বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) দুই সড়ক পরিদর্শককে পিটিয়ে ফের আলোচনায় আসলেন বিকর্কিত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা ও কাউন্সিলর কালাম মোল্লা। নগরীর গড়িয়ারপাড় এলাকায় কাউন্সিলর নিজেই একটি বিতর্কিত জমিতে স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগের খবরে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট শাখার দুই কর্মকর্তা মাসুদ রানা ও রেজাউল কবির ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাকে নিবৃত করার চেষ্টা করেন।
কামাল মোল্লা এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উভয় কর্মকর্তাকে বেধম প্রহর করেন। এই ঘটনা এলাকাবাসী প্রত্যক্ষ করলেও কালাম মোল্লার পেশিশক্তির মুখে কেউ অগ্রসর হয়নি। পরে ওই দুই কর্মকর্তা ঘটনাস্থল থেকে কোন ক্রমে সরে এসে আত্মরক্ষা করেন। শুক্রবার সন্ধ্যার এই ঘটনার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে সিটি কর্পোরেশনের অপরাপর শীর্ষ কর্মকর্তা ক্ষুব্ধ হন। রাতে এ সংক্রান্তে সংশ্লিষ্ট বরিশাল মেট্রোপরিটন বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে মামলাটির বাদী মাসুদ রানা বরিশালটাইমসকে জানান- নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় সংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত জায়গায় কালাম মোল্লা বাণিজ্যিক একটি ভবন নির্মাণকাজ শুরু করেন।
তার দাবি ওই সম্পত্তি সিটি কর্পোরেশনের। এমনকি নির্মাণাধীণ ভবনটিও নকশা বর্হিভুত। সঙ্গত কারণে সিটি কর্পোরেশনের সচিব ইসরাইল তালুকদার বিষয়টি দেখতে উভয় কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠান।
মাসুদ রানা ও রেজাউল কবির ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর কাউন্সিলর কালাম মোল্লাকে ভবন নির্মাণে বিরত থাকার অনুরোধ রাখেন। পক্ষান্তরে কালাম মোল্লা ওই সম্পত্তি নিজের বলে দাবি করেন এবং নির্মাণশৈলী সিটি কর্পোরেশনের অস্বকৃতি জানান। এসময় তাকে সিটি কর্পোরেশনের সচিবের সাথে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ রাখা হলে সড়ক পরিদর্শক শাখার উভয় কর্মকর্তার ওপর চড়াও হন তিনি এবং একপর্যায়ে বেধড়ক পেটানো শুরু করেন।
এসময় ঘটনাস্থলে লোকেলোকারণ্য হয়ে যায়। কিন্তু কালাম মোল্লা কোনভাবেই শান্ত না হয়ে সিটি কর্পোরেশনের সচিব ইসরাইল তালুকদারকে নিয়ে ‘খিস্তিখেউর’ শুরু করেন। বেগতিক পরিস্থিতিতে সিটি কর্পোরেশনের দুই কর্মকর্তা জনতার ফাক দিয়ে কোনক্রমে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তারা দু’জনেই কমবেশি আহত হন। বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনের অপরাপর কর্মকর্তারা অবহিত হলে তোলপাড় শুরু হয়। ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
একটি সূত্র জানায়- রাজধানী ঢাকায় অবস্থানরত মেয়র সেরনিয়বাত সাদিক আব্দুল্লাহকে ঘটনার স্ববিস্তার অবহিত করার পর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। রাতে এ সংক্রান্তে বিমানবন্দর থানায় আওয়ামী লীগ নেতা ও কাউন্সিলর কালাম মোল্লার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। শনিবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি বলে জানা গেছে।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মাহাবুব উল আলম বরিশালটাইমসকে জানিয়েছেন- তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করছে- কালাম মোল্লা নিজ এলাকাতেই রয়েছেন।
এদিকে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে শনিবার একদল কর্মকর্তা গড়িয়ারপাড়ে অভিযান চালিয়ে ওই স্থাপনা ভেঙে দেয়।
এই প্রসঙ্গে কালাম মোল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে ওই সম্পত্তি নিজের বলে দাবি করেন এবং শুক্রবারের অপ্রীতিকর ঘটনা অস্বীকার করেন।
উল্লেখ্য যে- ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা কালাম মোল্লা এবং পার্শ্ববর্তী কাশিপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান লিটন মোল্লা এই দুই সহোদর নানা কারণে বিতর্কিত। স্থানীয় আ’লীগের নেতৃত্বে থাকা এই দুই সহোদর একাধারে জনপ্রতিনিধি ও পরিবহন সেক্টরের একাংশের নিয়ন্ত্রক।
পরিবহন খ্যাত থেকে ব্যাপক হারে চাঁদাবাজি ও ইতিপূর্বে এ ধরনের একাধিক ঘটনা জন্ম দিয়ে তারা খবরের শিরোনাম হয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনে নিলুপ্ততার কারণে তারা আরও বেপরোয়া হয়েছেন। সর্বশেষ বিসিসির সড়ক পরিদর্শককে পিটিয়ে এবার নিজ আঙিনায় আগুন ধরিয়ে দিলেন।’