নভেম্বর ২৯, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
অপরাধ জেলার সংবাদ প্রশাসন বরিশাল

বরিশালে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে অবৈধ কারেন্ট জাল, নিশ্চুপ প্রশাসন!

স্টাফ রিপোর্টার//রেজয়ানুর রহমান সফেন:

আগামীকাল রাত ১২টা থেকে সারাদেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের সমস্ত নদী ও খালে ইলিশ শিকার বন্ধ হচ্ছে। ২২ দিন ব্যাপী মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে ইলিশ শিকার, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ। ওদিকে সারাবছরই নদীতে কারেন্ট জাল পেতে মাছ শিকার এমনকি কারেন্ট জাল ও ক্রয়-বিক্রয় বা পরিবহন করা আইনগত দন্ডনীয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানকে সামনে রেখে অবৈধ কারেন্ট জাল প্রস্তুত এবং বিক্রি বেড়ে গিয়েছে বরিশালে। বিভিন্ন মৎস্যজীবির সাথে আলাপ করে এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

কারেন্ট জাল বিক্রি নিয়ে মারামারির ঘটনার তথ্যও পাওয়া গেছে। বাসাবাড়িতে কারেন্ট জাল রাখার তথ্যে প্রশাসনের কিছু করার নেই বলে জানিয়েছে বরিশাল সদর নৌ পুলিশ। এছাড়া অন্যান্য বাহিনীর কাছেও এ সংক্রান্ত কোন তথ্য নেই বলে জানা গেছে। সরেজমিনে ৫ অক্টোবর দুপুরে কেডিসি বরফকল এলাকায় বিক্রির জন্য কারেন্ট জাল প্রস্তুত করছিলেন চারজন স্থানীয় জেলে। জেলেরা জানান, ওই জাল দিয়ে সারাবছরই কীর্তনখোলায় ইলিশ শিকার করেন তারা। আসন্ন মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে তার কোন ব্যত্যয় হবে না। তারা বেদে সম্প্রদায়ের লোকের সাথে জাল ফেলে মাছ শিকার করবেন বলে জানান। এর কারন হিসেবে জেলেরা জানান, বেদে সম্প্রদায় মানবেতর জীবনযাপন করে বিধায় কখনোই তাদের জাল জব্দ বা আটক করে না প্রশাসন। ফলে যে কোন অভিযানের সময় সাধারণ জেলেরা বেদে সম্প্রদায়ের সাথে মিলে জাল ফেলবে বলে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

জানা গেছে, দপদপিয়া ফেরীঘাট সংলগ্ন এবং চাঁদমারী এলাকার নদীতে জাল ফেলে ইলিশ শিকার করবেন তারা। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ৫ দিন আগে নৌ পুলিশের মাঝি হিসেবে পরিচিত কালামের নৌকায় অভিযানে গিয়ে নৌ পুলিশের এক সদস্য আটককৃত কারেন্ট জাল ৩৫ হাজার টাকায় চরকাউয়ার বাসিন্দা শহিদুল ইসলামের কাছে বিক্রি করে। ওই সময়ে কালামের নৌকায় সহযোগী মাঝি হিসেবে ছিল জুয়েল ও রবিউল। শেষে টাকা নিয়ে জুয়েল রবিউল ও ট্রলারের মালিক কালামের সাথে বাকবিতন্ডা হয়। শুধু এই দুটি ঘটনা নয় নদী থেকে আটককৃত কারেন্ট জাল নিয়মিতই বিভিন্নজনের কাছে বিক্রি করছে চিহ্নিত কয়েকজন। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় বছরের পর বছর স্থানীয় মিডিয়া ম্যানেজ করে কারেন্ট জালের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

পাশাপাশি স্বরুপকাঠির এবং বানারীপাড়ার সীমান্তে ইন্দিরহাট গ্রাম থেকে কারেন্ট জাল এনে বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চলের জেলে ও মাঝিদের কাছে বিক্রি করছে। এতে করে কারেন্ট জাল নিধনের বদৌলতে ছড়িয়ে পড়ছে নদীমাতৃক বরিশালে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারেন্ট জাল বিক্রিতে প্রশাসনের সাথে সখ্যতা রেখে চলা ট্রলার মালিকরা বেশি জড়িত। এদের ট্রলার হয়তো বিগত দিনে ভাড়া নিয়েছে নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড নয়তো বর্তমানে কারও ট্রলার এই দুটি বাহিনীর প্রয়োজনে ভাড়ায় খাটে। এসব ট্রলার মালিক বা মাঝিরা সোর্স হিসেবেও কাজ করে থাকে। অভিযোগ রয়েছে পুলিশ বা কোস্টগার্ড কোন এলাকায় কখন অভিযান চালাতে যাবে তার খোঁজ নিয়ে নদীতে কারেন্ট জাল ফেলানো মাঝিদের কাছে আগাম জানিয়ে দেয়। বিনিময়ে মাছ বা চুক্তিভিত্তিক টাকা নিয়ে থাকেন। ওদিকে অভিযানে গিয়ে খালি হাতেই ফিরতে হয় প্রশাসনকে।

আবার প্রশাসনের কেউ কেউ এর সাথে জড়িত বলে শোনা যায়। জানা গেছে, কারেন্ট জাল বিক্রির সাথে জড়িত চক্রটি কেডিসি, রসুলপুর ও চরকাউয়া এলাকা ভিত্তিক গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে জড়িত রয়েছেন, কেডিসির বাসিন্দা কালাম, অলি, দুদু, হাসান, রুবেল, খোকন, পারভেজ, আল-আমিন, মিঠুন, রাজু, নজরুল। রসুলপুর এলাকার পলাশ ও তার ৪/৫ জন সহযোগী। চরকাউয়া এলাকার রফিক ও চন্দ্রমোহন এলাকার সোহরাফ। ওদিকে মৌসুমী কারেন্ট জাল বিক্রিতে রাজিব, দেলোয়ার, লিটন ও সহিদের নাম জানা গেছে। এসব মাঝিরা বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের সাথে অভিযানে গিয়ে জাল ও ইলিশ মাছ চুরি করে রাখেন এমন তথ্য ওপেন সিক্রেট। যেকারনে অনেকেই মাঝি নেতাদের ঘুষ দিয়ে নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড বা নৌ-বাহিনীর সাথে ভাড়ায় চুক্তিবদ্ধ হতে চায়। এনিয়ে কিছুদিন পূর্বে বরিশালের মাঝি নেতা আনোয়ার শিকদারের বিরুদ্ধেও মুখ খুলেছিল মাঝিরা। কারেন্ট জাল বিক্রি চক্রের সাথে জড়িত কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, দুটি মূল্য তালিকায় সাধারণত কারেন্ট জাল বিক্রি হয়ে থাকে।

এরমধ্যে ৪০ শোল/ চোঙ এর জাল ১৮ হাজার টাকা, ৮০ শোল/ চোঙ এর জাল ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকায়। এই জালগুলোই পুরান হলে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। মাঝিরা জানিয়েছে বিগত সপ্তাহখানেক সময়ধরে বরিশালে পুরানো কারেন্ট জালের চাহিদা ছিল। কারন মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে অবৈধভাবে যারা মাছ শিকার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা পুরানো জাল ফেলবে। মাঝিরা জানিয়েছে, অভিযানে জাল জব্দ হলে বেশি আর্থিক ক্ষতি হবে না। ওদিকে কেডিসি, রসুলপুর ও চরকাউয়ায় অনেকটা প্রকাশ্যে কারেন্ট জাল বিক্রি হচ্ছিল এমন কোন তথ্য জানা নেই বলে জানান, বরিশাল সদর নৌ থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি জানান কারেন্ট জাল সারা বছরই নিষিদ্ধ।

সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ বা প্রমান না থাকলে পুলিশ কোন পদক্ষেপ নিতে পারে না বলে দাবী করেন এই কর্মকর্তা। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল দাস জানিয়েছেন, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান- ২০১৯ সকল করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি। জেলেদের সচেতনতায় পোষ্টার, লিফলেট ও মাইকিং করা হয়েছে। জেলেদের সাথে সভাও করা হয়েছে। কারেন্ট জাল প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, কারেন্ট জাল হচ্ছে নিষিদ্ধ জাল। এর বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করা বিধান সম্মত। কেউ তথ্য পেয়েও যদি আইন প্রয়োগ না করে সেটি তার গাফেলতি। মজুদ করে জাল বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, এমন তথ্য আমার জানা নেই। জানা থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

সহকর্মীদের চোখের জলে সাংবাদিক তুষারের শেষ বিদায়

banglarmukh official

বরিশালে যুবলীগ কর্মীর তাণ্ডব: মা-মেয়েকে কুপিয়ে জখম

banglarmukh official

সাতলায় বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে আ’লীগ নেতা মিজানকে অর্থের বিনিময়ে দলীয় সনদপত্র প্রদান করার অভিযোগ

banglarmukh official

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম পুলিশের বসত ঘরে ভাংচুর

banglarmukh official

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official