27 C
Dhaka
এপ্রিল ৩০, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
বিনোদন

যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রে সফল উদ্যোক্তা বরিশালের মেয়ে রোজা

দীর্ঘ ৭ বছর সিঙ্গেল থাকার পর দ্বিতীয়বারের মতো বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী-অভিনেতা তাহসান খান। তার স্ত্রী বরিশালের মেয়ে রোজা আহমেদ, পেশায় মেকওভার আর্টিস্ট।

স্ত্রীকে একজন সফল উদ্যোক্তা জানিয়ে তাহসান বলেছেন, পড়াশোনা শেষ করে কসমেটোলজি লাইসেন্স অর্জন করে পরবর্তী সময়ে নিউইয়র্কের কুইন্সে রোজাস ব্রাইডাল মেকওভার প্রতিষ্ঠা করেছেন রোজা। তার ফেসবুক পেজ ‘রোজাস ব্রাইডাল মেকওভার’ পেজে অনুসারী সংখ্যা ১২ লাখের ওপরে।
তবে বরিশাল শহরে বড় হওয়া রোজার যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা পেতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। স্কুলে পড়ার বয়সে বাবাকে হারিয়ে মা-ভাইসহ রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়েন রোজা। সেখান থেকে কীভাবে আজ তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মেকওভার আর্টিস্ট – সে কথা নিজের ‘রোজাস ব্রাইডাল মেকওভার’ পেজে গত ২০২৪ সালের ৪ জুন এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে জানান রোজা।

তিনি জানান, বাবা মারা যাওয়ার পর অনেকটা একা একাই সংগ্রাম করে বড় হয়েছেন রোজা। টিউশনি করে আর এলাকায় বিয়ের কনেকে সাজিয়ে নিজের খরচ জোগাতেন তিনি।

স্ট্যাটাসে রোজা লিখেছেন, কোচিংয়ের পড়া আমার ভালো লাগত না তাই আমি নিজে নিজে বুঝে পড়তাম। কিন্তু বাসার কথা ছিল কোচিংয়ে পড়তেই হবে। তাই কোচিংয়ের সময়টা আমি স্টুডেন্ট পড়াতাম লুকিয়ে লুকিয়ে আর সেই টাকা জমিয়ে ভাই উৎসকে ঘুরতে নিতাম। কিছু একটা পছন্দ করলে কিনে দিতাম। বাবার যে আদর আমি পেয়েছি ও সেই আদর পায়নি সে। তাই বাবার আদর হয়তো দিতে পারতাম না তবে কখনো যাতে আফসোস না করে সেই চেষ্টা চালিয়ে যেতাম। আবার নিজের খরচটাও একটু বাড়ল। ওয়াইফাই ছিল না তাই এমবি কিনে ফেইসবুকিং শুরু করি। এভাবেই তিন মাস চলল। হঠাৎ বাজারে দাদা ভাইয়ের সঙ্গে স্যারের দেখা, স্যার বললেন রোজা আসে না কেন? এরপর কি হতে পারে যারা ফেইস করেছেন তারা বুঝবেন। শুরু হয়ে গেল বাসায় বিচার-সালিশ। যেহেতু সত্যি আমি কোচিংয়ে যাইনি তাই আমার জোর গোলায় কথা বলার মুখ ছিল না। আর কোচিংয়ের টাকা বন্ধ করে দিল আর বলল, তুই তো একা একাই সব পারিস তো কোচিংয়ে পড়তে হবে না। আর টিউশন দুটাও বাদ দিতে হলো। এখন স্কুল আর বাসা। স্কুলে আমি অনেক পপুলার ছিলাম নাচের জন্য। ওহ ক্লাস থ্রিতে থাকতে নাচের জন্য আমি জাতীয় পুরষ্কার পেয়েছিলাম। আর তখন থেকেই একা একা সাজতাম আর যারা আমার সাথে নাচ করত ওদেরকেও সাজিয়ে দিতাম। আর সবাই আমার সাথে চলতে চাইত বিশেষভাবে মেয়েরা কারণ আমি খুব ভালো সাজাতে পারি।

তিনি লেখেন, আমার এক দূরের কাজিনের বিয়ের প্ল্যান ছিল ঢাকা থেকে আর্টিস্ট আনবে। তখন বরিশালে ফ্রিলান্সার আর্টিস্টের নামটার সাথে কেউ পরিচিত ছিল না। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মেয়েটা ঢাকার আর্টিস্ট আনতে পারেনি। আমাকে কল দিয়ে খুব মন খারাপ করে বলল, পরিবার বিয়েতে অনেক খরচ করছে, এতো বড় আয়োজন কিন্তু মেকআপের জন্য এতো টাকা দেবে না। আর বরিশালের কোনো পার্লারের সাজ আমার পছন্দ না, তোর সাজটা আমার খুব ভালো লাগে। আমি একটু চুপ থেকে বললাম, আপু তোমার এতো বড় বিয়ের আয়োজনে আমার কাছে সাজবা শিওর তুমি? বলল হ্যাঁ, তোর মতো করে আমাকে সাজিয়ে দিস তাহলেই হবে। সেই থেকে মেকআপের প্রফেশনাল জার্নিটা শুরু। এর পর আপুকে সাজালেও খুব ভয় হচ্ছিল আমি কি বিয়েতে যাব? কারণ কেমন না কেমন হয়েছে সাজ? মা জোর করে নিয়ে গেলেন। সবার এতো প্রশংসা আর ফিডব্যাক পেয়ে আমি হতভম্ব। এরপর থেকেই আপুর অনেক ফ্রেন্ড আমার কাছে সাজা শুরু করল। মাত্র ২ হাজার টাকা করে নিতাম। তবে সেই বাসার সমস্যায় আবার পড়লাম। দাদা ভাইকে বলা হলো আমি পার্লারের কাজ করি, পার্লারের মেয়ে আমি। আমি বললাম হ্যাঁ তো? পার্লারে যারা কাজ করে ওরা কি মানুষ না? তাদের কি পরিবার নাই? দেখ তোমাদের মতো এক একটা পরিবার চালায় তারা। আমি তাদের রেস্পেক্ট করি। সেদিন সবাই অনেক উচ্চকণ্ঠে আমাকে বলল, এই মেয়ে আমাদের মানসম্মান ডোবাবে। সেদিন অনেক জেদ হলো! শুরু করলাম ফ্রিলান্সার মেকাপ আর্টিস্টের কাজ। বরিশাল শহরে কেউ এই টার্মটার সাথে পরিচিত ছিল না। কিন্তু এখন শত মেয়ে ফ্রিলান্সার মেকাপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করছে দেখে খুব গর্ব হয়। যেহেতু বিয়েগুলো দুপুরে হতো মেক্সিমাম তাই অনেক সময় ব্রাইডের কাজ করতে গিয়ে স্কুল বন্ধ দিতাম। স্কুল ব্যাগে মেকাপ প্রডাক্ট নিয়ে চলে যেতাম সোজা ক্লায়েন্টের বাসায়, ছুটির সময়ে চলে আসতাম বাসায়। আর সেই খবর বাসায় চলে আসে। ওইদিন রাতে বুঝে যায়, আমাকে যদি কিছু বলতে আসে আমি কাউকে ছাড় দেব না। তাই এবার আর আমাকে না বলে আমার মাকে অনেক মন্দ বলে। মায়ের সেই সরল কান্না যতবার দেখেছি নিজের জেদকে আরও শক্তিশালী করেছি। নিজেকে তৈরি করেছি মানুষ হিসেবে, একবারও নারী হিসেবে নয়।

তিনি আরও লেখেন, ব্রাইডের সংখ্যা বাড়তে থাকে বরিশাল থেকে পুরো দেশে নাম ছড়িয়ে পড়ল। বাসায় ফাইনান্সিয়াল্লি কন্ট্রিবিউশন করা শুরু করলাম। বাহ এবার আমার পরিবারের সবাই আমাকে নিয়ে গর্ব করছে, পরিচয় দিচ্ছে। আমি সবার মধ্যমনি। কিন্তু ওইদিনটাতে বাবার কথা খুব মনে পড়ছিল যে বাবা তোমার মৃত্যুর পর যতটা কষ্ট পেয়েছি তোমাকে হারিয়ে তার থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছি এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করে।

রোজা বলেন, ব্রাইডাল মেকাপ ট্রান্সফরমেশন ভিডিও আপলোড শুরু করলাম, নিজের ব্লগ, সব কিছু মিলিয়ে ভাইরাল হওয়া শুরু হলো। ঢাকা থেকে ক্লায়েন্টের নক আশা শুরু করল। কিন্তু ঢাকাতে তো কারো বাসায় উঠব না। অন্যদিকে পরের দিন বরিশালে ৪-৫ টা ক্লায়েন্ট। তাই সারাদিন কাজ করে রাত ৯ টায় লঞ্চে করে ঢাকা এসে সারাদিন কাজ করে আবার বরিশালে ব্যাক করি। এই যাতায়াতে করতে গিয়ে রাস্তাঘাটে কতো মানুষের কথা শুনেছি, তবে আমাকে কেউ নারী বলে হ্যারেসমেন্ট করার সাহস পায়নি। কারণ আমার চোখ তাদের বলে দিত যে আমি জীবনে কাউকে ছাড় দিই না, দেব না। তা বাসায় হোক আর বাইরে হোক।

তিনি বলেন, ঢাকার ক্লায়েন্ট বাড়ল, বাজেট বাড়ল। বিবিএ’র স্টুডেন্ট ছিলাম, কাজের পাশাপাশি পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া সব মিলিয়ে বেশ একটা কঠিন সময় যাচ্ছিল। যাই হোক খুব সাহস করে বসুন্ধরাতে একটা ছোট বাসা নিয়ে স্টুডিও সেটাপ দিই। বাড়িওয়ালা খুব ভালো ছিলেন। তার পরিবার নিয়মিত আমার ব্লগ দেখতেন। কিন্তু এতো ক্লায়েন্ট আসত যে পাশের বাসা থেকে কমপ্লেইন আসা শুরু করল। পরে বাসাটা ছেড়ে একটু বড় পরিসরে বাসা নিয়ে আবার নতুন সেটাপ দিই। এবার দারোয়ান মামাকে বেশ ভাল বকশিস দেই তাই আর ঝামেলা হয় না। এভাবেই আস্তে আস্তে রোজাস ব্রাইডালকে ক্লায়েন্টের দোরগোড়ায় নিয়ে যাই। ঢাকা-বরিশাল সব সময় ক্লায়েন্ট। পরে ফ্লাইটে যাতায়াত শুরু করি। এমন হয়েছে সকালে বরিশালে ক্লায়েন্ট করে দুপুরে ঢাকাতে করেছি। আর সব সম্ভব হয়েছে মনের মধ্যে একটা জেদের কারণে। কারণ, এই সেক্টরের মেয়েরা অনেক অবহেলিত। আমাকে যে কথা শুনতে হয়েছে আমি আর একটি মেয়েকেও সেই কথা শুনতে দিতে চাই না। তাই শুরু করলাম মেকআপ ক্লাস। এক বছরে ৫০০ জনের বেশি মেয়েকে মেকআপ শেখালাম। শত শত মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াল। হঠাৎ একদিন মায়ের কল, ইউএসএ অ্যাম্বাসি তে দাঁড়াতে হবে ইমেগ্রেশন ভিসার জন্য। বড় মামা অনেক আগে থেকে আবেদন করেছিল। দেখতে দেখতে ভিসা হয়ে গেল। উৎস আর মায়ের জন্য দেশ ছাড়তে হবে। নিজের সাজানো সংসার বলা যায়, তা ছেড়ে যেতে যেমন লাগে দেশ ছেড়ে আমার যেতে ঠিক তেমন লেগেছে। একটু একটু করে এ দেশে নিজের অবস্থান তৈরি করেছি আর সেই সব ছেড়ে যাব? মজার কথা হল, যেদিন আমার ফ্লাইট ওইদিনও আমি ব্রাইডের কাজ করি। দেশে আমার সার্কেলটা খুব ভালো, দেশ ছাড়ার সময়ে আমি নিজের লাগেজ পর্যন্ত গুছাইনি। যা কিছু করার সব ওরা করেছে। ওদের ছেড়ে থাকাটাও আমার জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল।

এরপর রোজা বলেন, নিজের ক্যারিয়ার, নিজের সার্কেল আর নিজের স্বপ্ন সব ফেলে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যত নিয়ে চলে এলাম ইউএসএতে। এখানে আমি আসার আগেই বার্গারের দোকানে কাজ থেকে শুরু সব কাজ আমার জন্য দেখা হয়েছিল, আমাকে না জানিয়েই। আমি তো করবোই না, ওইযে আমি খুব জেদি, শুরু করলাম নিউইউর্কে প্রচারণা। মাত্র ১৫ দিনের মাথায় ক্লায়েন্ট পেলাম। আস্তে আস্তে ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানের প্রবাসীরাও আমার কাছে সাজা শুরু করল, ক্লাস করা শুরু করালাম। নিজেকে আবার এই দেশেও একজন প্রতিষ্ঠিত নারী উদ্যোক্তা হিসেবে দাড় করালাম। কসমেটোলজির মাধ্যমে স্কিন, হেয়ার এবং মেকআপ রিলেটেড স্টাডি করলাম কলেজে। আর সেখান থেকেই আজকের স্টুডিও। কসমেটোলজির ওপর নতুন করে আবার পড়াশোনা, লাইসেন্স নেওয়া সব চ্যালেঞ্জ নতুন করে আবার ফেইস করেছি। সেলুনে সব থেকে এক্সপেন্সিভ এবং কোয়ালিটিফুল প্রডাক্ট দিয়ে সাজিয়েছি সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট।

তাহসানপত্মী বলেন, কথাগুলো খুব আবেগ নিয়ে লেখা। শুরুতেই বলেছিলাম, আমার মা একজন সরল মানুষ। বাবা মারা যাওয়ার পর জীবনে উচ্চস্বরে কথা বলতে পারেনি, কখনো হাসতে দেখিনি। আর আজ সেই মা উচ্চগলায় সবাইকে ফোনে বলে ‘হ্যাঁ আমার বড় মেয়ে রোজাই তো আমাকে দেখছে, আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ অনেক ভালো রাখছেন আমাদের। তিনি হয়ত স্বপ্ন দেখতে পারেননি কিন্তু তার মেয়ে হিসেবে একটু হলেও নতুনভাবে বাঁচতে শেখাতে সাহায্য করেছি। আজ খুব চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, বাবা তোমার সেই ছোট্ট পরীটা অনেক বড় হয়েছে! আমার সব স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দু তুমি বাবা। আমি শুধু একটা কথাই বলব, আপনাদেরকে ভেঙে দেওয়া জন্য হাজার মানুষ থাকবে কিন্তু প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আপনাকে একাই চলতে হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

জয়া যেন উঠতি বয়সি তরুণী, ভাইরাল ভিডিও

banglarmukh official

বিয়ের পর ফের সুখবর পেলেন মেহজাবীন

banglarmukh official

আত্মহত্যা করেছেন জনপ্রিয় মার্কিন অভিনেত্রী পামেলা

banglarmukh official

বোরকা নিয়ে সানা-সম্ভাবনার বিতণ্ডা

banglarmukh official

শাহিদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার কারণ জানালেন কারিনা

banglarmukh official

মিমির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সামাজিক মাধ্যমের যা বললেন অভিনেতা

banglarmukh official