28 C
Dhaka
এপ্রিল ১৩, ২০২৪
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ইসলাম ধর্ম

ওয়াজ করে কি পারিশ্রমিক নেওয়া যাবে

আলেমরা স্বজাতির ধর্মীয় সেবাদানে সর্বক্ষণ নিয়োজিত থাকেন। এ জন্য তাঁদের বেতন-ভাতা বা হাদিয়ার ব্যবস্থা করা জাতির প্রত্যেক সদস্যেরই দায়িত্ব। কিন্তু বিশেষ কোনো ওয়াজের জন্য বিশেষ পরিমাণ হাদিয়া দামাদামি করে নির্ধারণ করা এবং গ্রহণ করা জায়েজ নয়। তবে যাঁরা শিক্ষাদান ও তাবলিগের কাজে নিয়োজিত থাকার কারণে অন্য কোনোভাবে উপার্জন করার সুযোগ পান না তাঁরা বেতন-ভাতা গ্রহণ করতে পারবেন। সেটা জায়েজ। তা ছাড়া ‘চাকরিভিত্তিক’ ওয়াজ করে ‘মাসভিত্তিক’ বেতন নেওয়াও জায়েজ। (আত-তাবলিগ : খণ্ড ১৪, পৃষ্ঠা ১১, খাইরুল ইরশাদ : পৃষ্ঠা ১৪)

কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, ইমামতি করে বিনিময় নেওয়া জায়েজ হলে ওয়াজ করে বিনিময় গ্রহণ করা কি জায়েজ হবে? এর জবাব হলো, ‘ইস্তিজার আলাত তাআত’ তথা ইবাদতমূলক কাজ করে বিনিময় গ্রহণ করা নাজায়েজ। তবে ইমামতিটা এই বিধানের বহির্ভূত। কেউ কেউ ওয়াজ-নসিহতকেও এই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয় বলেছেন। আবার কারো মতে, ওয়াজ-নসিহত করে বিনিময় গ্রহণ করাও নাজায়েজের অন্তর্ভুক্ত।

উভয়ের মধ্যে সমন্বয় করা যেতে পারে এভাবে—কেউ যদি ইমামতির মতো ওয়াজ-নসিহতকেও একটা চাকরি বানিয়ে নেন বা পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন, ওই ব্যক্তির জন্য বিনিময় গ্রহণ করা জায়েজ। আর যদি নিয়মিত চাকরিভিত্তিক ওয়াজ নয়, বরং কখনো কখনো ওয়াজ করেন এবং সেটার জন্য দামাদামি করে বিনিময় ঠিক করেন, তাহলে সেটা নাজায়েজ। যেমন—কেউ নির্দিষ্ট ইমাম নন; কিন্তু উপস্থিত ক্ষেত্রে তাঁকে একটা নামাজের ইমামতি করতে বলা হলো আর তিনি বিনিময় চেয়ে বসলেন (সেটা তো নাজায়েজ)। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, কিতাবুল ইজারাহ : ৩৮৯)

ওয়াজ করে হাদিয়া বা পারিশ্রমিক গ্রহণের কুপ্রভাব হচ্ছে, ওই ওয়াজে কোনো প্রভাব পড়ে না। আরেকটা ক্ষতি হচ্ছে, ওয়ায়েজরা হাদিয়াবঞ্চিত হওয়ার আতঙ্কে সত্য প্রকাশ থেকে নিরস্ত হয়ে যান।

কেউ স্বচ্ছন্দে দিলে শর্ত সাপেক্ষে জায়েজ

তবে হ্যাঁ, কেউ যদি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্যই ওয়াজ করেন ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে, আর লোকেরা বিভিন্নভাবে তাঁকে কিছু দান করে; কিন্তু এসবের প্রতি ওয়াজকারীর অন্তরে স্পষ্ট লোভ-লালসা নেই, তাতে কোনো অসুবিধা নেই। সেটা জায়েজ। (মানুষ যে কিছু হাদিয়া দিয়ে থাকে সেটার প্রতি) মনের ভেতর হালকা খেয়াল থাকলেও কোনো অসুবিধা নেই।

তবে ওয়াজ একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হচ্ছে কি না, তা প্রমাণে একটি পরীক্ষা রয়েছে। পরীক্ষাটি হলো, খেয়াল করা হবে যে ওই লোকটা ওয়াজ করার জন্য কোন ধরনের এলাকাকে প্রাধান্য দেন। তিনি কি সেসব এলাকাকে প্রাধান্য দেন, যেখানে হাদিয়া তুলনামূলক বেশি মেলে, নাকি সেসব স্থানকে প্রাধান্য দেন, যেখানে দ্বিন প্রচারের প্রচণ্ড প্রয়োজন? প্রথমোক্ত অবস্থায় মোটেও টাকার বিনিময়ে ওয়াজ করা জায়েজ হবে না, আর দ্বিতীয় অবস্থায় জায়েজ হবে। আর বৈধতার জন্য আমরা অন্তরের ভোগলিপ্সা না থাকার যে শর্তটি আরোপ করেছি, তার প্রমাণ নিম্নের বর্ণিত হাদিসটি—‘(দান-সদকার) যেসব সম্পদ তোমার কাছে আসবে চাওয়া ছাড়া এবং মনের স্পষ্ট লোভ ছাড়া, তা তুমি গ্রহণ করো। আর যদি লোভ থাকে, তাহলে সেসব নেওয়ার জন্য তোমার মনকে অধীন কোরো না।’

অন্তরের ঈষৎ খেয়াল এবং স্পষ্ট লিপ্সার মাঝে পার্থক্যটাও বুঝতে হবে। ধরুন, হৃদয়কোণে শুধু এটুকুই ধারণা আছে যে ‘কিছু জুটেও যেতে পারে’। পরে দেখা গেল যে তাকে কেউ দিল না। এতে তার মোটেও মনস্তাপ সৃষ্টি হলো না। এটাকেই বলে অন্তরের সামান্য ওয়াসওয়াসা বা ঈষৎ খেয়াল। আর যদি ভাগ্যে কোনো কিছু না জোটায় মনঃকষ্ট হয় এবং নিজের কাছে ব্যাপারটি বড্ড অস্বস্তিকর ঠেকে; যার ফলে বিড়বিড়িয়ে বলতে থাকে, ‘এদের তো দেখি কিছুই হাতে উঠল না’—তখন নিঃসন্দেহে সেটি মনের স্পষ্ট বাসনা ও লোভ বলে গণ্য হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

আজ দুর্গোৎসবের মহানবমী

banglarmukh official

ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় যেসব আমল করবেন

banglarmukh official

শবে কদরের রাতে করতে পারেন যেসব ইবাদত ও আমল

banglarmukh official

রমজানে গোপনভাবে দানসদকা

banglarmukh official

কোরআনের বর্ণনায় রোজা ও রমজান

banglarmukh official

ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ

banglarmukh official