মে ১৩, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জাতীয় ঢাকা রাজণীতি শিক্ষাঙ্গন

মন্ত্রীদের হুঁশিয়ারি আমলেই নিচ্ছে না স্কুলগুলো

ভর্তিতে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিরুদ্ধে নতুন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল) কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেও রাজধানীর স্কুলগুলো তা আমলেই নিচ্ছে না। স্কুলগুলোতে ইচ্ছেমতো ফি আদায়, সেশন চার্জসহ বিভিন্ন অজুহাতে বিশৃঙ্খলা চলছেই। সরকারের ভর্তি নীতিমালায় বাংলা মাধ্যমের স্কুলে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা ও ইংরেজি ভার্সনের জন্য ১০ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করে দিলেও এর চেয়ে দ্বিগুণ ও তিনগুণ বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে। শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই এই বিশৃঙ্খলা শুরু হওয়ায় উৎকণ্ঠায় রয়েছেন অভিভাবকরা।

এছাড়া ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে নতুন পোশাক, খাতা-কলম, পেন্সিল, কোচিং ও উন্নয়ন ফি, মডেল টেস্ট, নিবন্ধন ফি, সহায়ক বই দেয়ার নামেও মোটা অংকের ফি আদায় করা হচ্ছে। নার্সারি শাখা, প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব স্তরেই ভর্তিতে নৈরাজ্য চলছে। আবার শিক্ষা ব্যবসায়ীরা সরকারের অনুমোদন ছাড়াই বাহারি নামে স্কুল চালু করে ইচ্ছেমত ফি আদায় করা হচ্ছে বলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

নতুন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শুক্রবার চাঁদপুরে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফি আদায় নিয়মবহির্ভূত কাজ এবং অন্যায়। ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি, পরীক্ষাসহ সবক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফি নেয়া হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীও (নওফেল) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকার বেসরকারি স্কুলগুলো সব মিলিয়ে বাংলা মাধ্যমে ৮ হাজার এবং ইংরেজি ভার্সনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নিতে পারবে। এর মধ্যে উন্নয়ন খাতে কোন প্রতিষ্ঠান ৩ হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না এবং পুনর্ভর্তির ফি নেয়া যাবে না। কিন্তু অধিকাংশ স্কুলেই পুনর্ভর্তিতে ইচ্ছেমত ফি আদায় করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খিলগাঁওয়ে ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সংবাদকে জানান, নবম শ্রেণীতে পুনর্ভর্তিতে তার ছেলেকে কেবল সেশন চার্জই দিতে হয়েছে সাড়ে ৭ হাজার টাকা।

একই এলাকার মাইস্টিক স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক শাখায় ভর্তিতে ৩০ হাজার টাকা নিচ্ছে। সবুজবাগ থানার বাসাবোর লিটল এঞ্জেল টিচিং হোম স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি ফি নেয়া হচ্ছে ১০ হাজার টাকা, আর মাসে বেতন নেয়া হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকা। দীপ শিক্ষা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি ফি নেয়া হচ্ছে ১০ হাজার টাকা।

সাউথ পয়েন্ট স্কুলে ভর্তি ফি নিচ্ছে ৫০ হাজার, লাইট ফেয়ার স্কুলে ভর্তি ফি ৩২ হাজার টাকা ও মাসিক বেতন এক হাজার ৬০০ টাকা, গ্রিন উডস স্কুলে ১০ হাজার টাকা, ফিরোজা বাশার আইডিয়াল স্কুলে নেয়া হচ্ছে ১০ হাজার টাকা।

মোহাম্মদপুরে জেনেসিস প্রি-স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি ফি নেয়া হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা; পাশাপাশি মাসিক প্রায় দুই হাজার টাকা হারে ২/৩ মাসের আগাম বেতনও গুণতে হচ্ছে অভিভাবকদের।

জেনেসিস স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শাহজাহান মোল্লা বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ কেবল ভর্তি ফি’ই নিয়েছে ১৫ হাজার টাকা। এছাড়াও ভর্তির সময় শিক্ষকরা স্কুল সংলগ্ন একটি লাইব্রেরি থেকে খাতা, কলম, পেন্সিল ও বই কেনার তাগাদা দিয়েছেন; এ খাতে আরও খরচ হয়েছে প্রায় ৭ হাজার টাকা।

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের বিভিন্ন শাখায় ভর্তি ফি নেয়া হচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। সম্প্রতি এই স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক ও কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর হারুন উর রশিদ। তারা স্কুল কর্তৃপক্ষকে সহনশীল মাত্রায় ভর্তি ফি আদায়ের পরামর্শ দিয়েছেন বলে স্কুলের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

উত্তরার অপর একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শিক্ষা বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছেমতো ফি আদায়ের সুযোগ পেয়েছে। তারা সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখালেও নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি দুর্বল মনোভাব দেখাচ্ছেন। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেপরোয়া হচ্ছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিয়ে বিশৃঙ্খলার মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি রাজধানীর কয়েকটি স্কুলে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। অতিরিক্ত ফি শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের ফেরত দিতেও স্কুলগুলোকে বাধ্য করেছে দুদক। কিন্তু বেশিরভাগ স্কুলে অভিযান পরিচালনা না হওয়ায় তারা অতিরিক্ত ফি আদায় করেই যাচ্ছেন। অথচ শিক্ষা প্রশাসন এ ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর জিয়াউল হক বলেন, আমাদের দুই সদস্যের একটি টিম স্কুলগুলোর অতিরিক্ত ফি আদায়ের ঘটনা তদন্ত শুরু করবে।প্রথমে ৪/৫ স্কুলের অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন। এরপর অভিযোগের ভিত্তিতে সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে: আইন উপদেষ্টা

banglarmukh official

শুক্রবার কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক, দ্রুত বিচার নিশ্চিতের নির্দেশ

banglarmukh official

২০২৬ সালেই বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণ করা হবে

banglarmukh official