পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করার অঙ্গীকার করে ইশতেহার প্রকাশ করেছে ঐক্যফ্রন্ট। আগামী নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এলে কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল সংস্কারে আশাবাদী তারা। ডাকসুসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিতেরও অঙ্গীকার এসেছে ইশতেহারে।
সোমবার ঘোষিত ৩৫ দফা ইশতেহারের ৭ দফায় ‘শিক্ষা’ সংস্কারের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
শিক্ষা সংস্কারে ইশতেহারে বলা হয়েছে, কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনার জন্য একটি কমিশন গঠন করা হবে, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা হবে, জাতির ভবিষ্যৎ যোগ্য নেতৃত্ব বিকাশের পথকে সুগম করার লক্ষ্যে প্রথম বছরেই ডাকসুসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা হবে, দরিদ্র অস্বচ্ছল মেধাবী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারিভাবে উপযুক্ত হারের বৃত্তির ব্যবস্থা করা হবে এবং এই ক্ষেত্রে অর্থায়নের সাহায্যের জন্য সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিএসআর বাধ্যতামূলকভাবে চালুর ব্যবস্থা করা হবে।
এছাড়াও ইশতেহারে উল্লেখ রয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ গুলোকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভাগ করে সরকারিভাবে শিক্ষাব্যয় সুনির্দিষ্ট করে ফি নির্ধারণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, মেধাপাচার রোধে মেধা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি যথার্থ মূল্যায়ন ও উপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে, ট্যালেন্ট সার্চ কর্পোরেশন গঠনের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন কৃত্রিম সংকট দূর করে আবাসন সমস্যার সমাধান করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হলের সংখ্যা (বিশেষ করে মেয়েদের হল) বৃদ্ধি করা হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়ে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে, ছাত্র রাজনীতির নামে আবাসিক হলগুলোতে সিট বাণিজ্য জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ও শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং আবাসিক হলের বরাদ্দ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে হল প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হবে।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর খাবারের মানোন্নয়ন ও মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখাসহ পর্যাপ্ত ভর্তুকি দেওয়া হবে, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আলাদা আলাদা ভাবে না নিয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে,সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল কৃষি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ করে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাবী ও যোগ্য শিক্ষক নির্বাচনে একাডেমিক ফলাফল গবেষণা কর্ম বা পিএইচডি ডিগ্রি ছাড়া নিয়োগ প্রদান করা হবে না, শিক্ষকদের পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা ও যোগ্যতা নির্ধারণ এ গবেষণা কর্মের পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান সহশিক্ষা কতার সার্বিক দক্ষতাকে বিবেচনা করা হবে, প্রশ্ন ফাঁস বিরোধী সেল’ গঠন এবং প্রশ্নফাঁস রোধে কার্যকর আইন প্রণয়ন করা হবে। একই সাথে সর্বোচ্চ মহলে জবাবদিহিতা এবং দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিত করণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ধারা ঐক্যফ্রন্ট মূলত কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা তরুণদের দ্বারা ঘোষিত ‘তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮’ থেকে সংযুক্ত করেছে।
শিক্ষা সংস্কার পরিকল্পনার মধ্যে আরো উল্লেখ আছে, বেসরকারি স্কুলগুলোকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ, ধসে পড়া শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে সকল পদক্ষেপ নেয়া, সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষক প্রশিক্ষন বৃদ্ধি করা, প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য নতুন ক্যাডার সার্ভিস চালু করা, শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া, কর্মমুখী শিক্ষায় আগ্রহীদের বৃত্তি প্রদান, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কারিগরী শিক্ষা দিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থান করা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য শিক্ষক নিয়োগ করা, শিক্ষা ক্ষেত্রে জিডিপি’র অনুপাতে বরাদ্দ বর্তমানের ২.২৫ শতাংশের পরিবর্তে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ইউনেস্কো নির্দেশিত ৬ শতাংশে উন্নীত করা হবে।
ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারকে সাম্প্রতিককালের একটি বৈপ্লবিক ইশতেহার হিসেবে ঘোষণা করেন ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আমরা আশা করি এই ইশতেহারে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। জনগণ ৩০ ডিসেম্বর ভোট দিয়ে নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করবে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
ইশতেহার পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।