বরিশালের উজিরপুরে সাবেক সেনা সদস্য এক পল্লী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী চার সন্তানের জননীকে (৩২) চিকিৎসার নামে অচেতন করে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণের ফলে ওই নারী বর্তমানে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে দাবি করেছেন তার শ্বাশুড়িসহ অন্যান্য স্বজনরা। ঘটনাটি নিয়ে ওই এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযুক্ত পল্লী চিকিৎসকের নাম মো: মিজানুর রহমান মিয়া (৪৫)। সে উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের দক্ষিন সাতলা গ্রামের আমজেদ মিয়ার ছেলে এবং ধর্ষিতা গৃহবধূর খালাতো ভাসুর। স্থানীয় নয়াকান্দি বাজারের পূর্ব পার্শ্বে জান্নাত মেডিকেল হল নামে তার একটি ফার্মেসি রয়েছে। সেখানে প্রায় ২ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের রোগীদের তিনি চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন।
ধর্ষিতা গৃহবধূর শাশুড়ি অভিযোগ করে বলেন, তার বড় ছেলে মিন্টু ফকির মাত্র ২ বছর আগে পরিবারের জন্য অর্থের যোগান দিতে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে রেখে সৌদি আরবে পাড়ি জমায়। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো এরই মধ্যে গত এক মাস মধ্যে প্রবাসী ছেলে মিন্টুর স্ত্রী বেশ কয়েকবার অসুস্থ হলে অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি পরিবারের কাছে ধরা পড়ে। এরপর পুত্রবধূর কাছে জানতে চাইলে পল্লী চিকিৎসক মিজানের ধর্ষণে সে (গৃহবধূ) অন্তঃসত্ত্বার হওয়ার কথা স্বীকার করেন।
ওই গৃহবধূর দেবর রাকিবের স্ত্রী বলেন, অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি পরিবারের সবার কাছে ধরা পড়লে ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে ওই গৃহবধূর ওপর এক প্রকার চাপ সৃষ্টি করা হয়। তখন সে (ধর্ষিতা) জানায় প্রায় ছয় মাস আগে জান্নাত মেডিকেল হলে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন ওই গৃহবধূ।
ওই সময় শরীর ক্লান্ত বলে চিকিৎসার নামে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করে চার সন্তানের জনক লম্পট মিজানুর রহমান। সেই সাথে ধর্ষণের নগ্ন ভিডিও মিজান তার মোবাইলে ধারণ করে রাখেন। এরপর সেই নগ্ন ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে দীর্ঘ ৬ মাস ধরে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ওই প্রবাসীর স্ত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণ করে মিজান। ফলে ওই গৃহবধূ পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন।
তিনি আরও বলেন, লম্পট মিজান ওই ধর্ষিতা গৃহবধূর স্বামীর আপন খালাতো ভাই এবং সম্পর্কে তার ভাসুর হন। অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি ওই গৃহবধূ ধর্ষক ভাসুর মিজানকে জানালে বেশ কয়েকবার গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টা করেন। অবশেষে গত ২৯ জুন গৃহবধূকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা হাসপাতালে গর্ভপাত ঘটানোর জন্য ভর্তি করেন মিজান। কিন্তু ওই হাসপাতালে চিকিৎসক গর্ভপাত ঘটাতে অস্বীকৃতি জানালে সেখান থেকে ওই গৃহবধূকে নিয়ে অন্যত্র চলে যায় মিজান।
গৃহবধূর দেবর রাকিব বলেন, ধর্ষক মিজান মামলার ভয়ে অন্তঃসত্ত্বা ওই গৃহবধূকে বর্তমানে তার কোনো স্বজনদের বাড়িতে আটকে রেখেছে। এমনকি কৌশলে ওই গৃহবধূর ৩ সন্তানকেও সেখানে নিয়ে রাখা হয়েছে।
ওই গৃহবধূর শ্বাশুড়ি আরও বলেন, ‘মিজান আমার বোনের ছেলে। কিন্তু সে খুব দূর্ধর্ষ ডাকাত প্রকৃতির লোক। সেনাবাহিনীর চাকরিতে যাওয়ার পূর্বে ৮০ দশকে সে এলাকার একজন চিহ্নিত ডাকাত ছিলো। মিজানের ভয়ে ও লোকলজ্জায় প্রথমে তারা মুখ খুলতে সাহস পায়নি। কিন্তু বিষয়টি এখন অনেক দূর গড়িয়ে এলাকায় বদনাম ছড়িয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিজান ওই গৃহবধূ ও তার সন্তানদের আটকে রেখে আমাদেরকে থানায় মামলা না করার জন্য হুমকি দিচ্ছে। আমরা প্রশাসনের সহযোগীতা ও লম্পট মিজানের বিচার চাই।’
এদিকে অভিযুক্ত অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও পল্লী চিকিৎসক মোঃ মিজানুর রহমান মিয়া সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি এর আগে যশোর ক্যান্টনমেন্ট মেডিকেল কোরের অপারেশন থিয়েটার সহযোগী একজন সেনা সদস্য ছিলেন। মাত্র ২ বছর আগে অবসর গ্রহণ করেছি। আমার খালাতো ভাই রাকিবের নিকট ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা পাওনা। তাই টাকা না দেওয়ার জন্য ভাইয়ের স্ত্রীকে দিয়ে এ ধরনের বদনাম ছড়াচ্ছে।’
উজিরপুর মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল জানান, ‘এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’