বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে মাদ্রাসাশিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরিয়ে অপদস্ত করায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। ঘটনার মূলহোতা দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢী ও একই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার শহীদ দেওয়ানকে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এই আদেশ সংক্রান্তে মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপনও জারি করে মন্ত্রণালয়টি। একই সাথে চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে পৈশাচিক ওই ঘটনায় পৃথক পৃথক কারণ দর্শানো নোটিশও দেয়। তাদেরকে কেন চূড়ান্তভাবে পদ থেকে অপসারণ করা হবে না জানতে চেয়ে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জাবাব চাওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, দড়িচর খাজুরিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে শিক্ষক আলাউদ্দিনকে অভিযুক্ত করে। এনিয়ে গত ৩ জুন ওই ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী ও শহীদ দেওয়ানসহ অন্তত ১০ থেকে ১২ জন মিলে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করে। সেখানে চেয়ারম্যান বিচারকার্য শেষে শিক্ষক শহীদুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। শহীদুল জরিমানার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে মারধরসহ গলায় জুতার মালা পরিয়ে স্থানীয় স্টিমারঘাট বাজারে ঘোরানো হয়। এবং ঘটনাটি মোবাইল ফোনে ধারণ নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান।
এই ঘটনার একটি ভিডিওচিত্র রাত নাগাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তোলপাড়। ওইদিন রাতে মেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাটি সম্পর্কে অবহিত হলে জড়িতদের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে। রাতের সেই অভিযান ব্যর্থ হলেও সকালে চেয়ারম্যানের সহযোগী বজলু আকন নামের একজনকে গ্রেপ্তারে সফলতা আসে। এর একদিন বাদে পলাতক চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী ও তার আরেক সহযোগী সাবেক মেম্বার সাত্তার শিকদারকে পার্শ্ববর্তী মুলাদী উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে এই ঘটনায় শিক্ষক আলাউদ্দিন ৯জনকে আসামি করে একটি মামলা করলে চেয়ারম্যান ও সাবেক মেম্বারকে সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ।
এদিকে পুরো ঘটনাটি স্থানীয় তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় বরিশাল জেলা প্রশাসক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে স্থানীয় মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ রাখেন। যার প্রেক্ষিত্রে মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে নিজ নিজ পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে মন্ত্রণালয়।
এর আগে বরিশাল জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ওই মাদ্রাসাশিক্ষক ও ইমামকে সম্মানিত করা হয়েছে। পুলিশের একটি প্রতিনিধি দল সোমবার বাড়িতে গিয়ে তার মাথায় সম্মানজনক টুপি পরিয়ে দেয় এবং অন্যান্য গিফটসামগ্রী উপহার হিসেবে প্রদান করে।’