেরও ঘোর বিরোধী ছিল আদিবাসী বয়স্করা।

তারা তখন গোর পাকিস্তান সমর্থক। নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর বাংলাধেশ স্বাধীন হলে উপজাতিরা সরকারের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা অঞ্চল অর্থাৎ স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল দাবী করে বসে। যে সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া হত গোটা বাঙালির কাছে হঠকারিতার। ১৯৭২ সালের ২৪ এপ্রিল আদিবাসী নেতা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ৪ দফা দাবী নিয়ে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু দেখলেন তাদের দাবী কোনটিই মেনে নেয়ার মত নয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে যান লারমারা। একে একে গঠন করতে শুরু করেন সশস্ত্র বাহিনী। ১৯৭৩ সালে মানবেন্দ্র লারমা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং শান্তি বাহিনীতে সদস্য সংগ্রহ চলে। চলে অস্ত্র প্রশিক্ষণ। নতুন করে বিদ্রোহের ডাক দিতে প্রস্তুত তারা।

১৯৭৪ সালে লারমার শান্তিবাহিনী ভারতের কাছে সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারকে ভারত জানিয়ে দেয়। এতে বেকায়দায় পরে যান লারমা ও তার বাহিনী। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সামরিক ক্যু’রা যে নারকীয় উল্লাসে মেতে ওঠে তাতে আরো শক্তি পায় পার্বত্যবাহিনী। মানবেন্দ্র লারমা আনুষ্ঠানিকভাবেই বিদ্রোহের ঘোষণা দেয়। পার্বত্য অঞ্চল বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে শুরু করে লড়াই। শান্তিবাহিনী প্রথম হামলা চালায় ১৯৭৬ সালে পুলিশের উপর। যদিও এই বিদ্রোহে সাহায্যের জন্য ভারত এগিয়ে আসে। পুরোপুরি অশান্ত হয়ে ওঠে পার্বত্য অঞ্চল। পার্বত্য বিদ্রোহ নিরসন করতে সামরিক শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একটি বিশেষ কৌশল অবলম্বন করেন।

তিনি ১৯৭৯ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর সমতলের বাঙালীর পুর্নবাসন করেন। এটি ছিল তার আত্মঘাতি সিদ্ধান্তর একটি।

কারন, বাঙালী পাহাড়িতে তখন লড়াইটা আরো ভয়ানকভাবে বৃদ্ধি পায়। দেশে ও দেশের বাইরে ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে পার্বত্য চট্টগ্রাম। তবে ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়া হত্যার মধ্য দিয়ে আরো এলোমেলো হয়ে পরে পরিস্থিতি। উত্তপ্ত চট্টগ্রাম শান্ত হয় না। ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে হানাহানি, খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি। দেখা গেছে স্বাধীন বাংলাদেশে শান্তিবাহিনী ৩৪ বার যুদ্ধে বিরতি ঘোষণা করেছে আর শান্তি চুক্তির আলোচনা কত হয়েছে আর কতবার ভেস্তে গেছে তার হিসেব নেই। তবে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য অঞ্চলের প্রতি দৃষ্টি আরোপ করেন। আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে দেয়া হয় তার দায়িত্ব।

১৪ মে থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ৮ মাসের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা তাকে সফলতা এনে দেয়। এক্ষেত্রে একটি বিষয় উল্লেখ করা জরুরী যে, ১৯৭২ সালের ২৪ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর কাছে যখন শন্তু লারমা ৪ দফা দাবী নিয়ে গিয়েছিলেন তখন বঙ্গবন্ধু তাকে বলেছিলেন, ‘যা বাঙালি হইয়া যা’।

জাতির জনক এর মাধ্যমে কি বোঝাতে চেয়েছিলেন তা স্পষ্ট করেননি। তবে সংসদে এক অধিবেশনে মানবেন্দ্র লারমা ক্রুদ্ধ স্বরেই বলেছিলেন, আমি একজন চাকমা। একজন চাকমা কখনো ম্রোং হতে পারে না এবং চাকমা কখনো বাঙালি হতে পারে না। আমি চাকমা। আমি বাঙালি নই। আমি বাংলাদেশের নাগরিক, বাংলাদেশী।

আপনারাও বাংলাদেশী, তবে জাত হিসেবে আপনারা বাঙালি। আর উপজাতিরা কখনো বাঙালী হতে পারে না। স্ব-ঘোষিত এই অবাঙালিদের স্বাধীনতার পরে বেশ কয়েক রাষ্ট্রপ্রধান, উচুমাপের নেতা বাঙালী করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। তারা ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ সফল হয়েছিলেন। যথাযথ উদ্যোগ এবং ফলপ্রসূ আলোচনা ৬শ’ বছর ধরে চলমান সংঘাত নিরসন করে এক টেবিলে এনে বসায় বিদ্রোহীদের। এটা কি জাতি তথা বিশ^ শান্তির জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ? আমিতো মনে করি মুনাফালোভী প্রতিষ্ঠান গড়ে যারা নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন, তাদের শান্তি প্রতিষ্ঠার চেয়ে অনেকাংশে গুরুত্বপূর্ণ এবং যথার্থ শান্তি প্রতিষ্ঠার মাইলফলক ছিল এটি।

আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ প্রসঙ্গে আরো যে বিষয়টি আলোকপাত করা অত্যান্ত জরুরী তা হল, ১৫ আগস্টের ভয়ঙ্কর রাতে তার ভূমিকা। বিষয়টি অনেকেরই অজানা। আর যারা জানেন, তারা হয়তো তলিয়ে দেখতে ইচ্ছাপোষণ করেন না।

জাতির জীবনে সবচেয়ে ভয়ানক ও মর্মস্পর্শী রাত ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাত। ঐ রাতে দেশ ও জাতির নৃশংস শত্রুরা মেতে ওঠে নারকীয় হত্যাকান্ডে। চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নেয় জাতির জনককে হত্যা করার। বিশ্বখ্যাত সাংবাদিক অ্যান্থনী মাসকারেনহাস-এর ‘বাংলাদেশ এ লিগ্যাসি অব ব্লাড’ বইতে পাওয়া যায় তার অনুপুঙ্খ বর্ননা। ঐ রাতে কর্নেল ফারুখ নৃশংস হামলার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। ৭৫ থেকে ১৫০ জন সৈন্যর বড় বড় তিনটি দল প্রস্তুত করা হয়।

শুধু জাতির জনক নয়, আবদুর রব সেরনিয়াবাত এবং শেক ফজলুল হক মনির বাড়িতেও হত্যাযজ্ঞ চালানো দায়িত্ব দেয়া হয় তিনটি সৈন্যদলের উপর। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি মেজর ডালিমকে আক্রমনের জন্য বলা হলেও তিনি তাতে রাজি না হয়ে বেছে নেয় আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়িতে হত্যাযজ্ঞ চালানোর দায়িত্ব। ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে ডালিমের দল কেবিনেট মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত এর বাড়িতে পৌঁছে একই সময়ে জাতির জনক এবং শেখ ফজলুল হক মনির বাসভবনে আক্রমণ চলে। ঐ বাড়িতে মাত্র একজন পুলিশ পাহারায় ছিল।

তাকে ভীত করতে ডালিম বাহিনী গুলি চালায়। পুলিশ কোন প্রতিবন্ধকতাই সৃষ্টি করতে পারেনি। এখানে ফ্লাসব্যাকে বলে নেয়া উচিত, জাতির জনকের বাসভবনে কি হচ্ছিল তখন? বঙ্গবন্ধুর বাড়ির প্রহরায় থাকা পুলিশ সদস্যরা গেটের বাইরে কালো উর্দি পরা ভারী অস্ত্রে সজ্জিত সৈন্য দেখে ভরকে যায় এবং কোন বাদানুবাদ ছাড়াই আত্মসমর্পণ করে। গেটে প্রহরীরা সশস্ত্র বাহিনী দেখে ভয়ে গেট খুলে দিল।

ফলে হন্তারকদের কোন বাঁধার মুখে পরতে হয় না। অথচ কর্তব্যানুসারে বঙ্গবন্ধু বা আবদুর রব সেরনিয়াবাত এর বাসভবনে প্রহরায় থাকা পুলিশ সদস্যদের দ্বারা প্রতিরোধের সম্মুখীন হবে হন্তারকরা, এটা হবার কাথা ছিল। এদিকে গুলির শব্দ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায় ৩০ বছরের যুবক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর। সে জানালা দিয়ে উর্দি পরা সৈনিক দেখে নিজের কাছে রাখা স্টেনগানটি নিয়ে দোতলায় পিতা আবদুর রব সেরনিয়াবাত এর কক্ষে ছুটে আসেন।

পিতাকে জাগিয়ে পরিস্থিতি বলেন। আবদুর রব সেরনিয়াবাত তখন শেখ মুজিবকে টেলিফোন করে। অনেক পরে লাইন পাওয়া যায়। আবদুর রব সেরনিয়াবাত বঙ্গবন্ধুকে জানায়, তার বাড়ি দুস্কৃতিকারী কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছে। টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে কেউ খুব উচ্চস্বরে কথা বলছিল। রব সেরনিয়াবাত নিশ্চিত হন জাতির জনকের বাড়িও আক্রান্ত হয়েছে। ফলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন তিনি। তবে খুব দ্রুত উঠে জানালার দিকে ছুটে যান যুবক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। উর্দি পরা হন্তারক সৈন্যদের ঠেকাতে জানালা থেকে সৈন্যদের লক্ষ্য করে স্টেনগানটি চালিয়ে দেন।

১৫ আগস্ট আক্রান্ত হওয়া তিনটি বাড়ির মধ্যে এই বাড়িতেই একমাত্র প্রতিরোধের মুখে পরে হন্তারক দল। আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর এই প্রতিরোধ জাতিকে গভীর সংকটে ফেলতে উন্মাদ হয়ে যাওয়া সৈন্য রুখতে নিতান্ত দুর্বল।

কিন্তু সার্বিক বিবেচনা আর একা তিনি যে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছেন সেটাকে কি প্রকৃতপক্ষে ছোট ভাবার অবকাশ আছে? মোটেও না। উল্টো আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর এই প্রচেষ্টা বিরোচিত এবং দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। ঐ রাতে তিনি ততক্ষণ স্টেনগানটি সৈন্যদের দিকে তাক করে গুলি ছুড়তেই থাকেন, যতক্ষণ গুলির ম্যাগজিন শেষ না হয়। ম্যাগজিন শেষ হলে দ্রুত উপর তলায় ছুটে যান, গুলিভর্তি ট্রাংকের দিকে। দ্রুত মুহূর্তে ট্রাংকের চাবি খুঁজে না পেয়ে ট্রাংক ভাংতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। এ সময়ে বাসভবনে উঠে আসে ডালিমের হন্তারক বাহিনী। আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ শুনতে পায় গুলির আওয়াজ এবং উপর তলায় এগিয়ে আসা সৈনিকের বুটের আওয়াজ।

তিনি মেঝেতে স্টেনগান রেখে বসে থাকেন। সৈন্যদের অপেক্ষা করতে থাকেন। কারন এবার তার মৃত্যুর পালা। সৌভাগ্যক্রমে উপরে কেউ আসে না। তবে টানা বিশ মিনিট ধরে থেমে থেমে গুলির শব্দ শুনতে পায় আর তীব্র চিৎকার। সব নিস্তব্দ হয়ে গেলে হাসানাত নিচে নেমে দেখে গোটা পরিবার তার আহত এবং লাশের স্তুপ হয়ে আছে।

যদিও পরে ভারতে গিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থা সামাল দিয়েছেন কিন্তু ১৫ আগস্টের রাতে একমাত্র প্রতিরোধকারী বীরকে কি কেউ আমরা সম্মান জানিয়েছি?

শুরুতেই বলেছিলাম, নিরাসক্ত ইতিহাসকে আমরা না দেখতে দেখতে হারিয়েই ফেলছি প্রায়। তবে বাংলাদেশ অর্থাৎ স্বাধীনোত্তর বাংলায় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ রাজনীতির অভিভাবকই নয়; দেশ এবং জাতির অহংকার। তাকে নিয়ে বিশ্লেষণ, নেতৃত্বের দিকপাত করা সময়ের সাথে সাথে প্রবলভাবে আকাঙ্খা বাড়াচ্ছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে মন্ত্রীসহ দলীয় এমপি ও নেতাকর্মীদের সতর্ক করলো আ.লীগ

banglarmukh official

পিরোজপুরে প্রাইভেটকার-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে শিক্ষার্থী নিহত

banglarmukh official

বাকেরগঞ্জে মাদ্রাসা ছাত্রকে বলাৎকারের ঘটনা!শালিশ করেই ঘটনাটি ধামাচাপার চেষ্টা

banglarmukh official

এপ্রিলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহের সঙ্গে হতে পারে ঘূর্ণিঝড়- আবহাওয়া অফিস

banglarmukh official

এবার এইচএসসি পরীক্ষা শুরু ৩০ জুন, সময় সূচি ঘোষণা

banglarmukh official

এসএসসি’ পরীক্ষায় অর্ধেক লিখিত,বাকি অর্ধেক হাতে-কলমে মূল্যায়ন

banglarmukh official