দীর্ঘ দেড় মাস পর বৈঠকে বসে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। বৈঠকে কয়েকটি ইস্যুতে দলটির দুই নেতার মাঝে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়।
বৈঠকে বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা এমপিদের শপথগ্রহণ, সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন এবং বগুড়া উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা না হওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ নিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভূমিকারও সমালোচনা করলে দুই নেতার মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় লন্ডন থেকে স্কাইপে যুক্ত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি কিছু না বললেও পরে এক নেতার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সেখানে স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ও দলের এক প্রবীণ নেতা সাম্প্রতিক ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন।
সূত্র জানায়, তবে অন্যান্য সদস্যরা তেমন কোন কথা বলেননি। তবে তারা প্রবীণ ওই নেতার বক্তব্যের সঙ্গে একমত ছিলেন। ওই সময় বিএনপি মহাসচিব ক্ষোভে বলেই ফেললেন, এভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা বলেন, দুই নেতার মধ্যে বাদানুবাদ চলতে থাকলে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দুইজনকে থামান। তখন আগের পরিস্থিতি এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে আনা হয়। সবার উদ্দেশে নেতা বলেন, আমরা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাব না বললেও গিয়েছি। ছিয়াশি সালে শেখ হাসিনা নির্বাচনে যাবে বলে ঘোষণা দেওয়ার পরও তা পরিবর্তন করেছেন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতেই পারে। আমরা নির্বাচনে যাব না বলেও গিয়েছি। শপথও নিয়েছি।
শপথ গ্রহণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ফখরুলের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, কীভাবে এসব সিদ্ধান্ত হয়। স্থায়ী কমিটির কেউ জানেও না। আপনি (ফখরুল) বললেন, শপথ নেওয়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত। কিন্তু নিজে শপথ নিলেন না। আবার বললেন, আগের নেওয়া সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। আপনি তো স্থায়ী কমিটিকে অপমান করেছেন।
ওই নেতা এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, আপনি কার ব্যাগ ক্যারি (বহন) করছেন? এ মন্তব্যে বিএনপি মহাসচিবও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। কেন এমন মন্তব্য করা হলো তা জানতে চান। ফখরুল ওই নেতাকে বলেন, আপনি তো জাতীয় পার্টি করতেন। আপনি তো এরশাদের ব্যাগ ক্যারি করেছেন। ফখরুলের এই মন্তব্যের জবাবে ওই নেতা বলেন, আগে কী করেছি, সেটা মূল বিষয় নয়। এখন কী করছি, সেটা দেখার বিষয়।
ওই নেতা ফখরুলের উদ্দেশে বলেন-সিদ্ধান্ত আমরা পরিবর্তন করতেই পারি। কিন্তু আপনি কেন বললেন-এটি শুধু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত। উনি যখন সিদ্ধান্ত দেন তখন তা দলীয় সিদ্ধান্তই বলতে হবে। আবার আপনি শপথ নিলেন না। তাহলে দাঁড়াল কী? ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একই বিষয়ে দুটি সিদ্ধান্ত দিল? আবার আপনি বললেন-শপথ না নেওয়ার আগের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল, এটিও কেন বলতে গেলেন?
শনিবারের বৈঠকে এ দুইজন ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।