অনলাইন ডেস্ক : মৌসুমের এই সময়ে ইলিশে সয়লাবের চিত্র ফুটে ওঠে দক্ষিণের সব থেকে বড় ইলিশ মোকাম বরিশালের পোর্ট রোডের বেসরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। কিন্তু সে তুলনায় এবারের মৌসুমের শুরু থেকেই এ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশের আকাল দেখা দিয়েছে। যতটুকু আসছে তাও আশপাশের নদ-নদী থেকে আরোহণকৃত স্বল্প পরিমাণের ইলিশ। যে কারনে পাইকারী ও খুচরা বাজাওে ইলিশের দাম চড়া।
কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পাওয়া এবং সাগরে সব ধরনের মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করছেন। যদিও মৎস্য বিভাগ বলছে বর্তমানে আবহাওয়া ইলিশ শিকারের জন্য অনুকূলে রয়েছে, যে আবহাওয়ায় নদ-নদীতে ইলিশের উপস্থিতি বেড়ে যায়। ফলে স্থানীয় বাজারগুলোর বর্তমান অবস্থা অল্প সময়ের মধ্যেই পরিবর্তন ঘটবে। মৎস্য শ্রমিকরা জানান, প্রতিবছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪ মাস প্রচুর ইলিশ পাওয়া যায়।
ফলে এ সময়টাতে শত শত মণ ইলিশে প্রতিদিনই কর্মব্যস্ত থাকে অবতরণ কেন্দ্রটি। কিন্তু এবার তার ভিন্ন চিত্র। নদ-নদীতে এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মেলেনি। খুচরা ব্যবসায়ী আলম জানান, গত বছর এমন সময়ে ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন শ্রমিক-ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখন যে ইলিশ আসছে তাতে সকাল ১০টার পরই কর্মব্যস্ততা ঝিমিয়ে পড়ছে। পাইকারি ব্যবসায়ী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, যেখানে হাজার মণের কাছাকাছি ইলিশ আশা করা হয় বরিশালের মোকামে সেখানে অভ্যন্তরীণ নদী এবং সাগর মোহনায় জেলেদের জালে ধরা পড়া ৫০ থেকে ৬০ মণের বেশি ইলিশ আসছে না। জেলেরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে নদী-সাগরে আগের মতো মাছ শিকার করতে পারছেন না তারা।
জাটকা শিকার বন্ধে প্রতি বছর ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা থাকছে। আবার অভয়াশ্রমে ২ মাস এবং মা ইলিশের ডিম নিরাপদ প্রজননের জন্য ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। তার ওপর এবার নতুন করে সমুদ্রে ৬৫ দিনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ঊুধবার (০৩ জুলাই) নগরীর ইলিশ মোকামে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় ৬শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম (এলসি) ওজনের ইলিশ মণপ্রতি ৪৩ হাজার টাকায়, এর নীচে ভেলকা সাইজ ৩০ হাজার টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ ৫৫ হাজার, দেড়কেজির ইলিশ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দরে মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে। সবথেকে ছোট যেটি স্থানীয় ভাষায় গোটলা নামে পরিচিত সেটি প্রতিমণ মাত্র ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
বরিশাল জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা (হিলসা) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, কয়েকদিন আগেও প্রচার গরম ও নদীতে পানি কম ছিলো। ফলে সাগরের মাছ নদীতে তেমনভাবে আসতে পারেনি। তবে গত দু’দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। নদীতে পানির পরিমাণও বাড়ছে। তাই এখনই সময় নদ-নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ২/১ দিনের মধ্যেই অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতেও প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে। তখন জেলে, আড়তদার ও শ্রমিকদের যেমন কর্মব্যস্ততা বাড়বে, তেমনি মুখেও হাসি ফুটবে। এ বছরও প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আগামী ২৩ জুলাই (মঙ্গলবার) সাগরে সব ধরনের মাছ শিকারের ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে। এরপর ইলিশের কোনো সংকট থাকবে না।