আওয়ামী লীগের দূর্গ বলে খ্যাত শেখ হাসিনার নির্বাচনী গোপালগঞ্জ-৩ (কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায় বিএনপি।
এই আসন থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ৬ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দেশ স্বাধীনের পর থেকে যতবার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রায় ততবারই এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন।
শুধু ১৯৮১ সালের উপ-নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী লক্ষ্মী কান্ত বল ও ১৯৮৬ সালের উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কাজী ফিরোজ রশীদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
অপরদিকে ১৯৯৬সালে ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে স্বতন্ত্র ভাবে কোটালীপাড়া উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান হাওলাদার নির্বাচিত হন। তবে তিনি নির্বাচিত হয়ে পরবর্তীতে শপথ নেননি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারের হত্যার পর দীর্ঘ বছর ধরে এ আসনের জনগন অবহেলিত ও উন্নয়ন বঞ্চিত ছিল। আর এ সময়ে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা এ আসনের তেমন কোন উন্নয়ন করেনি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেন। এর পর এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে।
তারপর ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত আবারো উন্নয়ন বঞ্চিত হয় এ আসনের জনগণ। এরপর আবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে। তাই দেশের অন্যান্য আসনের তুলনায় রাজনৈতিক কারনে গোপালগঞ্জ-৩ আসন একটু ব্যাতিক্রম।
কারণ এ আসনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান। এলাকার মানুষ মনে প্রাণে বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসেন, ভালবাসেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকাকে। সে কারনে মানুষ তাঁর দল আওয়ামী লীগকে ভালবেসে নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়।
গোপালগঞ্জ-৩ (কোটালীপাড়া -টুঙ্গিপাড়া) কোটালীপাড়া উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা এবং টুঙ্গীপাড়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গোপালগঞ্জ-৩ আসন গঠিত।
বিগত সংসদ নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বরারবরই বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করে আসছেন। আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এ আসনে বিএনপি বা অন্য কোন দল থেকে যে বা যারা ভোটে অংশ নিয়ে থাকেন তারা শুধু নিয়ম রক্ষার নির্বাচনই করে থাকেন। আর তাই নির্বাচনী প্রার্থীতা নিয়েও দেশের বিভিন্ন স্থানে যেমন লবিং হয়ে থাকে তাও এখানে থাকে না।
এক কথায় উত্তাপ বিহীন নির্বাচনই হয়ে থাকে এখানে। কিন্তু নির্বাচনী আমেজের কোন কমতি থাকে না। জেলার অন্য দুটি সংসদীয় আসনে মতই এ আসনের ভোটাররাও বাংলাদেশের তিন বারের সফল প্রধানমন্ত্রী ও এ আসনের এমপি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মনে প্রাণে ভালবাসেন। তাকে বার বার সর্বোচ্চ ভোটে বিজয়ী করে এমপি নির্বাচিত করেন। এখানকার ভোটার তাকে ভোট দিয়ে গর্ববোধ করেন। কেননা, এখানকার ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ আসনের ভোটারদের নিয়ে গর্ববোধ করেন।
গোপালগঞ্জের নির্বাচনী এলাকা-০৩ টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বঙ্গবন্ধু কন্যা ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের তৃনমূল পর্যায় থেকে শেখ হাসিনাকে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন বলে নেতাকর্মী সূত্রে জানাগেছে।
এখানে আওয়ামী লীগের অন্য কোন প্রার্থী নেই। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এসএম জিলানী। তবে, জোট-মহাজোট নির্বাচন হলে এ আসনে মহাজোটের একক প্রার্থী হবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আর জোটের প্রার্থী হতে পারেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এস এম জিলানী। মহাজোট থেকে বেড়িয়ে জাতীয় পার্টি একক ভাবে নির্বাচন করলে সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হবেন এ জেট অপু শেখ। ২০১৪ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ জেট অপু শেখ জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
এস এম জিলানী রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ীক কারণে ঢাকায় অবস্থান করেন। তবে মাঝে মধ্যে নিজ নির্বাচনী এলাকায় আসেন। নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নেন । তবে এ আসনের বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে এস এম জিলানীর যথেষ্ঠ কদর রয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে কথা হলে গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ- সভাপতি এস, এম জিলানী বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিবে। আর আগামী নির্বাচনে এ আসনে দল আমাকে মনোনয়ন দিবে বলে আমি শতভাগ আশাবাদী। আর জনগণ যদি তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, তবে এই আসনে বিএনপি এবার চমক দেখাবে।
জাতীয় পার্টির সম্ভব্য প্রার্থী এ জেট অপু শেখ বলেন, গত নির্বাচনে এ আসন থেকে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। আগামী নির্বাচনে দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি প্রার্থী হবো। ১৯৮৬ সালে উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কাজী ফিরোজ রশীদ জয়লাভ করেছিলেন। এখানে জাতীয় পার্টির অনেক ভোট রয়েছে। আমি প্রার্থী হলে জয়লাভ না করতে পারলেও একটি সন্মানজনক ভোট পাবো।
উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-০৩ আসন থেকে তিন বারের সফল প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন করবেন। সেই নির্বাচনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ভোটের ব্যবধানে আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করার জন্য দলীয় নেতা কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম হাজরা মন্নু বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ৪র্থ বারের মত সরকার গঠনে সর্বাত্বক ভুমিকা পালন করবে কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়ার জনগন।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে কোটালীপাড়াবাসী এলাকার উন্নয়নে জননেত্রীর কাছে কোন কিছু চাইলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে তা পূরণ করেন। যে কারণে এ এলাকার ভোটাররা এবারও তাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী করবেন এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা আবরও প্রধানমন্ত্রী হবেন। উন্নত দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে এ দেশে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী দরকার।
কোটালীপাড়ার কুশলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল ইসলাম বাদল বলেন, গোপালগঞ্জ-০৩ আসন থেকে বরাবরই বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। আর বরাবরই তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। আগামী নির্বাচনেও তিনিই আমাদের একমাত্র ভরসা।
জেলা পরিষদ সদস্য দেবদুলাল বসু পল্টু বলেন, আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা যতদিন জীবিত থাকবেন, ততদিনই এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে আমরা আশা রাখি। কারণ এখানকার ভোটাররা তাকে মনে প্রাণে ভালবাসেন। আর এ কারণে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বিপুল ভোটে জয়ী করেন।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও যুব লীগ নেতা মৃনাল কান্তি বিশ্বাস স্বপ্নীল বলেন, কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়ার ভোটারদের প্রাণের মানুষ বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। নেত্রীর বাইরে এই অঞ্চলের মানুষ ভুল করেও কিছু চিন্তা করে না। তিনি ব্যতিত আমাদের অন্য কোন প্রার্থী নেই বা সম্ভাবনাও নেই। বঙ্গবন্ধু যেমন এ এলাকার মানুষদের মনে প্রাণে ভালবাসতেন। তিনিও একই ভাবে আমাদের ভোটারদের ভালবাসেন।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাবুল হাজরা বলেন, জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা আমাদের এ আসন থেকে নির্বাচন করেন এটা আমাদের গর্বের। তিনি এ আসন থেকে এবারও নির্বাচন করবেন এটাই আমরা আশা করছি এবং এ বছর তাকে স্মরণ কালের স্মরণীয় ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করবো।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান হাজরা বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন। তিনি এখন বিশ্বনেত্রী। দেশের উন্নয়নে আমাদের সকলের উচিৎ তাকে ভোট দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা।