আর একদির পরেই মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আযহা। ত্যাগের মহিমায় আর ধর্মীয় অনুশাসনের মন্ত্র ধারণ করে কোটি মানুষ ফিরছে দক্ষিণাঞ্চলে। ঈদ যাত্রায় বিগত বছরে লঞ্চে আসা যাত্রীরা নগরী পার হতে নানান ধরণের হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতেন। কিন্তু এ বছর ক্ষুদ্র পরিবহনের নৈরাজ্যে যাত্রী হয়রানির শিকার হচ্ছেন না কেউ। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মৌলিক চিন্তায় নিমিষেই দূর হয়েছে সেসব ভোগান্তি। শান্তিতে বাড়ি ফিরছেন মানুষ। তাও আবার বিনামূল্যের বাস সার্ভিসে। মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সৌজন্যে এই ফ্রি বাস সার্ভিস চালু হয়েছে বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে। শুধু ফ্রি বাস সার্ভিস চালু করেই দায়িত্ব শেষ করেননি মেয়র। সেসবের তদারকি করে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন জনপ্রিয় এই নগরপিতা। নগর ভবন সূত্রে জানা গেছে, ২০টিরও বেশি বাস এই সেবা প্রদান করছেন। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের এমন অবিস্মরণীয় সেবা পেয়ে খুশি গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। মেয়রের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন আনন্দ পাগল ঘরমুখোরা।
ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে বরিশালে আসা সিয়ামুল হায়াত বলেন, পূর্বের ঈদে বরিশাল নদী বন্দরে নেমে আলফা, অটো বা সিএনজিতে করে রুপাতলী যেতে কমপক্ষে জনপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা লাগতো। তার ওপর গভীর রাতে যাতায়াতে নানান আতঙ্ক থাকতো। কিন্তু সিটি করপোরেশনর ফ্রি বাস সার্ভিসের কারণে কোন ভাড়াই গুণতে হয়নি না। আবার পথের নিরাপত্তা নিয়েও কোনো দুচিন্তা নেই। এই যাত্রী বলেন, এমন যোগ্য মেয়র বাংলাদেশের কোন নগরীতে আছে বলে আমার জানা নেই।
ঢাক-ঢোল পেটানো ছাড়া তার এই যে নিরব জনসেবা-আমাকে বিমোহিত করেছে। আমি নগরীর বাসিন্দা নয়। তারপরও দোয়া করি সাদিক আব্দুল্লাহর এই আদর্শ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ুক। আয়শা সিদ্দিকা অপি নামে আরেক যাত্রী বলেন, প্রথমবারের মতো বরিশাল সিটি করপোরেশন এমন একটি উদ্যোগ নিয়েছে। ফ্রি বাস সার্ভিসের কারণে যাত্রীরা অন্য পরিবহন চালকদের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেলো। তিনি বলেন, এমন নগর পিতাই মানুষ চায়। সরেজমিনে দেখা গেছে, রাত ১২টা থেকেই লঞ্চঘাট এলাকায় নিজে মোটর সাইকেল চালিয়ে এসে যাত্রীদের সাথে কথা বলছেন সিটি মেয়র সাদিক। কুশল বিনিময়, যাত্রাপথে কোন বিড়ম্বনা আছে কিনা, হয়রানির শিকার হচ্ছেন কিনা-এমনসব খোঁজখবরও নেন সাদিক। শুধু লঞ্চঘাট নয় নথুল্লাবাদ ও রুপাতলীতেও গিয়ে যাত্রীদের সাথে কথা বলেন তিনি।
জানা গেছে, এবারের ঈদে সরকারি ও বেসরকারি ২৬টি নৌ-যান ঈদ স্পেশাল সেবা প্রদান করছেন। প্রতি ঘন্টায় বরিশাল নদী বন্দরে এসে ভিড়ছে যাত্রীবাহি নৌযান। যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে নৌপুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, র্যাব ও সাদা পোশাকের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী টহল দিচ্ছে। দায়িত্ব পালন করছে বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রয়েছে সিভিল সার্জণের উদ্যোগে মেডিকেল ক্যাম্প। ওদিকে যাত্রীদের নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সবগুলো ইউনিট দফায় দফায় সমন্বয় সভা করে গৃহিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ করছে। আর কড়া হুশিয়ারি দিয়েছেন সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ। তিনি আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, যাত্রী নিয়ে প্রতিযোগীতা করলে সেসব লঞ্চকে বরিশাল নৌ-বন্দরে বেধে রাখা হবে। মেয়র জানান, ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ আমার মেহমান। কারও অবহেলায় তাদের বিড়ম্বণা বা ক্ষতি হবে তা বরদাস্ত করা হবে না।
ঈদ আনন্দের। আনন্দের ঈদ সড়ক পথে বা নৌপথে অসুস্থ প্রতিযোগীতায় ম্লান হতে দেওয়া হবে না। এজন্য মেয়র বাস মালিক সমিতির নেতাদেরও নির্দেশনা দিয়েছেন। জানা গেছে, ঈদ আনন্দে বাড়ি ফেরা এবং ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরার সময় সবার নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে সারাদিন ও সারারাত তিনি নগরী ঘুরে বেড়াবেন।