30 C
Dhaka
এপ্রিল ২৯, ২০২৪
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জাতীয় রাজণীতি

শোভন-রাব্বানীর পাশে কেউ নেই

দায়িত্ব গ্রহণের পর ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে এমন খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। এর আগে নানা সময়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পার পেলেও এবার শেষ রক্ষা হচ্ছে না। তাদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ছাত্রলীগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন মনোভাবের ফলে অনেকটা একা হয়ে গেছেন ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

প্রধানমন্ত্রীর দেয়া দায়িত্বের কারণে আওয়ামী লীগের চার নেতার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেলেও কার্যত তাদের পাশে এখন কেউ নেই। ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেয়ার খবর শুনে শোভন-রাব্বানীর থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নেতাদের বড় একটি অংশ।

এ অবস্থায় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উদ্দেশে একটি চিঠি লিখেছেন। যা প্রধানমন্ত্রীকে পৌঁছে দিতে একজন জেষ্ঠ্য আওয়ামী লীগ নেতাকে দেন রাব্বানী। ওই চিঠিতে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখেন, ‘আপনি মুখ ফিরিয়ে নিলে যাবার কোনো জায়গা নেই’। যেখানে তিনি নিজেদের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পাশাপাশি তাদের বিষয়ে যেসব অভিযোগ এসেছে তার থেকে গুরুতর তিনটির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিস্তারিত লেখেন। এদিকে ছাত্রলীগের প্যাডে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে চিঠি লেখার সত্যতা স্বীকার করলেও তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছেছে কি না- সেই বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু জানাতে পারেননি গোলাম রাব্বানী।

গত বছরের ১১ ও ১২ মে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই ছাত্রলীগের দুই দিনব্যাপী ২৯তম জাতীয় সম্মেলন শেষে ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা সিন্ডিকেট ভেঙে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী কমিটি দিয়েছিলেন, তাই তাদের স্বাধীনভাবে কাজের পরিবেশ তৈরি হয়। কারণ শুরু থেকেই ‘নেত্রীর কমিটি’র দুই নেতার বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দরজা সবসময় খোলা ছিল। এর ফলে অতীতের ন্যায় আওয়ামী লীগের জাতীয় বা স্থানীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী কেউ চাইলেই ছাত্রলীগে সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ পাননি। কিন্তু শোভন-রাব্বানী এই ইতিবাচক দিকটির সদ্ব্যবহার না করে এটিকে নেতিবাচক বিষয়ে পরিণত করেন বলে অভিযোগ।

ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী কমিটি দেয়ায় শোভন-রাব্বানীর প্রতি আলাদা নজর ছিল আওয়ামী লীগের সব মহলের। তারা ছাত্রলীগকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর চাওয়া অনুযায়ী ‘নতুন ধারায়’ ফিরিয়ে আনবেন এমন প্রত্যাশা ছিল সংশ্লিষ্টদের একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন তারা। সংগঠনের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পহেলা বৈশাখের কনসার্টে অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে মাফ পেলেও এবার আর তা হয়নি। ইতোমধ্যে গণভবনে শোভন-রাব্বানীর প্রবেশের স্থায়ী পাস স্থগিত করা হয়েছে।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে ধরনা দিয়েও ইতিবাচক কোনো ইঙ্গিত পাচ্ছেন না তারা। ছাত্রলীগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের চার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে কয়েক দফায় সাক্ষাৎ করেন তারা। তবে সেখান থেকে তেমন কোনো আশার বাণী পাননি ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। এর বাইরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বস্থানীয় অন্তত ১০ নেতার কাছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গিয়েছেন বলে জানা গেছে। সেখানেও অনেকটা হতাশই হয়েছেন শোভন-রাব্বানী। ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশে সবার একটাই কথা, ‘প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত! এখানে কারও কিছু করার নেই।’

এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মমতাময়ী নেত্রী’ সম্বোধন করে একটি চিঠি লেখেন গোলাম রাব্বানী। যেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আপনি বিশ্বাস করে শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির যে পবিত্র পতাকা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, তার মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট ছিলাম। দায়িত্ব পালনের শুরু থেকেই চতুর্মুখী চাপ, সদ্য সাবেকদের অসহযোগিতা, নানা ষড়যন্ত্র-প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা আর আমাদের কিছু জ্ঞাত-অজ্ঞাত ভুল ইতিবাচক পরিবর্তনের পথকে কণ্টকাকীর্ণ করেছে। আমাদের দায়িত্বশীল আচরণের ব্যর্থতা ও কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতির বাইরেও দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, প্রিয় নেত্রী দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট তথা বলয় ভেঙে আপনি নিজে পছন্দ করে দায়িত্ব দিয়েছিলেন বলে আমরা একটি বিশেষ মহলের চক্ষুশূল। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে মিথ্যা, অপপ্রচার চালিয়ে, প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, সুকৌশলে আপনার এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কান ভারীর অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। নেত্রী, আপনার সন্তানরা এতোটা খারাপ না। আমরা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছি বারবার। অনেক অব্যক্ত কথা রয়েছে যা, আপনাকে কখনো বলার সুযোগ পাইনি। বিভিন্ন মাধ্যমে শ্রুত অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রকৃত সত্যটুকু উপস্থাপনের সুযোগ চাই’।

এরপর চিঠিতে তিনটি ধারাবাহিক অভিযোগের ব্যাখ্যা দেয়া হয়। অভিযোগ-১ উল্লেখ করে বলা হয়, ‘২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এর নতুন পার্টি অফিস আপনার আবেগের ঠিকানায় আমাদের ঠাঁই দিয়েছেন। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, আপনার আমানতকে স্বযত্নে রেখেছি। অফিস অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা করা নিয়ে যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দায়িত্বপ্রাপ্ত শাহজাহান ভাই চায়না ছাত্রলীগ এখানে থাকুক। লোক দিয়ে বাইরে থেকে ময়লা ফেলে বাথরুম ও দেয়াল অপরিচ্ছন্ন করে, সেগুলোর ছবি তুলে আপনাকে দেখানো হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত মিণ্টু ভাই, লোকমান ভাই এবং ক্লিনার জাবেদ ভাই এর কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত সত্য জানতে পারবেন।’

অভিযোগ-২ উল্লেখ করে চিঠিতে ২০ জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনে দেরি করে যাওয়া প্রসঙ্গে বলা হয়। সেখানে রাব্বানী লেখেন, ‘১৮ জুলাই আপনি দেশের বাইরে যাবার আগে অনুমতি নিয়ে ১৯ তারিখ আম্মুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আমি এবং সভাপতি মাদারীপুর গিয়েছিলাম। এইদিনই সারা রাত নির্ঘুম জার্নি আর বেশ কয়েকটি পথসভা (সর্বশেষ সকাল ৮টায় সাভারে) করে সকাল ৯টায় ফিরি। রেস্ট নিয়ে পূর্বনির্ধারিত ১২টার সম্মেলনে পৌঁছাতে আমাদের ৪০ মিনিট দেরি হয়। যা অনিচ্ছাকৃত এবং অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পূর্বেই অবগত। সকালে ঘুম থেকে দেরিতে উঠার বিষয়টিও অতিরঞ্জিত।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে তৃতীয় অভিযোগের ব্যাখ্যা তিনি লেখেন, ‘বিষয়টি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। উপাচার্য ম্যাম এর স্বামী ও ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে কাজের ডিলিংস করে মোটা অংকের কমিশন বাণিজ্য করেছে। যার প্রেক্ষিতে ঈদুল আজহার পূর্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছে। এ খবর জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শুরু হয় এবং এরই প্রেক্ষিতে উপাচার্য ম্যাম আমাদের স্মরণ করেন। আমরা দেখা করে আমাদের অজ্ঞাতসারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে টাকা দেয়ার প্রশ্ন তোলায় তিনি বিব্রতবোধ করেন। নেত্রী, উক্ত পরিস্থিতিতে আমরা কিছু কথা বলি যা সমীচীন হয়নি। এজন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী’।

তিনটি অভিযোগের ব্যাখ্যার পর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখেন, ‘সবকিছুর পরেও আমাদের জ্ঞাত-অজ্ঞাত ভুলগুলোর জন্য অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। আপনি বঙ্গবন্ধু কন্যা, মানবতার মা…। নিজ বদান্যতায় আমাদের ক্ষমা করে ভুলগুলো শুধরে আপনার আস্থার প্রতিদান দেয়ার সুযোগটুকু দিন। আপনি মুখ ফিরিয়ে নিলে যাবার কোনো জায়গা নেই’। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা চিঠিটি শেষ করেন ‘আপনার ¯স্নেহের রাব্বানী’ লিখে।

এদিকে এ অবস্থার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা চেষ্টা করছেন আমাদের নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে। আশা করি, নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে সব বিষয় খুলে বলতে পারলে তিনি আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে মন্ত্রীসহ দলীয় এমপি ও নেতাকর্মীদের সতর্ক করলো আ.লীগ

banglarmukh official

এপ্রিলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহের সঙ্গে হতে পারে ঘূর্ণিঝড়- আবহাওয়া অফিস

banglarmukh official

এবার এইচএসসি পরীক্ষা শুরু ৩০ জুন, সময় সূচি ঘোষণা

banglarmukh official

এসএসসি’ পরীক্ষায় অর্ধেক লিখিত,বাকি অর্ধেক হাতে-কলমে মূল্যায়ন

banglarmukh official

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস আজ

banglarmukh official

পাওনা টাকা ফেরত পেলো ইভ্যালির আরও ১০০ গ্রাহক

banglarmukh official