খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মী ও গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনীর সদস্য ফাতেমা বেগকে (৫০) গণধর্ষণের পর গলাটিপে হত্যা করার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) নামের এক আসামি।
শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) বিকালে খাগড়াাছড়ির সিনিয়র জুডিশয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: মোরশেদুল আলমের আদালতে তিনি ধর্ষণ ও হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বৃহস্পতিবার রাতে জেলার মাটিরাঙ্গা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ শুক্রবার নজরুল ইসলাম প্রকাশ নাজিম (২৮) নামে আরেক আসামিকে গ্রেফতার করেছে।
গত ২৪ ডিসেম্বর রামগড়ের মাহবুবনগর এলাকা থেকে ফাতেমা বেগমের (৫০) অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি স্বামী পরিত্যক্তা ও দুই সন্তানের জননী। এ ব্যাপারে ২৫ ডিসেম্বর রামগড় থানায় ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় একটি মামলা (নম্বর-৫) রুজু করা হয়।
পুলিশ জানায়, গোপনসূত্রে পাওয়া তথ্য উপাত্তর উপর ভিত্তি করে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধমে বৃৃহস্পতিবার রাতে মাটিরাঙ্গার কাজীপাড়া থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করে পুলিশ। তিনি মাটিরাঙ্গার তবলছড়ি ইউনিয়নের বড়বিল মুসলিমপাড়া গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে। তিনি দুই সন্তানের জনক এবং পেশায় বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন কাজের শ্রমিক।
খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদ্য পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) এস্এম সালাহ উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি বিশেষ দল তাকে গ্রেফতার করে। পুলিশের ঐ অভিযানে অংশ নেয়া রামগড় থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হান্নান মো: তারেক জানান, আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন নজরুল ইসলাম প্রকাশ নাজিম নামে এক পিকআপ ড্রাইভারের মাধ্যমে গত ১৮ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে জালিয়াপাড়া রামগড় সড়কের মাহবুবনগর নামক স্থানে ফাতেমা বেগমকে ডেকে আনা হয়। তারা ফাতেমাকে রাস্তার অদূরে একটি সেগুন বাগানে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ঘটনা প্রকাশ করে দেয়ার ভয়ে জাহাঙ্গীর ও নজরুল দুজন মিলে তাকে হত্যা করে। জবানবন্দিতে জাহাঙ্গীর আরও উল্লেখ করেন, তিনি ফাতেমার দুই পা ও হাত চেপে ধরেন এবং নজরুল তার গলা টিপে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সেগুন গাছের ঝরেপড়া শুকনো পাতা দিয়ে ফাতেমার মরদেহ ঢেকে রেখে তারা পালিয়ে যান।
ওসি আব্দুল হান্নান মো: তারেক আরও জানান, জাহাঙ্গীরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার গুইমারার জালিয়াপাড়া এলাকা থেকে নজরুল ইসলাম নাজিমকে পুলিশ গ্রেফতার করে। নজরুল জালিয়াপাড়ার রেজাউলের ছেলে। তিনি দুই শিশু পুত্রের পিতা। ওসি আরও জানান, জাহাঙ্গীর রামগড় জালিয়াপাড়া ৩৩ কেভিএ বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন কাজের শ্রমিক আর নজরুল পিকআপের মালিক ও ড্রাইভার। তার পিকআপ করেই বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনের মালামাল পরিবহণ করা হত। তিনি বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত: উপজেলার মাহবুব নগর এলাকায় স্থানীয় শিশুরা বিকালে ক্রিকেট খেলার সময় বল বাগান থেকে কুড়িয়ে আনতে গেলে র্দুগন্ধ পায়। পরে তারা বল খোঁজার এক পর্যায়ে সেগুন গাছের ঝরে পড়া শুকনো পাতায় ঢাকা গলিত লাশ দেখতে পেয়ে অভিভাবকদের জানায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে।