31 C
Dhaka
জুলাই ১, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
আন্তর্জাতিক দূর্ঘটনা

মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিতে গিয়ে নদীতে প্রাণ গেল বাবা-মেয়ের

অস্কার মার্টিনেজ রামিরেজ ও তাঁর মেয়ে ভ্যালেরিয়া। এল সালভাদরের নাগরিক অস্কার যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চেয়েছিলেন। ছবি: রয়টার্সএকেবারে তীরের কাছাকাছি উপুড় হয়ে পড়ে থাকা দুটি দেহ। নিথর, নিস্পন্দ। আর একটুক্ষণ দম থাকলে হয়তো তীরে উঠে মেয়ের গা, হাত-পা মুছে দিতেন বাবা। হয়তো দুই বছরের মেয়ে ভ্যালেরিয়াকে বুকে জড়িয়ে দম নিতেন প্রাণভরে। কিন্তু সেই সৌভাগ্য হয়নি বাবা অস্কার মার্টিনেজ রামিরেজের। মেয়ের সঙ্গেই নদীতে ডুবে মরতে হয়েছে তাঁকে। অন্তিম মুহূর্তেও প্রিয় বাবার সঙ্গ ছাড়েনি মেয়ে, বাবার কাঁধে হাত রেখেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে সে। কখনো বাবাকে ছেড়ে যাবে না—এবারের বাবা দিবসে হয়তো এই প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিল ভ্যালেরিয়া।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, এল সালভাদরের নাগরিক অস্কার (২৫)। দুই বছর বয়সী মেয়ে ভ্যালেরিয়া ও ২১ বছরের স্ত্রীকে নিয়ে গত রোববার স্থানীয় সময় বিকেলে মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন তিনি। প্রত্যাশা ছিল যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হওয়ার। অবৈধ ও বিপজ্জনক পথ পেরিয়ে মার্কিন মুলুকে পা দেওয়া আর হলো না তাঁর। রিও গ্রান্দে নদী পার হতে গিয়ে নদীতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে অস্কার ও তাঁর মেয়ের। গত সোমবার তীরের কাছাকাছি বাবা-মেয়ের মরদেহ ভেসে ওঠে। তবে প্রাণে বেঁচে গেছেন অস্কারের স্ত্রী।

এই ছবিটি মনে করিয়ে দিচ্ছে ৩ বছর বয়সী শিশু আয়লান কুর্দির কথা । ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশী সিরিয়ার এই শিশুটির মৃতদেহ ভেসে এসেছিল তুরস্কের সমুদ্রসৈকতে। ২০১৫ সালের ওই ঘটনার ছবিটি বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছিল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অস্কার মার্টিনেজ রামিরেজ মেয়েকে পিঠে নিয়ে নদী পার হতে চেয়েছিলেন। গায়ের টি-শার্টের ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়েছিলেন ছোট্ট মেয়েটিকে। মেয়েকে নিরাপদে রাখতে নিজের সাধ্য অনুযায়ী কিছুই করা বাকি রাখেননি অস্কার। খরস্রোতা রিও গ্রান্দে পাড়ি দিতে হতদরিদ্র অস্কার আর কীই বা করতে পারতেন! তাও রক্ষে হয়নি। স্রোতের টানে পানিতে ডুবে যান অস্কার। স্ত্রীর চোখের সামনেই ভেসে যায় স্বামী-সন্তান। স্ত্রী শেষতক তীরে পৌঁছেছিলেন, তবে তখন তাঁর সম্বল শুধুই আহাজারি।

মেক্সিকোর মাতামোরোসের তামালিপাস রাজ্যের নদীর ধারে গত সোমবার মিলেছে অস্কার ও তাঁর ছোট্ট মেয়ের মৃতদেহ। সিএনএন বলছে, মেক্সিকোর এক আলোকচিত্রী সর্বপ্রথম মর্মস্পর্শী এ ছবিটি ক্যামেরাবন্দী করেন। বাবা-মেয়ের মৃতদেহের চারপাশে ছড়িয়ে ছিল কিছু পানীয়ের ক্যান।

বাবা-মেয়ের মৃতদেহের এই ছবি ইন্টারনেটের দুনিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, বৈশ্বিক গণমাধ্যমগুলো গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে প্রতিবেদন। এই ঘটনায় এল সালভাদর ও মেক্সিকোতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অভিবাসীদের প্রতি এই দুই দেশের সরকারের বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গিই ক্ষোভ সৃষ্টির মূল কারণ।

এ ঘটনায় এল সালভাদরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্দ্রা হিল বলেছেন, দেশটির অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করছে তাদের সরকার। এ জন্য সরকারের পাশে থাকার জন্য দেশবাসীদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। হিল বলেন, ‘আমাদের দেশ আবার শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। আমি আপনাদের কাছে প্রার্থনা করছি-নিজেদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলবেন না। জীবন আর সবকিছুর চেয়ে অধিক মূল্যবান।’

ওদিকে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোর বলেছেন, তাঁর সরকার অভিবাসন প্রত্যাশীদের অধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অধিকার রক্ষা করতেই হবে। তবে অভিযোগ আছে, উত্তরাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে মেক্সিকো তেমন বাধা দেয় না। এ নিয়ে মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে টানাপোড়েনও আছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

দিল্লির ঘরে ঘরে জ্বর!

banglarmukh official

পাকিস্তানে ট্রেনে জিম্মি দেড় শতাধিক যাত্রী উদ্ধার, ২৭ সন্ত্রাসী নিহত

banglarmukh official

পাকিস্তানে যাত্রীবাহী ট্রেন হাইজ্যাক, জিম্মি শতাধিক

banglarmukh official

আইসিইউ থেকে পালালেন ‘কোমা’য় থাকা রোগী, হাসপাতালের ভয়ঙ্কর জালিয়াতি ফাঁস

banglarmukh official

গাজা দখলের যে কোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করতে হবে: তুরস্ক

banglarmukh official

মালয়েশিয়ায় বিনোদন কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশিসহ আটক ৮০

banglarmukh official