বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে যুক্ত হলো বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত সম্পূর্ণ নতুন দ্বিতীয় বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ হংসবলাকা। ড্রিমলাইনার নামে পরিচিত এই বোয়িং শনিবার রাতে এখানে এসে পৌঁছেছে। ১৫তম বিমান হিসেবে এটি জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে যোগ হলো।
বিমানের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ বাসসকে জানান, ‘হংসবলাকা নামের নতুন বিমানটি স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল বোয়িং ফ্যাক্টরি থেকে বিমানটি টানা ১৫ ঘণ্টার উড্ডয়ন শেষে বাংলাদেশে পৌঁছেছে।
এর আগে ২৯ নভেম্বর বিমান নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বোয়িং কর্তৃপক্ষ সিয়াটলে বিমানের ডিরেক্টর ফ্লাইট অপারেশন ক্যাপ্টেন ফরহাত হাসান জামিলের কাছে নতুন এই বিমানটির মালিকানা হস্তান্তর করে।
ড্রিমলাইনার হংসবলাকা ঢাকা থেকে লন্ডন, দাম্মাম ও ব্যাংকক রুটে চলাচল করবে।
বিমান বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, ১০ ডিসেম্বর থেকে বিমানটি দিয়ে সপ্তাহে ঢাকা-লন্ডন রুটে ছয়টি ফ্লাইট, ঢাকা-দাম্মাম রুটে চারটি ফ্লাইট ও ঢাকা-ব্যাংকক রুটে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।
৭৮৭-৮ বোয়িংয়ে ২৭১টি আসন রয়েছে। এটি অন্যান্য বিমানের চেয়ে ২০ শতাংশ জ্বালানিসাশ্রয়ী। বিমানটি ঘণ্টায় ৬৫০ মাইল বেগে একটানা ১৬ ঘণ্টা চলতে সক্ষম।
এর যাত্রীরা সর্বোচ্চ ৪৩ হাজার ফুট উঁচুতে ওয়াইফাই সেবা পাবেন। এতে করে যাত্রীরা বিমানে বসেই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে এবং বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে তাঁদের বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।
ড্রিমলাইনারের ওজন ২৯টি হাতির সমান
ড্রিমলাইনার ঘণ্টায় ৬৫০ কিলোমিটার বেগে উড়তে সক্ষম। উড়োজাহাজের শব্দ কমাতে ইঞ্জিনের সঙ্গে শেভরন প্রযুক্তি যুক্ত রয়েছে। বিমানটি নিয়ন্ত্রিত হবে ইলেকট্রিক ফ্লাইট সিস্টেমে। কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি হওয়ায় বিমান ওজনে হালকা। ভূমি থেকে বিমানটির উচ্চতা ৫৬ ফুট। দুটি পাখার আয়তন ১৯৭ ফুট। এর মোট ওজন ১ লাখ ১৭ হাজার ৬১৭ কিলোগ্রাম, যা ২৯টি হাতির সমান! এর ককপিট থেকে টেল (লেজ) পর্যন্ত ২৩ লাখ যন্ত্রাংশ রয়েছে।
ড্রিমলাইনারে ২৭১টি আসনের মধ্যে ২৪টি বিজনেস ক্লাসের আর ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাসের। বিজনেস ক্লাসের আসনগুলো ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত সম্পূর্ণ ফ্ল্যাটবেড হওয়ায় যাত্রীরা আরামদায়কভাবে বিশ্রাম নিতে পারবেন। দু-দুপাশের প্রত্যেক আসনের পাশে রয়েছে বড় আকারের জানালা। একই সঙ্গে জানালার শাটার বন্ধ করা ও খোলা যাবে বোতাম টিপে। জানালা থেকে শুরু করে কেবিনেও রয়েছে মুড লাইট সিস্টেম। এর ফলে যাত্রীরা সহজেই পরিবর্তন করতে পারবেন লাইটিং মুড। দীর্ঘ ভ্রমণে যাত্রীরা যেন ক্লান্তি অনুভব না করেন, সে জন্য এয়ার কম্প্রেসর সিস্টেম অন্যান্য উড়োজাহাজের তুলনায় উন্নত।
সব সময় ওয়াইফাই সুবিধা, স্ক্রিনে থ্রিডি ম্যাপ
ড্রিমলাইনারের ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট (আইএফই) সেবা দিতে প্যানাসনিক এভিওনিকস করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছে বিমান। প্রতিটি আসনের সামনে প্যানাসনিকের এলইডিএস-মনিটর রয়েছে। মনিটরে বিবিসি, সিএনএনসহ ৯টি টিভি চ্যানেল দেখা যাবে। ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেমে থাকবে ১০০টির বেশি ক্ল্যাসিক থেকে ব্লকবাস্টার ছবি। বিমানের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত গেমসও আছে। ড্রিমলাইনার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ও ওয়াইফাই সুবিধা পাবেন যাত্রীরা। এ ছাড়া মোবাইল ফোনে রোমিং সুবিধা থাকলে আকাশে উড্ডয়নের সময় কল করতে পারবেন। এ জন্য ২৫টি স্যাটেলাইটের সঙ্গে করা হয়েছে চুক্তি। উড়োজাহাজটি যে স্থানের ওপর দিয়ে যাবে, যাত্রীদের সামনে তখন স্ক্রিনে দেখা যাবে থ্রি-ডি ম্যাপ। একই সঙ্গে উঠে আসবে সেই স্থানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।
এর আগে গত ১৯ আগস্ট বিমানের প্রথম ড্রিমলাইনার ‘আকাশবীণা’ ঢাকায় আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ সেপ্টেম্বর বিমানটি উদ্বোধন করেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ২০০৮ সালে বোয়িং কোম্পানির ১০টি নতুন বিমান কেনার জন্য ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ইউএস ডলারের চুক্তি করে। ইতিমধ্যে বহরে যুক্ত হয়েছে ৬টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, ২টি ৭৩৭-৮০০ এবং ১টি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। বাকি তিনটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারের মধ্যে দ্বিতীয়টি বিমান বহরে যুক্ত হয়েছে ১ ডিসেম্বর। চারটি ড্রিমলাইনারসহ সব উড়োজাহাজের নাম পছন্দ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।