স্টাফ রিপোর্টার//তানজিম হোসাইন রাকিব:
নিম্নমানের ৫২ পণ্যের উত্পাদন, বাজার-জাতকরণ ও বিপণন বন্ধে হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেও এখনো দেদারসে বরিশালের বিভিন্ন বাজারে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে ।
গত ১২ মে হাইকোর্ট মান উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নিম্নমানের এসব পণ্য বাজার থেকে জব্দ করে ধ্বংস করতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে। আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করে ১০ দিনের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বরিশালের বাজারসহ এলাকার বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট স্টোরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, দেদারসে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে। অনেক দোকানি এসব পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। আবার অনেকে জেনেও বিক্রি করছেন। এতে ভোক্তারা প্রতারিত ও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
ভাটিখানা বাজারের দোকানী গাজী বলেন, ‘আমরা এখনো এসব পণ্য বিক্রি করছি। তবে পণ্যগুলোর উত্পাদন প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, তারা বাজার থেকে এসব পণ্য উঠিয়ে নেবে। উঠিয়ে নিলেতো আর বিক্রি করব না।’
একই কথা জানান এই বাজারেরই আরেক বিক্রেতা। এই দোকানেও নিম্নমানের নিষিদ্ধ এসব পণ্য বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। এই বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা পড়েছি সমস্যায়। ২০ টাকার পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে হাজার হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়। অথচ নিম্নমানের পণ্যের সব দায় কোম্পানির’।
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে বাজার থেকে ৪০৬টি পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে বিএসটিআই। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্য নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ৫২টি পণ্য নিম্নমানের প্রমাণিত হয়। সরিষার তেল, হলুদের গুঁড়া, কারি পাউডার, লাচ্ছা সেমাই, আয়োডিনযুক্ত লবণ, ড্রিংকিং ওয়াটার, স্পেশাল ঘিসহ এসব নিম্নমানের পণ্য দেশের নামি-দামি ব্র্যান্ডের।
তবে হাইকোর্টের রায়ের পর অনেক ভোক্তা সচেতনও হয়েছেন। অনেকে বাজার করতে গিয়ে সাথে নিয়ে গেছেন বিক্রি নিষিদ্ধ ৫২ পণ্যে।
বিক্রি বন্ধের নির্দেশ যে ৫২টি পণ্য-
তীর, জিবি, পুষ্টি ও রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের সরিষার তেল, সান ব্র্যান্ডের চিপস, আরা, আল সাফি, মিজান, দিঘী, আর আর ডিউ, মর্ণ ডিউ ব্রান্ডের ড্রিংকিং ওয়াটার, ডানকানের ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার, প্রাণ, মিষ্টিমেলা, মধুবন, মিঠাই, ওয়েল ফুডের লাচ্ছা সেমাই, ডুডলি ব্র্যান্ডের নুডলস, টেস্টি তানি তাসকিয়া ও প্রিয়া সফট ড্রিংক পাউডার, ড্যানিশ, প্রাণ, ফ্রেস ব্র্যান্ডের হলুদের গুঁড়া, এসিআই পিওর ব্র্যান্ডের ধনিয়া গুঁড়া, প্রাণ ও ড্যানিস ব্র্যান্ডের কারি পাউডার, বনলতা ব্র্যান্ডের ঘি, পিওর হাটহাজারির মরিচের গুঁড়া, এসিআই, মোল্লা সল্টের আয়োডিনযুক্ত লবণ, কিং ব্র্যান্ডের ময়দা, রূপসা ব্র্যান্ডের দই, মক্কা ব্র্যান্ডের চানাচুর, মেহেদি ব্র্যান্ডের বিস্কুট, বাঘাবাড়ীর স্পেশালের ঘি, নিশিতা ফুডসের সুজি, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মঞ্জিল ফুডের হুলুদের গুঁড়া, মধুমতি ব্র্যান্ডের আয়োডিনযুক্ত লবণ, সান ব্র্যান্ডের হলুদের গুঁড়া, গ্রীনলেনের মধু, কিরণ ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই, ডলফিন ব্র্যান্ডের মরিচের গুঁড়া, ডলফিন ব্র্যান্ডের হলুদের গুঁড়া, সূর্য ব্র্যান্ডের মরিচের গুঁড়া, জেদ্দা ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই, অমৃত ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই, দাদা সুপার, তিনতীর, মদিনা, স্টারশীপ ও তাজ ব্র্যান্ডের আয়োডিন যুক্ত লবণ।
এদিকে বুধবার বরিশাল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ শাহ শোয়াইব মিয়ার নেতৃত্ব বরিশালের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। ভাটিখানা বাজারে গাজী স্টোর, ইসলামিয়া ঔষধের দোকান সহ বেশ কিছু দোকানে নিষিদ্ধ এ পন্য থাকার কারনে অর্থদন্ড করা হয় এবং নিষিদ্ধ এ পণ্যগুলো ধ্বংস করা হয়।