পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের সিরাজপুর গ্রামে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ইভা (১১) নামের এক ছাত্রীকে রহস্যজনক ঘটনায় ঘর থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার (১৪ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টার দিকে পটুয়াখালীর মহিপুর থানার সেরাজপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে ঘটনার পর অন্তত ঘন্টাখানেক শিশুটির সৎ মা সালমা বেগম (২৫) সংজ্ঞাহীন ছিলেন। স্থানীয় মানুষ ডাকাতদের দুর্বৃত্তপনার সন্দেহ করলেও পুলিশ মানতে নারাজ।
এ ঘটনায় পুলিশ শিশুকন্যার সৎ মা সালমা বেগমকে রাতেই আটক করে বুধবার দুপুর পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোন কূল কিনারা পাচ্ছে না।
নিহত শিশুকন্যার চাচা মো. ইউসুফ ঘরামী এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত তার ভাই ইসমাইল ঘরামীর ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এসময় মা সালামা বেগম দৌড়ে পাশের বাড়ি গিয়ে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার দিয়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। ডাকচিৎকারে আসেপাশের লোকজন এসে ঘরে ছোট্ট শিশুকে দেখতে পেলেও ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ইভাকে খুঁজে পাচ্ছিলনা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ঘরের দোতলায় বিবস্ত্র অবস্থায় শিশুটিকে পাওয়া যায়। এসময় তার শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গ দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে দেখে দ্রুত উদ্ধারকারী লোকজন কুয়াকাটা ২০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যান।
সেখানে হাসপাতালের চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। সেরাজপুর গ্রামের আবুল কালাম হাসপাতাল থেকে এ প্রতিবেদককে বলেন, ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা ধারনা করছি। এলাকার মানুষের ডাকাত আতঙ্কে ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
শিশুটির ফুফু পারভীন আক্তার জানায়, দুর্বৃত্তরা যখন ঘরে ঢুকে তখন সালমা বেগম ঘুমানে ছিলো। ছোট বাচ্চা দুইটিও ঘুমানো ছিলো। দুর্বৃত্তরা বাচ্চা দুইটির মুখে টেপ লাগিয়ে দেয়। ততক্ষণে সালমা বেগম কিছুই টের পায়নি। যখন তাকে ধর্ষণ করতে আসে তখন সে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে পাশের বাড়ি চলে। কিন্তু পাশের বাড়িতেও কোন পুরুষ লোকজন ছিলো না।
ততক্ষণে মসজিদের নামাজ শেষ হলে ডাকাত ডাকাত চিৎকার শুরু হয়। পরবর্তীতে এলাকার লোকজন বাড়িতে গিয়ে ছাত্রীকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. আরিফুজ্জামান জানান, শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই মারা গেছে। তবে প্রাথমিকভাবে তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে পারেননি।
এদিকে, এ ঘটনার খরবর পেয়ে ওই এলাকার লোকজন রাত ৯টার দিকে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার শুরু করে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের গ্রামগুলোতেও। ঘটনার সময় নিহত শিশুটির বাবা ইসমাইল ঘটরামী ঘরে ছিলেন না।
ওই এলাকার ইউপি সদস্য মো. মামুন হাওলাদার বলেন, হাসপাতালে এসে আমরা শিশুটির গোপনাঙ্গ থেকে প্রচুর রক্ষক্ষরণ হতে দেখেছি।
মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান শিশুটি নিহতের খবর নিশ্চিত করে বলেন, এলাকায় ডাকাতের গুজব রয়েছে। তবে কি কারণে হত্যাকান্ডর ঘটনা ঘটেছে এটি এখনও স্পষ্ট নয়। শিশুটি ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা নিরীক্ষার আগে বলা যাবেনা। লাশ পটুয়াখালী মর্গে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া শিশুটির মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও স্পষ্ট হওয়া যাচ্ছে না। হত্যা মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে।”