অনলাইন ডেস্ক :
সুখের সংসার – হঠাৎ এক সড়ক দুর্ঘ’টনায় ভেঙে তছনছ মৌসুমি আক্তার মৌয়ের সুখের সংসার। অঝোরে কাঁদছিলেন তিনি। তার চোখের পানি অনবরত ঝরছিল। কা’ন্না করতে করতে মৌসুমি বলেন, আমি কিছুই চাই না। আমি আমা’র স্বামীকে চাই। আমি আমা’র সুখের সংসার চাই। কি হবে আমা’র আর আমা’র শিশু সন্তানের।
ঠিক এভাবেই কথাগুলো বলেছেন যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যানের চাপায় নি’হত ট্রাফিক পু’লিশের সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া মিকেলের স্ত্রী’ মৌসুমি মৌ। মৌসুমিও ট্রাফিক পু’লিশের সার্জেন্ট। হঠাৎ স্বামীর মৃ’ত্যুতে ভেঙে পড়েছেন মৌসুমি।
এদিকে, সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া মিকেলের মৃ’ত্যুতে নিজ বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শোক বার্তা দিয়ে আহাজারি করছেন তার বন্ধু ও সহকর্মীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোলাম কিবরিয়া নামে পু’লিশ মহলে পরিচিত থাকলেও মূলত বন্ধু-বান্ধবের কাছে মিকেল হিসেবে অ’ত্যাধিক পরিচিত ছিলেন তিনি। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে বাড়ি হলেও শহরে থাকতেন সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া। পু’লিশের দায়িত্ব পালন শেষে বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিতেন তিনি। সবসময় শান্ত ও হাসিখুশি ছিলেন কিবরিয়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। পড়াশোনা শেষে ২০১৫ সালে পু’লিশে যোগ দেন। পু’লিশে যোগ দেয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন তিনি। বরিশালে কোনো বন্ধু-বান্ধব গেলে আপ্যায়ন না করে ছাড়তেন না কিবরিয়া। এসব কারণে বন্ধুমহল ও শিক্ষকমহলে জনপ্রিয় ছিলেন সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া।
জানা যায়, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজে’লার সুবিদখালী বন্দরের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস আলী সরদারের বড় ছেলে গোলাম কিবরিয়া মিকেল। তার ছোট এক বোন রয়েছে। তিন বছর আগে বিয়ে করেন কিবরিয়া। মিকেলের স্ত্রী’ পু’লিশের সার্জেন্ট মৌসুমি আক্তার মৌ বরিশালে কর্ম’রত আছেন। তাদের দুই বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগে পটুয়াখালী সরকারি কলেজে পড়ালেখা করেছেন কিবরিয়া।
সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়ার অকাল মৃ’ত্যুতে পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারুক হোসেন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমা’র স্নেহের ছাত্র মিকেল পু’লিশ সার্জেন্ট বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে কর্ম’রত অবস্থায় কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মঙ্গলবার সকালে মা’রা গেছেন। দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্ত নসিব করেন।’
মিকেলের বন্ধু বাপ্পী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বন্ধু, তোমা’র অকালে চলে যাওয়া আম’রা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। আল্লাহ তোমাকে জান্নাত দান করুক।’
মিকেলের বন্ধু এসডি সুমন লিখেছেন, ‘প্রিয় সতীর্থ পু’লিশ সার্জেন্ট মিকেল সোমবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দায়িত্বরত অবস্থায় কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় গুরুতর আ’হত হয়ে মৃ’ত্যুবরণ করেছে। তোর চলে যাওয়া মানতে পারছি না বন্ধু। ভালো থাকিস পরপারে, তোর জন্য দোয়া রইলো।’
সাখাওয়াত সোহেল নামে আরেক বন্ধু লিখেছেন, ‘কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় গুরুতর আ’হত হয়ে সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। তার মৃ’ত্যুতে গভীরভাবে শোক জানাচ্ছি আম’রা। মহান আল্লাহ যেন তাকে জান্নাত নসিব করেন।’
গতকাল সোমবার সকাল থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের কর্নকাঠী জিরো পয়েন্ট এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পটুয়াখালীগামী যমুনা গ্রুপের বেপরোয়া গতির একটি কাভার্ডভ্যানকে (ঢাকা-মেট্রো-উ-১২-২০৫৪) থামা’র সংকেত দেন সার্জেন্ট কিবরিয়া।
কাভার্ডভ্যানটি ট্রাফিকের সংকেত অমান্য করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সার্জেন্ট কিবরিয়া একটি মোটরসাইকেলে ধাওয়া করে কাভার্ডভ্যানটির সামনে গিয়ে ফের তাকে থামা’র সংকেত দেন। কাভার্ডভ্যানচালক জলিল মিয়া এ সময় মোটরসাইকেল আরোহী সার্জেন্ট কিবরিয়াকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চাপা দিয়ে পালিয়ে যান। এতে তার দুই পায়ের চারটি স্থান ভেঙে যায় এবং মূত্রথলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
স্থানীয়রা তাকে উ’দ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠির নলছিটি থানা পু’লিশ ধাওয়া করে চালক জলিল সিকদারসহ কাভার্ডভ্যানটি আ’টক করে।
কিবরিয়ার অবস্থার অবনতি হওয়ায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকায় আনা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কিবরিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পরপরই তাকে জরুরি বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। মঙ্গলবার সকালে আইসিইউতে মা’রা যান গোলাম কিবরিয়া।