অনলাইন ডেস্ক :: বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা মামলার মূল আসামিরা জেলা আওয়ামী লীগের চিরচেনা দুই প্রতিপক্ষের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে ওঠার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আগেই উঠেছে। তবে এবার খুনি নয়ন বন্ড-রিফাত ফরাজিদের হত্যাকারী হয়ে ওঠার পেছনে বরগুনার দুই আইনজীবীর হাত রয়েছে বলে অভিযোগ মিলেছে। যারা টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন সময় খুনিদের জামিন করিয়ে দিতেন।
এই দুই আইনজীবীর নাম মোতালেব মিয়া ও হুমায়ন কবির পল্টু। অভিযোগ আছে তারা দুজনই সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের কাছের লোক।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হত্যাকারীদের অন্যতম রিফাত ফরাজী ও নয়ন বন্ড দুজনই অনেক আগে থেকেই অপরাধ জগতের পরিচিত মুখ। তাদের কারণে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। বরগুনার কলেজ রোড, ডিকেপি, দীঘিরপাড়, কেজিস্কুল ও ধানসিঁড়ি সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়াত নয়ন ও তার সহযোগীরা।
২০১৭ সালের ১৫ই জুলাই সন্ধ্যায় তরিকুল ইসলাম (২১) নামে এক প্রতিবেশীকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেন রিফাত ফরাজী।
একই বছর রিফাত বরগুনার হোমিও চিকিৎসক ডা. আলাউদ্দিন আহমেদের ডিকেপি রোডের বাসার ছাত্র মেসে গিয়ে ধারালো অস্ত্রের মুখে বাসায় থাকা সব ছাত্রকে জিম্মি করে তাদের ১৪টি মোবাইল ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। এমনকি পুলিশ সদস্যের বাড়িতেও অস্ত্র নিয়ে গিয়ে হুমকি দিয়ে আসে নয়ন।
এসব ঘটনায় একাধিকবার গ্রেফতার হলেও ওই দুই আইনজীবী আইনের ফাঁক গলিয়ে তাদের জামিন করিয়ে দেন।
এছাড়া বড় ধরনের মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়েছিল নয়ন। প্রায় ১২ লাখ টাকার মাদক নয়নের কাছ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। সেসময় ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন ও দেশীয় অস্ত্রসহ নয়নসহ দুইজনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বরগুনা সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগী ইমামের বিরুদ্ধে। পরে তাদের জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর সম্প্রতি জামিনে বেরিয়ে আসে নয়ন বন্ড। সেবারও জামিন করায় দুই আইনজীবীর একজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু সূত্র জানায়, বিভিন্ন মামলায় নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী কারাগারে গেলে মোতালেব মিয়া ও হুমায়ন কবির পল্টু নামের দুই আইনজীবীর মাধ্যমে তারা শিগগিরই মুক্ত হয়ে যেতো।
এদিকে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর পক্ষের লোকজনের অভিযোগ, রিফাতের হত্যাকারী রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে। দেলোয়ার হোসেনের প্রশ্রয়েই এ দুই ভাই রিফাত হত্যার মতো অপরাধে দুঃসাহসী হয়ে ওঠে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে দেলোয়ার হোসেন দাবি করেছেন, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে এবং জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুনাম দেবনাথের ছত্রছায়ায় রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডসহ অন্যরা বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছে বলে তিনি শুনেছেন।
দেলোয়ার বলেন, আমাকে নিয়ে একটা নোংরা খেলা শুরু হয়েছে। কারণ রিফাত ফরাজী আমার আত্মীয়। ওদের সঙ্গে আমার কোনও রক্তের সম্পর্ক নেই। ওরা আমার ছেলেও না, ভাইও না, ভাইয়ের ছেলেও না, বোনের ছেলেও না, কিচ্ছু না। বিয়ের সূত্রে রিফাত আমার আত্মীয়। এমন অনেক আত্মীয় থাকে সবারই। তারা কেউ ভালো হয়, কেউ খারাপ হয়, কেউ চোর হয়, কেউ সন্ত্রাসী হয়, ডাকাত হয়। সুতরাং এখানে আমার ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার কারণটা কী, আমি ঠিক বুঝতে পারি না। আমি এদের কোনোদিন প্রশ্রয় দিইনি।