উজিরপুর প্রতিনিধি:
বরিশালের উজিরপুরে গুঠিয়া দোসতিনা আহমদিয়া ফাজিল মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র মাহফুজ হাওলাদার (১৪) হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি গ্রেফতার শাস্তির দাবিতে হেফাজতে বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে। মামলার দায়েরের ৬দিন অতিবাহিত হলেও আসামি গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মাদ্রাসা অধ্যক্ষ ও পরিচালনা কমিটির রহস্যজনক ভূমিকায় এলাকাবাসীর অসন্তোষ।
উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের তেরদ্রন গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে মাহফুজকে গত ২৭ আগষ্ট রাতে মাদ্রাসা শিক্ষকের ল্যাপটপ চুরি করতে প্রস্তাব দেয় দোসতিনা এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে ভুলু(৩০)ও তার সহযোগীরা। এতে রাজি না হওয়ায় ওই ছাত্রকে মাদ্রাসা পার্শ্ববর্তী বাগানে নিয়ে নির্যাতন করে ও মৃত ভেবে কাঁদায় পুঁতে রাখে। পরে শিক্ষক সহপাঠিরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বানাড়িপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় পরে স্থানীয়রা তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ।
এঘটনার প্রতিবাদে হামলাকারীদের গ্রেফতার পূর্ব বিচারের দাবিতে গত ২ সেপ্টেম্বর (সোমবার) হেফজ বিভাগের ছাত্ররা মাদ্রাসার অভ্যন্তরে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে।
উল্লেখ্য, এঘটনায় মাহফুজের পিতা সাইদুর রহমান বাদী হয়ে ২৮আগষ্ট ১জনের নাম উল্লেখ ৫/৬ জন অজ্ঞাত নামা আসামি করে উজিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। ভুক্তভোগী সুত্রে জানাগেছে গত ২৭আগষ্ট মঙ্গলবার রাতে মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক খালিদুর রহমানের নির্দেশে এশার নামাজের আযান দেয়ার উদ্দেশ্যে আবাসিক হল থেকে বের হয়ে মসজিদে য়ায়। আযান শেষে হলরুমে ফেরার পথে মাদ্রাসার পেছনের গেটের কাছে আসলে গেট টপকে লাফিয়ে পড়ে ভুলূ পথরোধ করে মাহফুজের। সামনে দাঁড়িয়ে জানতে চায় হুজুর (হেফজ বিভাগের শিক্ষক খালিদুর রহমান রুমে আছে কিনা। এবং তার (শিক্ষকের) ল্যাপটপটি গোপনে আনতে বলে। এনে দিলে টাকা দিবে বলে ভুলু প্রস্তাব দেয় মাহফুজকে। তার কথায় রাজী না হয়ে বিষয়টি হুজুর (শিক্ষক) কে বলে দেওয়ার কথা বললে ভুলু মাহফুজের গলা মুখ চেপে ধরে ও আগে থেকে অন্ধকারে ওত পেতে থাকা আরো ৫/৬ জন সহোযোগীদের সহায়তায় মাহফুজকে হাত পা বেঁধে পার্শ্ববর্তী বাগানে নিয়ে নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে ছাত্র মাহফুজ জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তারা তাকে মৃত ভেবে কাদা মাটিতে পুতে রেখে চলে যায়। তবে মুখ চোখ চেপে ধরায় বাকি ৫/৬জনের চেহারা দেখিনি বলে জানায় মাহফুজ।
এব্যাপারে মাহফুজের শিক্ষক খালিদুর রহমান জানান, ওই দিন এশার নামাজের আযান দেয়ার জন্য ছাত্র মাহফুজ ও আশিককে নির্দেশ দেই আযান শেষে আশিক একা ফিরে আসলে তার কাছে মাহফুজ কোথায় জানতে চাইলে বলে ওযু করার জন্য ঘাটলায় আছে। কিন্তু নামাজ শেষে মাহফুজ না ফিরলে ডাকাডাকি করে না পেয়ে খুঁজতে যাই। পরে মাদ্রাসার পেছনের গেটে জুতা টুপি পরে থাকতে দেখে গেট খুলে বাইরে বেরিয়ে ডাক দিলে গোঙানির আওয়াজ পেয়ে বাগানে কাদায় পোতা অবস্থায় তাকে দেখতে পাই। আমাদের ডাকচিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়।
এঘটনার একদিন পরে ছাত্রের বাবা সাইদুর রহমান বাদী হয়ে উজিরপুর থানায় মামলা দায়ের করে কিন্তু মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে কোন আইনি পদক্ষেপ না নেয়ায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি মাদ্রাসা সামনে জড়ো হয়ে ক্ষোভে প্রকাশ করে এলাকাবাসী।
একাধিক এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন ইতিমধ্যে একাধিক চুরির ঘটনা ঘটলেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির যোগসাজশে মাদ্রাসার জমি দখল করাকে কেন্দ্র করে জটিলতার সৃষ্টি হলে প্রকাশ পায় যে মাদ্রাসার রেজূলেশন রেজিষ্টার বই চুরির ঘটনা।
এছাড়া বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের কথা তুলে ধরে এলাকাবাসী এবং ওই সকল অনিয়মের জন্য বর্তমান পরিচালনা কমিটি ও মাদ্রাসা অধ্যক্ষকে দ্বায়ী করেন এলাকাবাসী। অবিলম্বে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি বাতিল করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তারা।
স্থানীয় মকবুল হোসেন,নজির আহমেদ, নান্নু , বাচ্চু খান ,সবুজ খান সহ অনেকে জানান ছাত্র নির্যাতন করে হত্যা চেষ্টার বিষয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ঘটনার পরে দায়সারা ভাবে কাজ করছে । আমরা এলাকাবাসী প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে গেলে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে তাতে বাধা দেয়। রাজনৈতিক নেতাদের দোহাই দিয়ে মাদ্রাসা থেকে সরিয়ে দেয়।
এবিষয়ে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মাওলানা সিদ্দিকুল্লা একাধিক চুরির ঘটনায় থানায় লিখিত ডায়েরি করা হয়েছে বলে জানান, মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্র হত্যা চেষ্টার ঘটনায় মাদ্রাসার কতৃপক্ষ কোন মামলা করার প্রয়োজনীয়তা নেই বলেন ,ছাত্রের বাবা মামলা করেছে তাতেই হবে,সব কিছু তিনি নজরদারি করেছেন এবং এমপি(সংসদ সদস্য) এর কাছে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলে জানান।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ সগীর মিয়া বলেন, বাদী ৩২৩,৩০৭,১৪৩ ধারায় মামলা দায়ের করেছে আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা ও তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।