বাংলার মুখ ডেস্ক ::
যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ক্যাসিনো সম্রাট খ্যাত ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে র্যাবের পাহারায় তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সম্রাটকে আদালতে আনার পর থেকে কারাগারে নেয়ার সময় পর্যন্ত তার সমর্থকদের ভিড় নেই। তার সমর্থকদের বাইরে কিছু উৎসুক জনতা সম্রাটকে দেখার জন্য আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্রিজন ভ্যানে অন্যান্য আসামির সঙ্গে তাকে কারাগারে নেয়া হয়। এ সময় সম্রাটকে প্রিজন ভ্যানে দেখে অনেকে বলছিলেন, ‘ওই যে সম্রাট ভাই, দাঁড়িয়ে আছেন।’ এ সময় প্রিজন ভ্যানের ভেতর থেকে কয়েকজন আসামিকে বলতে শোনা যায়, ‘সম্রাট ভাই, আমাদের সঙ্গে আছেন। এই যে আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে অস্ত্র ও মাদক মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড শেষে সম্রাটকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে (সিএমএম) হাজির করা হয়। তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। তার ১০ মিনিট পর তার আইনজীবীরা জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
অন্যদিকে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহ তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বিকেল ৫টার দিকে তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেয়া হয়। তার আইনজীবীরা চিকিৎসা চেয়ে আবেদন করলে কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়ার জন্য জেল সুপারকে নির্দেশ দেন আদালত।
গত ১৫ অক্টোবর অস্ত্র মামলায় পাঁচদিন ও মাদক মামলায় পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত। ওইদিন তার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছিলেন তার সমর্থকরা। ঢাকার সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণের বাইরে তার সমর্থকদের ভিড় দেখা যায়। পুলিশ তাদের বের করে দিয়ে আদালতের প্রধান গেট আটকে দেয়। তারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রায়সাহেব বাজার মোড় পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিয়ে সম্রাটের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
গত ৭ অক্টোবর রমনা থানা পুলিশ অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো-পূর্বক ১০ দিন করে মোট ২০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। পরে ঢাকা মহানগর হাকিম ইয়াসমিন আরা আসামি সম্রাটের উপস্থিতিতে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন ও রিমান্ড শুনানির জন্য ৯ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। ওইদিন শারীরিক অসুস্থতার কারণে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি থাকায় সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হচ্ছে না বলে আদালতকে চিঠি দেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির চৌধুরী। সম্রাট অসুস্থ থাকায় আদালতে উপস্থিত না করায় ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনসারী এ বিষয় শুনানির জন্য ১৫ অক্টোবর দিন ধার্য করেছিলেন।
৮ অক্টোবর সকালে বুকে ব্যথা অনুভব করায় সম্রাটকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তাকে প্রথমে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
১২ অক্টোবর বেলা ১১টা ২০ মিনিটে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয় সম্রাটকে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. মহসিন আহমেদ বলেন, সম্রাটের জন্য গঠিত সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সবাই তাকে দেখেছেন। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। বোর্ডের সদস্যরা মনে করেন, তার হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন নেই। তাই তাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়।
র্যাব-১ বাদী হয়ে রমনা মডেল থানায় সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা দুটি দায়ের করে। দুই মামলার বাদী র্যাব-১ এর ডিএডি আব্দুল খালেক। এর মধ্যে মাদক মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানকেও আসামি করা হয়েছে।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর সম্রাটের নাম আসার পর থেকেই তাকে নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। অভিযান শুরুর পর হাইপ্রোফাইল কয়েকজন গ্রেফতার হলেও খোঁজ মিলছিল না সম্রাটের। এসবের মধ্যে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়। এরপর ৫ অক্টোবর রাত থেকেই তার গ্রেফতার হওয়ার খবর এলেও পরদিন সকালে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামে আত্মগোপনে থাকা সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়। তার সঙ্গে আরমানকেও আটক করা হয়। পরে ঢাকায় এনে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদও করে র্যাব।
৬ অক্টোবর দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে র্যাবের একটি দল কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে তালা ভেঙে সম্রাটের কার্যালয়ে ঢুকে অভিযান শুরু করে। নিজ কার্যালয়ে পশুর চামড়া রাখার দায়ে তার ছয় মাসের জেল দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।
অভিযান শেষে ইসমাইল হোসেন সম্রাটকে র্যাবের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন যুবলীগ সমর্থকরা। কার্যালয় থেকে সম্রাট বের হতেই প্রায় ২-৩শ’ যুবলীগ সমর্থক ‘জয় বাংলা’, ‘সম্রাট ভাই তোমার ভয় নেই, আমরা আছি তোমার সাথে’ স্লোগান দেন। সম্রাটের মুক্তির দাবির পোস্টারে ছেয়ে যায় সিএমএম আদালত চত্বর।