বরিশাল নগরীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে সাইফুল ইসলাম মামুন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে মেট্রোপলিটন কোতয়ালি থানা পুলিশ। এ সময় হোটেল কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে মদ ও ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) কোতয়ালী থানা পুলিশ সাইফুল ইসলাম মামুনকে আদালতে প্রেরন করেন। আদালতে প্রেরণ করলে চীফ মেট্রোপলিটন মেজিস্ট্রেট (ভারপ্রাপ্ত) মারুফ আহম্মেদ তাকে জেলা হাজতে প্রেরনের নির্দেশ দেন।
হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীরের সাথে রাতে হোটেলের একটি কক্ষে রাত যাপন করে সাইফুল ইসলাম মামুন। সকালে ওই পুলিশ কর্মকর্তা চলে যাওয়ার পরে ঘুমিয়ে থাকা সাইফুল ইসলামকে স্টাফরা ডাকতে গেলে তিনি বেসামাল আচরণ করেন।
এমনকি নিজেকে দৈনিক আজকের বার্তা পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়েও হোটেল স্টাফদের মারধর করেন। সংবাদ পেয়ে দৈনিক আজকের বার্তা পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোশাররফ হোসেন ছুটে গিয়ে জানান সাইফুল ইসলাম মামুন তাদের পত্রিকার সাংবাদিক নন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফিরোজ আল মামুন জানিয়েছেন- হোটেল কক্ষে গন্ডগোলের খবর পেয়ে সাইফুল ইসলাম মামুনকে বেসামাল অবস্থায় পাওয়া যায়। পরবর্তীতে হোটেল কক্ষে তল্লাশি করে বিদেশি মদ ও ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।’ এই ঘটনায় ভুয়া সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম মামুনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে আদালতে প্রেরন করলে বরিশাল চীফ মেট্রোপলিটন মেজিস্ট্রেট (ভারপ্রাপ্ত) মারুফ আহম্মেদ তাকে জেল হাজতে প্রেরনের নির্দেশ দেন।
এ ঘটনার নেপথ্যে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার সবেক ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। রাতে ওই হোটেলে বসে ওই সাংবাদিক ও ওসি জাহাঙ্গীর একত্রে মদ্যপান করেন ও ইয়াবা সেবন করে বলে জানাগেছে।
আটকের পর সাংবাদিক পরিচয়দানকারী সাইফুল ইসলাম মামুন থানায় পুলিশ ও গনমাধ্যম কর্মীদের সামনেই বলেন, বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার সাবেক বিতর্কিত ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন তাকে ফোন করে মদ ও ইয়াবা নিয়ে ওই হোটেলে আসতে বললে তিনি আসেন। যার সত্যতা তার ফোনের লিষ্ট দেখিয়ে প্রমানও করেন তিনি।
তিনি হোটেলে এসে দেখেন ওসি জাহাঙ্গীর একটি মেয়ে নিয়ে হোটেলের একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন। তিনি আসার পরে ওসি তাকে ওই হোটেলেরই অপর একটি কক্ষে থাকার জন্য বলেন। ওই রুমে থাকার কিছুক্ষন পরে ওসি নিজেই তার (মামুনের) রুমে গিয়ে মদ ও ইয়াবা সেবন করে তার কক্ষে চলে যায়। সেখানে গিয়ে ওই রুমে অবস্থান করা সেই মেয়েটির সাথে রাতভর আনন্দ ফুর্তি করেন বলেও জানান তিনি (মামুন)। রাত পোহাবার আগেই ওসি জাহাঙ্গীর ওই হোটেল ত্যাগ করেন বলেও জানান তিনি।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তিনি একটি মামলার স্বাক্ষি দেয়ার জন্য বরিশালে এসেছিলেন। বরিশালে এসে তিনি নগরীর বিউটি রোডের আবাসিক হোটেল আল ফারুকে অবস্থান করেন। সেখানে তিনি আসার পরে তার মোটরসাইকেল চালকের সাথে আসা মামুন নামে একজনের সাথে পরিচয় হয় তার। মামুন তার রুমে ছিলোনা পাসের একটি কক্ষে অবস্থান করছিলো তিনি। তার সাথে একত্রে মদ্যপ ও ইয়াবা সেবনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তার (মামুনের) সাথে মদ ও ইয়াবা সেবন করিনি।
মামুন আমার বিরেুদ্ধে মিথ্যা বলেছে। আপনি বরিশালে দায়িত্ব পালন করার সময়ও আপনার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিলো তার পরেও বরিশালে এসে আপনি এমন কর্মকাণ্ড করলেন কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তেমন কিছুই করিনি। যে হোটেলে ছিলাম ওই হোটেলের স্টাফরা আমার রুমে একটি মেয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। তার সাথে একটু ফুর্তি করছি মাত্র।
উল্লেখ্য, ওসি জাহাঙ্গীর বর্তমানে ময়মনসিং জেলার বালুকা থানায় কর্মরত আছেন। বিগত প্রায় ৬/৭ বছর পূর্বে তিনি বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় তার বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারনে ব্যপক সমালোচনায় পড়েছিলেন।