27 C
Dhaka
মে ৬, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জাতীয় প্রচ্ছদ রাজণীতি

একটি মামুনুল হক ভবিষ্যত দেশ ও জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ

তানজিম হোসাইন রাকিবঃ শনিবার সন্ধায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক কে সোনারগাঁয়ের একটি রিসোর্টে নারী সহ আটক করা হয়।তবে কথিত এই হেফাজত নেতা মামুনুল হক সেই নারীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করলেও এ ব্যাপারে তিনি কোনো অকাট্য প্রমাণ দিতে পারিনি।

মামুনুল হকের দাবি করা দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা জান্নাত ওরফে ঝরনার পরিচয় মিলেছে। তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কামারগ্রাম-কুলধর গ্রামে। তার বাবার নাম ওয়ালিয়ার রহমান। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কামারগ্রাম ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।

আলফাডাঙ্গা উপজেলাজুড়ে এখন ঝরনাকে নিয়েই চলছে আলোচনার ঝড়। তবে জান্নাতের আগে বিয়ে হয়েছে ও দুটি সন্তান আছে। এ কথা সবাই জানলেও দ্বিতীয় বিয়ের কোনো খবরই জানে না এলাকাবাসী।

সংবাদ পেয়ে সংবাদকর্মীরা শনিবার রাতে ঝরনার গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার বাবা-মায়ের মোবাইল ফোনগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। রাত সোয়া ১২টার দিকে বাড়িতে গিয়েও যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা।

কামারগ্রামের বাসিন্দা ও আলফাডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘আমাদের আলফাডাঙ্গা’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সেকেন্দার আলম জানান, এ ঘটনা প্রচারের পর অনেকেই জানার জন্য মোবাইলে ফোন করেন। জান্নাত আরা নাম হলেও আমাদের এলাকায় তিনি ঝরনা নামে পরিচিত। বিয়ে হয়েছে খুলনায়। দুটি ছেলেও আছে। তবে পরের বিয়ের খবর জানা নেই। আজ শুনলাম ও খবরে দেখলাম।

শনিবার বিকালে রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ ও সংবাদকর্মীরা তাকে নারীসহ অবরুদ্ধ করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। জিঞ্জাসাবাদের এক পর্যায়ে সোনারগাঁয়ের ঐ রিসোর্টে হামলা ভাংচুর চালিয়ে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়েছে তার অনুসারী এবং স্থানীয় হেফাজত নেতাকর্মীরা।

এরপরে একের পর এক অডিও বার্তায় মামুনুল হকের অপকর্ম বেড়িয়ে আসে।

দেশে অরাজকতা বিরাজকারী এই হেফাজত  নেতা মামুনুল হক এর উষ্কানিতে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য ভাংচুর, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আগুন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলাসহ বিভিন্ন অপকর্ম সংগঠিত হয়েছে।

মরহুম শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক এর কনিষ্ঠ পুত্র, বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিশের মহাসচিব এবং যুব মজলিশের সভাপতি মামুনুল হক হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের নতুন কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ঢাকার সাতমসজিদ রোডে অবস্থিত জামি’আ রহমানিয়া আরাবিয়া কওমী মাদ্রাসা একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু, এই মাদ্রাসা বর্তমানে দখল করে আছে অবৈধ দখলদার, যার মূল ক্রীড়ানক মাওলানা মামুনুল হক গং। দীর্ঘদিন ধরেই মাদ্রাসার মোতওয়াল্লীসহ মালিকগণের মামলা ও দাবির প্রেক্ষিতে ওয়াকফ্; প্রশাসন অবৈধ দখলদারকে স্থান ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ জারি করে। কিন্তু মামুনুল হক গং উক্ত মাদ্রাসাটিতে জোর করেই দখলদারিত্ব বজায় রেখেছে এবং অন্যান্য মাদ্রাসা দখলের সুক্ষ্ম পায়ঁতারা করছে। অথচ দখলদার মামুনুল হকই বর্তমান সময়ের একজন নীতিবাগিশ এবং ইসলামী মোটিভেশনাল বক্তা।

মামুনুল হক বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সাম্প্রদায়িক, সরকারবিরোধী, উস্কানিমূলক এবং বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রদান করে সাধারণ মানুষজন, বিশেষ করে তরুণ সমাজকে ক্ষেপিয়ে তুলছেন। এক্ষেত্রে সরকারের সহনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে দিন দিন লাগামহীন হয়ে যাচ্ছেন। আলেম সমাজের চোখে ধুলা দেওয়া বর্ণচোরা মামুনুল হক আলেম সমাজের সামগ্রিক অগ্রগতি কখনোই কামনা করেন না, বরঞ্চ নিজের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নানাবিধ কৌশল অবলম্বন করছেন। এক্ষেত্রে, তার মরহুম পিতা শায়খুল হাদিস মাওলানা আজিজুল হক এর প্রতি সহানুভূতিশীল লোকজনকেও বিভিন্নভাবে ব্যবহার করছেন এবং তার দলে ভিড়াচ্ছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তিনি পাশে পেয়েছেন কিছু অসাধু ব্যক্তিবর্গ ও অনুসারীদের। একদিকে, তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নামাজের ছবি পোস্ট করেন, অন্যদিকে, প্রশিক্ষিত ও সুসংগঠিত সাইবার ইউনিট গড়ে তোলার মাধ্যমে বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রমে মেতে থাকেন ।

আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ইন্তেকালের পর জানাযার দিন লক্ষাধিক অনুসারীর মধ্যে জামায়াত-শিবিরের কৌশলী উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। জানাযার সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এছাড়া, আহমদ শফীর লাশ বহনকারী খাটিয়া জামায়াতের আমীর ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, সাবেক শিবির নেতা ও বর্তমান এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, শিবিরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আইয়ুবি, শিবিরের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আব্দুল আলিমসহ আনুমানিক ৩০/৪০ জন বেষ্টন করে রাখে। বিষয়টি নিয়ে ক্বওমী আলেমসহ সারাদেশের মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। জানা যায়, মাওলানা মামুনুল হক সুকৌশলে জামায়াত-শিবিরের নেতৃবৃন্দকে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিয়ে জামায়াতের সাথে হেফাজতের একটি সেতুবন্ধন তৈরির প্রচেষ্টা চালায়। শুধু তাই নয়, বর্তমান সময়ে হেফাজতে ইসলামের সাথে জামায়ত-শিবিরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে হেফজতে ইসলামকে জামায়াতের ছত্রছায়ায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। মামুনুল হকের স্ত্রী একসময় শিবিরের সক্রিয় সদস্য ছিল। শুধু তাই নয়, তার শ্বশুরকুলের আত্মীয় স্বজনদের অনেকেই এখনো জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।

অতি সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন মামুনুল হক। কথিত আছে যে, বর্তমান কমিটির আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী এবং মহাসচিব নূর হোসেন কাসেমীকে ব্যবহার করে তিনি অনেক বয়োজ্যৈষ্ঠ্য, ত্যাগী ও পরীক্ষিত হেফাজত নেতাদের ডিঙ্গিয়ে এ পদটি বাগিয়ে নেন। এ নিয়ে অনেক হেফাজত নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এছাড়াও, নিজ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বাবুনগরী ও কাসেমীকে ব্যবহার করছেন। বাবুনগরী ও কাসেমীকে সামনে রেখে হেফাজতের ব্যানারে বিভিন্ন জেলায় বিচরণ করলেও তার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজেকে হেফাজতের শক্তিশালী নেতা হিসেবে জাহির করা।

শায়খুল হাদীসের বড় ছেলে মাওলানা মাহফুজুল হক সম্প্রতি বেফাকের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিশ এর মহাসচিব পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। যে পদে বর্তমানে মামুনুল হক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন। জনশ্রুতি রয়েছে যে, দলের মহাসচিবের পদটি দখল করতে তার ভাইকে শর্তানুযায়ী দলীয় পদ ছেড়ে বেফাকের মহাসচিব পদে বসাতে কলকাঠি নাড়েন। মাহফুজুল হক সাম্প্রদায়িক এবং ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রমে নিরব ভূমিকা রাখলেও মামুনুল হক যেন ঠিক তার উল্টোটি।

গতবছর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের বার্ষিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সরকারি অনুমোদনের প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণ না করে অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করে সে নিজ দল ও সমর্থকদের কাছে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে মামুনুল হক সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ধর্না দিয়ে সবশেষে অনুমতি প্রাপ্ত হন। অথচ, এই মামুনুল হকই সরকার এবং সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষদগার করে বেড়াচ্ছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে: আইন উপদেষ্টা

banglarmukh official

শুক্রবার কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক, দ্রুত বিচার নিশ্চিতের নির্দেশ

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official