মে ৫, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
আদালতপাড়া জেলার সংবাদ নারী ও শিশু প্রশাসন বরিশাল

যে দুটি বিষয়ে মিন্নির সঙ্গে কথা বলেছেন আইনজীবী

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামি তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির হাইকোর্টের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। এর ফলে জামিনে মুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বরগুনা আদালতে মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম। আজ শনিবার দুপুরে বরগুনা কারাগারে মিন্নির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এ কথা বলেন তিনি।

আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ যদি আপিল করে এবং আপিলের শুনানি হতে যদি সময় লাগে তাহলে আদালত মিন্নির জামিনের আদেশ স্থগিত করতে পারে অথবা যদি আপিল করার সঙ্গে সঙ্গে শুনানি হয় তাহলে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন নামঞ্জুরও করতে পারেন। এ ছাড়া মিন্নির জামিনে মুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে আদালত কোনো আদেশ না দিয়ে শুনানির দিন ধার্য করতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়।’

কারাগারে মিন্নির সঙ্গে কী ধরনের কথা হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, ‘কারাগারে মিন্নির সঙ্গে আমার দুটি বিষয়ে কথা হয়েছে। এক হলো, উচ্চ আদালত মিন্নির জামিনের আদেশ দিয়েছেন। এই আদেশে অনুযায়ী কারাগার থেকে মিন্নির মুক্ত হতে আরো কয়েকটি আইনি প্রক্রিয়া ও দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এর জন্য আরো দুই থেকে চারদিন সময় লাগবে। এজন্য মিন্নি যাতে হতাশ না হন, এটা আমি মিন্নিকে বুঝিয়ে বলেছি।’

‘মিন্নির জামিন আদেশে গণমাধ্যমে কথা না বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই জামিনে মুক্ত হওয়ার পর মিন্নি যাতে কোনোভাবেই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলে, এ বিষয়টি আমি তাঁকে বুঝিয়ে বলেছি।’ বলেন মাহবুবুল বারী আসলাম।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে স্থায়ী জামিন দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালত আদেশে বলেন, এই সময়ে মিন্নি তাঁ বাবার জিম্মায় থাকবেন এবং তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না।

মিন্নির জামিনের পর সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সরোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিন্নি জামিন পাওয়ায় আমরা মর্মাহত। এই জামিনের রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আরো বলেন, ‘যেহেতু মিন্নি মহিলা এবং তাঁর বাবার জিম্মায় থাকবেন, তাই তাঁকে জামিন দেওয়া হয়েছে। তবে এ জামিনের তিনি অপব্যবহার করবেন না এবং মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। কিন্তু তিনি যদি জামিনের শর্ত অপব্যবহার করেন, তাহলে বিচারিক আদালত তাঁর জামিন বাতিল করতে পারবেন।’

সরোয়ার হোসেন বলেন, মিন্নির বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। তিনি যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন, সেখানে নিজে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির ঘটনার আগে পরে ১৩ বার ফোনালাপও হয়েছে। যাই হোক, আদালত তবু তাঁকে জামিন দিয়েছেন। আমরা হাইকোর্টে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এর আগে আজ দুপুর ২টার দিকে বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে স্থায়ী জামিন দেন হাইকোর্ট। আদালত আদেশে বলেন, এই সময়ে তিনি বাবার জিম্মায় থাকবেন এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এই আদেশ দেন।

বুধবার আলোচিত এই মামলাটির শুনানি শেষে আদেশের জন্য আজকে দিন নির্ধারিত ছিল। মিন্নির পক্ষে জামিন শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না, এম আমিন উদ্দিন ও মনসুর হক চৌধুরী। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন।

রায় শেষে আইনজীবী জেড আই খান পান্না আদালত চত্বরে গণমাধ্যমের কাছে এ ব্যাপারে ব্রিফ করেন। তখন তিনি জানান, এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার আগেই মিন্নিকে নিয়ে পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারেও আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন। তাতে আদালত বলেছেন, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরা আইনসম্মত নয়। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্রিফিং নিয়ে নীতিমালা তৈরির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

পাশাপাশি মামলাটি তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় মিন্নির বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ায় পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বিভাগীর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গত ২০ আগস্ট হাইকোর্টের এই বেঞ্চ আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে এক সপ্তাহের রুল জারি করেছিলেন। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ২৮ আগস্ট কেস ডকেট নিয়ে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

এ ছাড়া বরগুনার পুলিশ সুপারকে মামলার তদন্ত চলার সময়ে মিন্নি দোষ স্বীকার করেছেন মর্মে মিডিয়ার সামনে বক্তব্য দেওয়ায় এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

গত ৮ আগস্ট আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদন ফেরত দেন বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। ওই দিন হাইকোর্ট বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে জামিন দেননি। জামিন আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল দিতে চাইলে মিন্নির আইনজীবীরা তাতে সম্মত হননি। পরে আদালত জামিন আবেদন ফেরত দেন।

এর আগে গত ৫ আগস্ট মিন্নির জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। গত ৩০ জুলাই মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

২২ জুলাই বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে প্রথমবার মিন্নির জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। ওই দিনই শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

পরদিন ২৩ জুলাই ‘মিস কেস’ দাখিল করে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামানের আদালতে ফের জামিনের আবেদন করেন মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম। পরে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের নথি তলব করে ৩০ জুলাই জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন।

সেদিন তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে উভয় পক্ষের শুনানি চলতে থাকে। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির আদালতে উপস্থিত হলে এ হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য জানতে চাওয়া হয়। সবার উপস্থিতিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ল্যাপটপে হত্যাকাণ্ডের আগের ও পরের ভিডিও ফুটেজ দেখান। এ ছাড়া মিন্নির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিসহ হত্যার আগে ও পরে প্রধান আসামি নয়ন বন্ডসহ অন্যান্য আসামির সঙ্গে মিন্নির কললিস্টের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন। শুনানি শেষে মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

গত ২৬ জুন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ একদল যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। তারা ধারালো দা দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় মিন্নি হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন; কিন্তু তাদের থামানো যায়নি। খুনিরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়।

এ হত্যার ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ পরের দিন সকালে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন। মিন্নি ছিলেন সেই মামলার এক নম্বর সাক্ষী। পরে ১৬ জুলাই রাতে এ মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরদিন বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী মিন্নির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

সাতলায় বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে আ’লীগ নেতা মিজানকে অর্থের বিনিময়ে দলীয় সনদপত্র প্রদান করার অভিযোগ

banglarmukh official

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম পুলিশের বসত ঘরে ভাংচুর

banglarmukh official

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার জানাজায় অংশ নিতে মাগুরায় মামুনুল-হাসনাত-সারজিস

banglarmukh official

বরিশালে দুর্ঘটনায় নিহত ২

banglarmukh official