স্টাফ রিপোর্টার// শাওন অরন্য:
প্রেরমর টানে পটুয়াখালীর গলাচিপায় এসে দফায় দফায় নিগৃহীত ও প্রতারণার শিকার হয়েছে নারায়নগঞ্জের চাষার জিইসি গার্মেন্টসের প্রায় বাইশ বছরের এক তরুণী।
দুই দফা আত্মহত্যার চেষ্টা করে এখন গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে সে।
এর আগে প্রতারক প্রেমিক মিরাজ পালিয়ে গেলে এলাকার লোকজন স্থানীয় আরেক নওমুসলীমের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয় ওই তরুণীর। বিয়ের তিন সপ্তাহ যেতে না যেতেই সেখানেও তালাক হয়।
আর এ যন্ত্রণা সইতে না পেরে দ্বিতীয় দফায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে ওই তরুণী জানান। গলাচিপা থানা পুলিশ ওই তরুণীর মৌখিক বয়ান লিপিবদ্ধ করে সদর ইউনিয়নের সত্তার হাওলাদারের স্ত্রী বিউটি বেগম ও ১নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গোলাম হোসেন কাছে জিম্মায় রাখেন।
ওই তরুণী ও স্থানীয়দের সূত্রে জানাগেছে, গত প্রায় ২২ দিন আগে প্রেমের টানে নারায়নগঞ্জ এলাকার চাষার জিইসি গার্মেন্টস কর্মী বাইশ বছরের তরুণীর সাথে গলাচিপার পানপট্টি বাঁশতলা এলাকার বাবুল মিয়ার ছেলে মিরাজে ঢাকায় বাসে দুজনের পরিচয় এবং প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পর মিরাজের প্ররোচণায় ওই তরুণী গলাচিপায় পানপট্টি চলে আসে।
প্রতারক প্রেমিক মিরাজ ওই তরুণীকে গলাচিপায় এনে কয়েকদিন রেখে পরে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে তরুণীকে রাস্তায় ছেড়ে পালিয়ে যায়। উপায়ন্ত না পেয়ে মেয়েটি আত্মহননের চেষ্টা করলে এলাকার লোকজন বুঝিয়ে তাকে স্থানীয় সত্তার হাওলাদেরর বড়িতে নিয়ে যায় এবং সেখানে মেয়েটির আশ্রয় দেয়।
পরে এ বছর দ্বিতীয় রমজানে রতনদী তালতলী ইউয়নের দেওয়ান বাজার এলাকার সজল (এলাকায় নওমুসলীম আব্দুল্লাহ হিসেবে পরিচিত) এর সঙ্গে তরুণীর বিয়ে দিয়ে দেয়। বিয়ের পর গত মঙ্গলবার অন্যের সন্তান গর্ভে রয়েছে বলে আখ্যা দিয়ে এলাকার লোকজন সালিশ বসিয়ে আব্দুল্লাও তাকে খোলা তালাকের দিয়ে দেয়।
এ অপমান সইতে না পেরে দ্বিতীয় দফায় কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে পথচারীরা হাসপাতালে রেখে যায়।
বুধবার সকালের দিকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ওই গার্মেন্টস কর্মীকে হাসপাতালে নিয়ে এসে বিষ খেয়েছে বলে ইমারজেন্সিতে কর্তব্যরত চিকিৎসককে জানিয়ে তারাও সটকে পড়ে। ইমারজেন্সিতে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা চিকিৎসা শেষে তরুণীটিকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। কিন্তু রহস্যজনকভাবে বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতাল থেকে মেয়েটিকে নিয়ে চলে যায় স্থানীয় বিউটি বেগম। বিকেলের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়লে আবার গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তি করানোর জন্য নিয়ে আসেন কালিকাপুর গ্রামের সত্তার হাওলাদারের স্ত্রী বিউটি বেগম।
বিউটি বেগম বলেন, ‘আমার বাড়ি আশ্রয় নিয়েছে অসুস্থ একটি মেয়ে। এখন এ অবস্থায় তো আর ফেলে দিতে পারি না। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ি নেওয়ার সময় বেশি অসুস্থ পয়ে পড়লে আবার হাসপাতালে ভর্তি করাতে নিয়ে আসি।
গলাচিপা সদর ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. গোলাম হোসেন খলিফা বলেন, ‘বুধবার দু পক্ষ খোলা তালাকের জন্য আসে। স্থানীয় লোকজন নিয়ে আমরা তাদের তালাকের ব্যবস্থা করি।’ তরুণীটির শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানাতে চাইলে গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. রাজিব বিশ্বাস বলেন, ‘ সে মানিসিকভাবে খুবই দুর্বল। কমপক্ষে আরো তিন চারদিন নিবীড় চিকিৎসা দরকার।এখনই নিশ্চিত করে সব কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।আমরা সাধ্য মতো চেষ্টা করছি।
এ ঘটনা সমম্পর্কে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আখতার মোর্শেদ বলেন, মেয়েটিকে তার এক আত্মীয় বাড়ি নিয়ে গেছে। মেয়েটি এখন পর্যন্ত অভিযোগ করেনি। সে শারীরিকভাবে অসুস্থ ভালোভাবে কথা বলতে পারছে না। এখন তার আত্মীয় বিউটি বেগমের কাছে আছে।