মে ১৪, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জেলার সংবাদ বরিশাল

স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়ে ৪ ঘণ্টায় ঢাকা আসছে ঝালকাঠির পেয়ারা

ঝালকাঠি প্রতিনিধি ::: ঝালকাঠি সদর উপজেলার কির্ত্তিপাশা ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামের কৃষক পঙ্কজ বড়াল তিন বিঘা জমি লিজ নিয়ে সেখানে কাঁদি কেটে বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করেছেন। সেখানে পেয়ারা, আমড়া, লেবু, কলা, কচু, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, পাটশাক, পুঁই শাক, কুমড়াসহ বিভিন্ন ধরনের আবাদ করেন তিনি।

রাসায়নিক ও জৈব সার দিয়ে আবাদি কৃষিতেও বেশ ভালো ফলন পেয়েছেন তিনি। এখন পেয়ারা ও বর্ষাকালীন সবজির ভরা মৌসুম। প্রতিদিন সকালে পেয়ারা বাগান থেকে তিন/চার মণ পেয়ারা সংগ্রহ করেন তিনি। সকাল ৯টার মধ্যেই ঝালকাঠি পেয়ারার সবচেয়ে বড় মোকাম ভীমরুলী ভাসমান হাটে নৌকায় বিক্রির জন্য নিয়ে যান। সেখানে পাইকারদের কাছে প্রতিকেজি পেয়ারা ২০ টাকা দরে বিক্রি করেন। আগের চেয়ে বেশি দামে পেয়ারা বিক্রি করতে পেরে তিনি বেজায় খুশি।

পাইকার আবুল বাশার শুক্রবার সকালে পঙ্কজ বড়ালসহ অন্যান্য কৃষকদের কাছ থেকে পেয়ারা কিনে প্যাকেজ করে দুপুর ১২টার দিকে এক ট্রাক পেয়ারা ঢাকায় পাঠান। ট্রাকটি দুপুর ৩টার মধ্যে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পৌঁছে যায়। ঢাকার আড়তদারদের মাধ্যমে বিকেলের মধ্যেই তা খুচরা ব্যবসায়ীদের হাতে পৌঁছে যায়। সেদিনই তাজা পেয়ারার স্বাদ নিতে পারছেন রাজধানীবাসী।

পদ্মা সেতুর সুবাদে কৃষক পঙ্কজ বড়াল ন্যায্য দামে পাইকার আবুল বাশারের কাছে পেয়ারা বিক্রি করতে পারছেন। আবার পাইকাররাও একটু বেশি দামে পেয়ারা কিনলেও ৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকায় পৌঁছাতে পেরে তাজা পেয়ারা ভালো দামে আড়তে বিক্রি করতে পারছেন। খুচরা বিক্রেতারাও ক্রেতাদের কাছে তাজা পেয়ারা পৌঁছে দিয়ে প্রতি কেজি ৫০ টাকা করে রাখছেন। শুধু আবুল বাশারই নন অনেক আড়তদারের পেয়ারার ট্রাক প্রতিদিন দুপুরে ৩টার মধ্যেই ঢাকা শহরে পৌঁছে যাচ্ছে। গত মৌসুম পর্যন্ত বাগান থেকে তোলার পরদিন এখানকার পেয়ারা পৌঁছাতো রাজধানীতে। পেয়ারা চাষিরাও প্রতিকেজি ১০ টাকা বা তার কমেও পাইকারদের কাছে পেয়ারা বিক্রি করতেন।

পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলে কৃষিপণ্যের প্রথম সুফলভোগী হলেন পেয়ারা চাষিরা। ঝালকাঠি সদর উপজেলা, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি ও বরিশালের বানারিপাড়া উপজেলার ৫৫ গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছে মিষ্টি পেয়ারার রাজ্য। প্রতিবছর আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস এলেই পেয়ারার কারণে পাল্টে যায় এ অঞ্চলের চিত্র। পেয়ারা বেচাবিক্রির জন্য ওইসব এলাকার খালে রয়েছে ভাসমান বাজার। প্রতিদিন শত শত নৌকায় চাষিরা আসে পেয়ারা বিক্রি করতে। ট্রাক ও বড় বড় ট্রলার নিয়ে আসেন পাইকাররা পেয়ারা কিনতে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় ফেরিঘাটের বিড়ম্বনা না থাকায় পাইকার ও পর্যটকদের আগমন প্রতিবছরের চেয়ে এ বছর বেশি। ফলে এ অঞ্চলের শুধু পেয়ারাই নয় অন্যান্য কৃষিপণ্যও ঢাকাসহ সারাদেশে অল্প সময়ে সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে।

ঝালকাঠি শহর থেকে কীর্তিপাশা হয়ে সরু সড়ক ধরে এগিয়ে গেলেই বিখ্যাত ভীমরুলী বাজার। খালের পাড় ঘেঁষে বিখ্যাত ভাসমান বাজারে যেতে যেতে চোখ প্রশান্ত করবে চিরায়ত গ্রাম-বাংলার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য। যদিও এক সময়ের মেঠোপথ এখন পিচঢালা পাকা সড়ক। ঝালকাঠি শহর থেকেই মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা ও লেগুনায় করে মাত্র ৩০ মিনিটেই পৌঁছে যায় ভীমরুলী বাজারে।

প্রাকৃতিক অপূর্ব দৃশ্য ও ভাসমান বাজার উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণ পিপাসুরা। শুধু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই নয়, বাংলাদেশে প্রবাসী বিদেশি অতিথিরাও আসেন উপভোগ করতে।

স্থানীয়রা জানান, এ অঞ্চলের ‘সবচেয়ে বড়’ ভাসমান হাট সদর উপজেলার ভীমরুলীতে, যা সারাদেশেই অনন্য। এছাড়াও পাশের পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির (নেছারাবাদ) আটঘর, কুড়িয়ানা, আতা, ঝালকাঠির মাদ্রা। এসবই পিরোজপুর সন্ধ্যা নদী থেকে বয়ে আসা একই খাল পাড়ে অবস্থিত। পেয়ারার রাজ্য নামে সারাদেশে পরিচিত এখানকার আঁকাবাঁকা খালের দুই পাড়ে হাজার হাজার একর জমিতে রয়েছে পেয়ারা বাগান।

তাই ভীমরুলী পেয়ারার ভাসমান হাটে পাকা পেয়ারার সমারোহ এখন সর্বত্রই ম ম গন্ধ। এপ্রিল ও মে মাসের শুরুতে প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হওয়ায় এ বছর ফলন বিলম্ব হয়েছে। কয়েকদিন ধরে বাজারে পেয়ারা আসতে শুরু করেছে।

ভীমরুলী এলাকার পেয়ারা চাষি গৌতম মিস্ত্রি বলেন, আমরা কয়েক পুরুষ পেয়ারা চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করি। প্রতিবছরের চেয়ে এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এখন আমরাও পেয়ারার ন্যায্য দাম পাচ্ছি। আগের পাইকারদের দ্বারে দ্বারে ন্যায্য দামের আশায় ঘুরতে হতো। আর এখন পাইকাররাই আগ্রহী হয়ে আমাদের ডেকে পেয়ারা কিনছেন।

পেয়ারার রাজ্য ও ভাসমান হাট দুই শতাধিক বছরের ঐতিহ্য বলে জানান চাষিরা। তাদের তথ্যমতে, পেয়ারার ভরা মৌসুম চলছে। পেয়ারা বেচাকেনার পাশাপাশি যথারীতি সারাদেশ থেকে পর্যটকরা আসছেন পেয়ারা বাগান ভ্রমণে। ফলে আগামী তিন মাস পেয়ারা মৌসুমে দারুণ চাঙ্গা থাকবে এখানকার অর্থনীতি।

মাহমুদকাঠি গ্রামের বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সী আবুল বাশার বলেন, তিনি স্বাধীনতার পরপরই ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে পেয়ারা ব্যবসা করছেন। সে হিসেবে তাঁর ব্যবসার বয়স অর্ধশত বছর পেরিয়েছে। পাইকারি দরে পেয়ারা কিনে তিনি ঢাকায় পাঠান।

তিনি বলেন, ৬০-৭০ দশকে ঢাকায় পেয়ারা পাঠানো হত লঞ্চে। আশির দশকে ঝালকাঠি থেকে স্টিমারে তুলে দেওয়া হত পেয়ারা। নব্বই দশকে বানারীপাড়ার জম্বুদ্বীপ থেকে প্রতিদিন দু-চারটি পিকআপে ঢাকায় পেয়ারা পাঠানো শুরু হয়। পরে ২০১৬ সালে মিনিট্রাক এবং ২০১৯ সাল থেকে বড় ট্রাকের ব্যবহার শুরু হয়।

এখানকার আড়তদারদের মতে, লঞ্চ-ট্রাক যে পথেই পাঠানো হোক, ঢাকার ভোক্তাদের কাছে পেয়ারা পৌঁছাত একদিন পরে। দ্রুত পচনশীল পণ্য হওয়ায় এ সময়ের মধ্যে পেয়ারার রং-স্বাদ নষ্ট হতো। পেকে পচে যেত অর্ধেক পেয়ারা। এতে চাষিরা ন্যায্য দাম পেতেন না। পদ্মা সেতুর কল্যাণে এখন সকালে গাছ থেকে সংগৃহীত পেয়ারা দুপুরের আগেই পৌঁছে যাচ্ছে ঢাকায়। এতে রং-স্বাদ দুটিই থাকছে অটুট।

পেয়ারার পাইকারি বেচাকেনার অন্যতম মোকাম ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্তিপাশা ইউনিয়নের ভীমরুলী ভাসমান বাজার। পেয়ারার মূল রাজ্য এই গ্রামটি। ঢাকার ব্যবসায়ী অপূর্ব মিস্ত্রী ভীমরুলীতে এসেছেন পেয়ারা কিনতে।

সম্পর্কিত পোস্ট

সাতলায় বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে আ’লীগ নেতা মিজানকে অর্থের বিনিময়ে দলীয় সনদপত্র প্রদান করার অভিযোগ

banglarmukh official

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম পুলিশের বসত ঘরে ভাংচুর

banglarmukh official

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার জানাজায় অংশ নিতে মাগুরায় মামুনুল-হাসনাত-সারজিস

banglarmukh official

বরিশালে দুর্ঘটনায় নিহত ২

banglarmukh official