তখন প্র্যাকটিস শেষে টিম বাসে উঠে গেছেন অন্য সব ক্রিকেটার। দুজন শুধু বাকি। একজন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, অন্যজন তামিম ইকবাল। ব্রিস্টলের সংবাদ সম্মেলন কক্ষ থেকে প্রেস মিট শেষে বেরিয়ে মাঠে যাবার আগে সাংবাদিকদের সাথে অন্য সময়ের মত আড্ডা দিলেন মাশরাফি। সৌজন্যতা বিনিময়, খুনসুঁটি সবই চললো।
অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গে এসে যোগ দিলেন তামিমও। কথোপকথন পর্ব খুব বেশি সময় লম্বা হয়নি। ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন তাড়া দিলেন। টিম বাসে পুরো দল অপেক্ষা করছে।
পুরো অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তায় অধিনায়ক মাশরাফি আর ওপেনার তামিম একদমই ফুরফুরে মেজাজে। শরীরী ভাষা আর কথোপকথনের কোথাও বোঝা গেল না, ভেতরে কোনরকম চাপ বাসা বেঁধেছে। বরং বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হলো। কথাও বললেন হেসে। নিজেকে ফিরে পেতে প্রাণপন চেষ্টায়রত তামিমের চোখেমুখে রানে ফেরার দৃঢ় সংকল্প।
তামিমের মেধাপ্রজ্ঞা নিয়ে নতুন করে বলার কিছুই নেই। পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরলে তিনিই বাংলাদেশের সব সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান। সন্দেহাতীতভাবেই দেশের সফলতম উইলোবাজ, এক নম্বর ওপেনার। বিশেষ করে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর থেকে এই বিশ্বকাপ পর্যন্ত ৪৮ মাসে তামিমের পরিসংখ্যান অসাধারণ। এ সময়ে ৫২ টি একদিনের খেলায় তামিমের ব্যাট থেকে এসেছে ২৫১১ রান।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের আর কোন ব্যাটসম্যান এই সময়ে ওয়ানডেতে এত রান করতে পারেননি। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শেষ চার বছরে সর্বাধিক রান করা তামিম ঐ সময়ে বিশ্বের সফলতম ১৩ নম্বর ব্যাটসম্যানও। এটাই শেষ নয়, এই চার বছরে তামিমের ব্যাট থেকে এসেছে ৭ শতক ও ১৮টি অর্ধশতক। তার ম্যাচ পিছু গড়ও ঈর্ষনীয়, ৫৭.০৬।
তবে এবার বিশ্বকাপে প্রথম তিন খেলায় দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড আর ইংল্যান্ডের সাথে তামিম বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তার ব্যাট কথা বলেনি। একটি হাফ সেঞ্চুরিও নেই। তা নিয়ে হৈচৈ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তোলপাড়।
কেউ কেউ পারলে তামিমকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে খেলান। বাইরে যে যাই বলুন আর হৈচৈ করুন না কেন, তামিম নিজে ভাল খেলতে আছেন মুুখিয়ে, প্র্যাকটিসে সবার আগে এসে নিজেকে ঝালিয়ে নিয়েছেন। আজ (সোমবার) নেটে ৭৫ মিনিট টানা ব্যাটিং করেছেন নিজেকে ফিরে পাবার দৃঢ় প্রত্যয়ে।
তাই অবধারিতভাবে তামিম প্রসঙ্গও উঠলো শ্রীলঙ্কা ম্যাচের আগে। অধিনায়ক মাশরাফির কাছে জানতে চাওয়া হলো, আচ্ছা তামিম তো বিশ্বকাপে রান পাচ্ছেন না। তবে প্র্যাকটিসে গভীর মনোযোগী। প্রাণপন চেষ্টা করছেন রানে ফিরতে। বাড়তি ঘাম ঝরাচ্ছেন। নেটে প্রচুর সময় নিয়ে ব্যাটিং প্র্যাকটিসও করছেন। তারপরও তামিমের রানে ফেরায় আপনি কতটা আশাবাদী?
এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মাশরাফি কিছুটা ভাববাদে জবাব দিয়েছেন। তার ব্যাখ্যা, ‘তামিম গত চার বছরে আমাদের সেরা ব্যাটিং পারফরমার। দলকে অসাধারণ সার্ভিস দিয়েছে। হয়ত কোন কারণে এবার বিশ্বকাপে তিন ম্যাচে রান পায়নি। তাতে কি? কোন আসরে এমন হতেই পারে। তামিম সাধ্যমত চেষ্টা করছে রানে ফিরতে। সমস্যা কোথায়, তা খুঁজে বের করে সমাধানের চেষ্টাও করছে প্রাণপন।’
এটুকু বলেই অন্যরকম ভাষায় কথা বলেন মাশরাফি। তার মনে হয় আসলে তামিমের ফর্ম ঠিক আছে। অন্য কোন সমস্যাও নেই। হয়ত ভাগ্যের আনুকূল্যতা পাচ্ছে না তামিম। ভাগ্য ফেবার করছে না। তাই হয়ত লম্বা ইনিংস খেলতে পারেনি।
আর সে কারণেই মাশরাফি বলে দিলেন, ‘তারপরও আমি বলবো, তামিমের ভাল খেলে রান করা নির্ভর করবে ভাগ্যের ওপর। ভাগ্য সহায় থাকলে তার চেস্টা সফল হবে। ঠিকই রান পাবে। আর ভাগ্য ফেবার না করলে শত চেষ্টায়ও কাজ হবে না। তখন ২৩ গড় কেন, বাকি খেলাগুলোতে ২৩ রানও করতে পারে।’
ওপরের মন্তব্যে পরিষ্কার, মাশরাফি মনে করেন, তামিমের ভাল খেলায় ভাগ্য একটা বড় ফ্যাক্টর। ভাগ্য সহায় থাকলে ঠিকই রানে ফিরবেন দেশ সেরা ওপেনার। অধিনায়কের মন্তব্য আসলে শুভকামনাই। তামিমের জন্য শুভকামনা ভক্ত ও সমর্থক সবার জন্য।