বরগুনায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। নিহত দুইজনে এক সময় ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন বলে জানিয়েছেন উভয়ের স্বজনরা।
নয়ন বন্ডের মা শাহিদা বেগম বলেন, রিফাত শরীফ আমার ছেলে নয়নের বন্ধু ছিল। বন্ধুত্বের সুবাদে আমাদের বাসায় রিফাতের আসা-যাওয়া ছিল। আমি রিফাতকে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছি। আমি মিন্নির সঙ্গে নয়নকে বার বার সকল সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলেছি। কিন্তু নয়ন শোনেনি। নয়নের মনে যা চাইত ও তাই করত।
তিনি বলেন, নয়ন যদি আমার কথা শুনত তাহলে এমন নির্মম ঘটনা ঘটত না। একটি মেয়ের প্ররোচনায় পড়ে মায়ের কথা উপেক্ষা করার কারণে আজ দুই বন্ধু অকালে প্রাণ হারিয়ে এখন কবরবাসী।
শাহিদা বেগম বলেন, মিন্নির জন্য রিফাতকে নয়ন কুপিয়ে হত্যা করেছে। আবার পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নয়ন নিহত হওয়ায় রিফাত হত্যার বিচার হয়ে গেছে। এই দুই বন্ধুর অকালে মৃত্যুর জন্য কে দায়ী? কার ইন্ধনে ও অসততার কারণে এমন নির্মম ঘটনা ঘটেছে? কার জন্য দু’জন মায়ের বুক খালি হয়েছে তা আমি জানি। মিন্নির জন্য এসব হয়েছে।
নয়ন ও রিফাত শরীফের এক সময়ের বন্ধুত্বের কথা স্বীকার করে রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, অনেক আগে নয়ন ও রিফাতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। তবে নয়ন মাদক ব্যবসা ও সেবনে জড়িয়ে পড়ার পর নয়ন ও রিফাতকে আমি একসঙ্গে দেখিনি। নয়নের মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবনকে কেন্দ্র করে বন্ধুত্বের মধ্যে দূরত্ব বাড়লেও তাদের মধ্যে শত্রুতা হয়েছে এমনটাও আমি কখনো শুনিনি।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মামলার প্রধান সাক্ষী মিন্নিকে আটকের পর ১০ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়ায় মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, রিফাত হত্যা মামলার একমাত্র প্রতক্ষদর্শী ও প্রধান সাক্ষী নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে অনেকদিন ধরে পর্যবেক্ষণে রেখেছিলাম। মঙ্গলবার সকালে রিফাত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিন্নিকে তার বাবাসহ পুলিশ লাইনে নিয়ে এসে জবানবন্দি গ্রহণ ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য ও বিভিন্ন সময় পুলিশের কাছে আসা তথ্য সমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে পুলিশ প্রাথমিকভাবে এই হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে। তাই দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মঙ্গলবার রাত ৯টার সময় পুলিশ মিন্নিকে রিফাত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, এ মামলার তদন্তের স্বার্থে আদালতে হাজির করে মিন্নির রিমান্ডের আবেদন করবে পুলিশ।
এদিকে মিন্নিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, আপনারাতো সবাই ভিডিওতে দেখেছেন, মিন্নি তার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। আমার মেয়েকে পুলিশ অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করেছে। আমার অতটুকু মেয়ে কী করে খুন করতে পারে? ওর শরীরে কি একজন মানুষ খুন করার মতো শক্তি আছে?