বাবার বিরুদ্ধে সংবাদ ছাপা হওয়ায় খবরে সংবাদপত্রের গাড়ি থেকে সব পত্রিকা গায়েব করে দিয়েছেন বরগুনা-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে ও তার সহযোগীরা।
মঙ্গলবার দুপরে বরগুনা-বাকেরগঞ্জ সড়কের বাইপাস এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই অভিযান চালিয়ে পত্রিকার ১০টি বান্ডিল উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে বাকি পত্রিকার বান্ডিলগুলো উদ্ধার করা যায়নি।
জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. সাহাব উদ্দীন সাবু বলেন, প্রতিদিন বরিশাল থেকে বরগুনায় পত্রিকা আসে। মঙ্গলবার সাজিদ পরিবহন (যশোর জ-০০৩৪ ) নামের যাত্রীবাহী বাসে বরগুনার সকল এজেন্ট ও হকারদের পত্রিকা আসছিল। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহাসড়কের বাইপাস এলাকায় পৌঁঁছালে গতিরোধ করে বাসে উঠে বরগুনা-১ আসনের বর্তমান এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথ। তার সঙ্গে বাসে উঠে মাদক ব্যবসায়ী রাসেল তালুকদার ওরফে টাক রাসেল, তার সহযোগী সাথিক রুবেল এবং অনিমেষসহ কয়েকজন। বাসে উঠে পত্রিকার সব বান্ডিল নামিয়ে নেয় তারা।
পত্রিকাবাহী গাড়ির চালক ফারুক হোসেন বলেন, বরিশাল থেকে রওনা দিয়ে মহাসড়কের বাইপাস এলাকায় পৌঁঁছালে বাস থামিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব পত্রিকার বান্ডিল নামিয়ে নেয় এমপিপুত্র সুনাম, টাক রাসেল ও তার সহযোগীরা। এতে বাধা দিলে আমাকে মারধর করে টাক রাসেল ও তার সহযোগীরা। ঘটনার পর বরগুনা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমাদের সব পত্রিকা গায়েব করে দিয়েছে তারা।
বরগুনা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, ঘটনাটি ন্যক্কারজনক। সোমবার দুপুরে বরগুনা প্রেস ক্লাবে আওয়ামী লীগ মনোনীত দুই প্রার্থীর একজন মো. জাহাঙ্গীর কবিরকে সমর্থন দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ, কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। দেশের সকল পত্রিকায় এ খবর ছাপা হয়। সংবাদটি আওয়ামী লীগ মনোনীত অপর প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর বিরুদ্ধে যাওয়ায় সকল পত্রিকা গায়েবের ঘটায় এমপিপুত্র ও তার সহযোগীরা। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই।
জেলা পত্রিকা এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বরিশাল এম রহমান নিউজ এজেন্সির মালিক মো. হারুন অর রশীদ বলেন, আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় সংবাদপত্র ছিনতাইয়ের কথা এই প্রথম শুনলাম। সংবাদপত্রে আগুন দেয়ার কথা শুনেছি, কিন্তু ছিনতাইয়ের কথা শুনিনি। ঘটনাটি দুঃখজনক। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।
এ বিষয়ে বরগুনা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মো. সালেহ বলেন, সংবাদপত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা দুঃখজনক। যারা এটি ঘটিয়েছে তারা যে দলের বা গ্রুপের হোক; তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়া হোক।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথ বলেন, আমি বা আমার লোকজন এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এটি মিথ্যা অপপ্রচার।
বরগুনা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন বলেন, এ ঘটনার পরপরই স্থানীয় সাংবাদিকসহ পত্রিকার হকার-এজেন্টদের খবর দেয়া হয়। দুপুর ২টার দিকে সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের ফুলতলা এলাকা থেকে ছিনতাই হওয়া পত্রিকার কয়েক বান্ডিল উদ্ধার করা হয়। বাকিগুলো উদ্ধার করা যায়নি। এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।