চোখের সামনে নিজের স্বামীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে খুন করা হলো। শত চেষ্টা করেও স্বামীকে বাঁচানো গেল না ঘাতকদের হাত থেকে। কেউ এগিয়ে এলো না সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে। গত বুধবার (২৬ জুন) বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে দিনদুপুরে রিফাত শরীফ নামে এক যুবককে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড (২৫) পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
এমন খবরে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেছেন রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন স্বামীহারা মিন্নি।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) ভোর সোয়া ৪টার দিকে বরগুনা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ঘাতক নয়ন বন্ড।
এর কয়েক ঘণ্টা পরই বাবার কাছ থেকে প্রথমে খবরটি জানতে পারেন মিন্নি। এসময় নয়ন বন্ড নিহতে স্বস্তি প্রকাশ করে মিন্নি সাংবাদিকদের বলেন, ‘শোকে বিধ্বস্ত আমি, ঠিক এমন একটা খবরের অপেক্ষায় ছিলাম। মঙ্গলবার সকালে বাবা এসে বললেন- পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে নয়ন বন্ড। এ খবর শুনেই সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করেছি। কারণ বিচারের জন্য আদালতে দৌড়াতে হলো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। ওরা ধরা পড়বে কি পড়বে না খুব শঙ্কায় ছিলাম। বিচার হবে কি হবে না তা নিয়ে ছিল আতঙ্ক। নয়নের ক্রসফায়ারের মধ্য দিয়ে সব শঙ্কা এবং আতঙ্ক দূর হয়েছে।’
মিন্নির চাওয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্য আসামিদেরও যেন উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হয়।
এদিকে ঘাতক নয়ন বন্ড নিহতের খবরে স্বস্তি ফিরেছে মিন্নির পরিবারের সদস্যদের মাঝেও।
উল্লেখ্য, গত বুধবার সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে রিফাতকে কুপিয়ে গুরুত্বর আহত করে অস্ত্রধারী দুই সন্ত্রাসী। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ও পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ওইদিনই বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে চিকিৎসকরা রিফাতকে মৃত ঘোষণা করেন।
রিফাত হত্যার ঘটনার ভিডিও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রকাশিত ভিডিওটিতে দেখা যায়, সন্ত্রাসী দুই যুবক ধারালো দা দিয়ে রিফাতকে কোপাচ্ছে। পাশেই থাকা রিফাতের স্ত্রী মিন্নি সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
ভিডিওতে যে দুই সন্ত্রাসীকে কুপিয়ে জখম করতে দেখা গেছে তাদের একজনের নাম নয়ন বন্ড ও অন্যজন রিফাত ফরাজী। উভয়েই স্থানীয়ভাবে ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। এর আগেও তারা নানা অপকর্মের কারণে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে।
এ ঘটনায় পর দিন নিহত রিফাত শরিফের বাবা দুলাল শরিফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।