কাজী সাইফুলঃ
টিকেট কেটে জাদুঘরটির ভিতরে প্রবেশ করতেই হতাশ হলাম। কি আছে এখানে! দেখায় মনের তৃপ্তি কি পূরণ হবে? উপমহাদেশের অবিসংবাদিত মহান নেতা শের-ই-বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাঙালি কূটনীতিক হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন। রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের নিকট শেরে বাংলা (বাংলার বাঘ) এবং ‘হক সাহেব’ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি রাজনৈতিক অনেক পদ অলংকৃত করেছেন। তার মধ্যে কলকাতার মেয়র (১৯৩৫), অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী (১৯৩৭-১৯৪৩), পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী (১৯৫৪), পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী (১৯৫৫), পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর (১৯৫৬-১৯৫৮) অন্যতম। যুক্তফ্রন্ট গঠনে প্রধান নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন।
দীর্ঘ কর্মময় জীবনের একটি নির্দিষ্ট সময় তিনি বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার চাখারে তাঁর পৈতৃক বাড়িতে কাটান। বাংলার মূখ্য মন্ত্রী ও বাংলার বাঘ হিসেবে পরিচিত শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হকের পরিচিতি, তার ইতিহাস ও ব্যবহারিক নিদর্শন গুলো ভবিষ্যত প্রজম্মের কাছে তুলে ধরার নিমিত্তে তাঁর স্মৃতি বিজরিত চাখারে শের-ই-বাংলা স্মৃতী জাদুঘর নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৭৮ সালের ৩০শে জানুয়ারী তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শের বাংলা’র বাসভবন পরিদর্শেনান্তে চাখার সরকারী ফজলুল হক কলেজ (চাখার কলেজ উদ্বোধন) মাঠ প্রাঙ্গনে এক বিশাল জনসভায় শের-ই-বাংলা স্মৃতি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার ঘোষনা করেন।
১৯৮২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে মোট ২৭ শতক জমির উপর শের-ই-বাংলা স্মৃতি জাদুঘর ভবনের নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ শুরু করা হয়। আয়তকার ভূমি পরিকল্পনায় ৪৩ মিটার দীর্ঘ এবং ১৪.৬০ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট এ জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে জাদুঘরের এ জমিটি শের-ই-বাংলার নিজস্ব বসতভিটার একাংশ। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে জনবল নিয়োগ দিয়ে জাদুঘরটি কার্যক্রম শুরু করে। মূলত তার বিরল আলোকচিত্র, ব্যবহৃত আসবাবপত্র, চিঠিপত্র। জৈনক সৈয়দ আনিছুজ্জামান সুন্দরবন কুমির শিকার করে শেরে-ই-বাংলার প্রতি শ্রদ্ধা নির্দশন স্বরুপ উপহার দেওয়া কুমির নিয়েই এ জাদুঘরটি সাজান। পাশে রয়েছে শের-ই-বাংলার স্মৃতী বিজড়িত নিজ বাংলো, ১৯২৮ সালে তার নির্মিত ঐতিহ্যবাহী চাখার জামে মসজিদ ও ১৯৪০ সালে তার নির্মিত চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজ। জাদুঘরে প্রবেশ ফি ২০০২ সালে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ১ টাকা চালু হয়।
বর্তমানে প্রবেশ ফি ১০ টাকা এবং বিদেশী দর্শনার্থী ১০০ টাকা। গ্রীষ্মকালে সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রবিবার পূর্ণ দিবস এবং সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও অদ্যাবধি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা হয়নি ‘‘শের-ই-বাংলা স্মৃতি জাদুঘর’’। জাদুঘরটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন, নানা অব্যবস্থাপনা ও প্রচারের অভাবের কারণে এটি দর্শকশূণ্য হয়ে পড়েছে। দৈনিক এখানে ৪০ থেকে ৪৫ জন দর্শনার্থী আসে। কোনো কোনো দিন তাও হয় না বলে জানান দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন ও প্রচারনা না থাকায় ইতিহাসের ধারক জাদুঘরটির এ অবস্থা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।