28 C
Dhaka
জুলাই ১৩, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জেলার সংবাদ

নারীরা পারবে না- এটা বলার সুযোগ আর নেই

নারীদের কাজের ক্ষেত্র কোনো জায়গায়ই সহজ নয়। কারণ এখনও আমাদের মানসিকতায় সমস্যা রয়ে গেছে। একজন পেশাজীবী নারীকে মা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে পুরুষের চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হয়। পেশাগত জায়গায়ও নারীকে প্রমাণ করতে হয়, তারা সেখানেও সক্ষম; যেটা পুরুষের ক্ষেত্রে ততটা প্রমাণ করতে হয় না।

‘সবার জন্য সমতা’ প্রতিপাদ্যে এবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদরদফতরের স্টেট শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি)আসমা আক্তার মিলি। ব্যক্ত করেন পেশাগত জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা। প্রতিকূল পরিবেশে সংগ্রামী যুদ্ধে কীভাবে জয়ী হতে হয়- সে পথও বাতলে দেন বিপিএম ও পিপিএম পদক পাওয়া সফল এ নারী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জসীম উদ্দীন।

নারী দিবস এলেই নারীর ক্ষমতায়ন, অধিকার, পদায়ন নিয়ে আলোচনা বেশি হয়। সত্যিকারার্থে রাষ্ট্র কি নারীর যোগ্যতা ও সমঅধিকারের প্রশ্নে গুরুত্ব দিচ্ছে? আপনার কী মনে হয়?
আসমা আক্তার মিলি : আমি মনে করি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে যথেষ্ট মনোযোগী ও যত্নশীল। নারীর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্র তিনিই তৈরি করেছেন। বর্তমানে নারীরা প্রশাসনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ অলঙ্কৃত করছেন এবং সফলতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন। আমরা নারীরা সুযোগ পেতে শুরু করেছি। এটা চলমান। নারীদের এগিয়ে যাওয়ার এ সুযোগ আরও অবারিত হবে বলে মনে করি।
স্বাধীনতার পর জনগুরুত্বপূর্ণ বাহিনী হিসেবে পুলিশে নারীর অংশগ্রহণ ছিল না। প্রথম নারীর অংশগ্রহণ ১৯৭৪ সালে। এরপর মাঝে বন্ধ ছিল। শেখ হাসিনার আমলে আবার সে দুয়ার প্রশস্ত হয়। কিন্তু এখনও পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে নারীরা। কেন? এটা প্রাতিষ্ঠানিক কারণে নাকি নারীর যোগ্যতার সমস্যা?

আসমা আক্তার মিলি : পুলিশে এডিশনাল ডিআইজি (অতিরিক্ত উপমহাপুলিশ পরিদর্শক) পদে যেসব নারী কর্মকর্তা রয়েছেন তারা ১৮তম ব্যাচের। এর আগে দুজন নারী ছিলেন ডিআইজি। তারা ছিলেন ১৬তম ব্যাচের। গ্যাপটা তৈরি হয়েছে মূলত সেনা শাসনের আমলে। পুলিশে নারীদের নিয়োগ বন্ধ রাখা হয়। ওই গ্যাপটা তো পূরণ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে সামনে সে সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

নারীরা তো পিছিয়েই ছিল। পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে হলে সময় দিতে হবে। এছাড়া একসঙ্গে নিয়োগ দেয়াও সম্ভব নয়। এখন নারীরা পুলিশে আসছেন। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মানসিকতা অর্জন করেছেন তারা। সরকারের আস্থার প্রতিদানও দিচ্ছেন। এখন আর এটা বলার সুযোগ নেই যে, নারীরা পারবে না।
দীর্ঘদিন ধরে পুলিশে কাজ করছেন। অভিজ্ঞতা থেকে যদি বলতেন, কর্মজীবী নারীদের কাজের ক্ষেত্রটা আসলেই কি সহজ?

আসমা আক্তার মিলি : নারীদের কাজের ক্ষেত্র কোনো জায়গায়ই সহজ নয়। এখনও আমাদের মানসিকতার সমস্যা রয়ে গেছে। একই সঙ্গে বিসিএস কোয়ালিফাই করেছি। একই প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছি। একই ভাইভা, একই ট্রেনিং। তখন কিন্তু একটা ছেলে ও মেয়েকে আলাদা করে দেখা হয়নি। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে আমাকে দুর্বল ভাবা হয়, ভাবা হচ্ছে। এ মানসিকতা থেকে এখনও উত্তরণ সম্ভব হয়নি। যদিও আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ে সুযোগ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু নারীর বেলায় চিন্তা করা হয় যে, কাজটা পারবে কি-না? কিন্তু একই ক্ষেত্রে পুরুষের বেলায় সেটা হয় না। ধরেই নেয়া হয়, পুরুষ পারবে আর নারী পারবে না। কিন্তু নারীকে প্রমাণ করেই জায়গাটা নিতে হচ্ছে, সর্বোচ্চ এফোর্ট দিয়ে।

শিক্ষাগত জীবনে নারী যে মেধার সাক্ষর রাখছেন, বৈবাহিক জীবনে পা দিয়ে অনেকে সেটা ধরে রাখতে পারছেন না। এটা কি নারীর দুর্বলতা নাকি সামাজিক-পারিবারিক কারণে মনস্তাত্ত্বিক বাধায় আটকা পড়ছেন তারা?

আসমা আক্তার মিলি : আমি মনে করি নিজ কারণে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছেন না, এমন সংখ্যা হতে পারে ২০ শতাংশ। ৮০ শতাংশ নারীই সামাজিক ও পারিবারিক বাধায় কাঙ্ক্ষিত জায়গায় যেতে পারছেন না। তবে শিক্ষিত নারীরা মেধার বিকাশ ঘটাতে চান। দেশের অনেকেরই ধারণা, নারীর কাজ বাচ্চা লালন-পালন, সংসার-ধর্ম পালন। যেসব নারী কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছেছেন, খোঁজ নিয়ে দেখবেন এর কোনো বাধাই তারা পাননি।

পুলিশে নারীর সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে যদি বলতেন…

আসমা আক্তার মিলি : নারীদের জন্য পৃথক ট্রেনিং সেন্টারের কাজ শুরু হয়েছে। ক্যাডার লেভেলে নারী ও পুরুষের সুযোগ-সুবিধায় পার্থক্য নেই। তবে মাঠপর্যায়ে কিংবা অপারেশন লেভেলে নিয়োজিত নারীদের জন্য ফ্যাসিলিটিজ বাড়ানো দরকার। যেমন- ট্রাফিক বিভাগে নারীদের জন্য রেস্ট হাউজ কিংবা টয়লেটের সমস্যা আছে। আমরা উইমেন নেটওয়ার্ক থেকে সুরাহা চেয়েছি। ট্রাফিক বক্সগুলো উন্নত হচ্ছে। তবে টয়লেট সমস্যার সমাধান এখনও হয়নি।
পেশাগত আর পারিবারিক জীবনে নারীর ভূমিকা আলাদা। সব সামলে নারীর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা বেশি। সেটা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত?

আসমা আক্তার মিলি : আমরা চেষ্টা করছি সব প্রতিবন্ধকতা জয় করতে। সেটি করতেও কিন্তু অনেক এফোর্ট দিতে হয়। যেটা পুরুষের ক্ষেত্রে দিতে হয় না।

এবারের পুলিশ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ছিল ‘পরিবর্তনের জন্য সাহসী হও’। সাহসী হতে হলে পরিবারের মতো সব পেশাগত জীবনে পাব— এমনটা ভাবা হবে বোকামি। আমাকে সাহসী ভূমিকায় থাকতে-ই হবে। নারীর প্রতিবন্ধকতা ও লিমিটেশনগুলো কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে যতটুকু প্রাপ্য ততটুকু সহযোগিতা পেলেই হয়।

জাতিসংঘ মিশনে পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ কম কিন্তু সফলতা বেশি। এটা কীভাবে সম্ভব হলো?

আসমা আক্তার মিলি : মিশনের প্রতিটি ইউনিটে নারী পুলিশ সদস্য রয়েছেন। নারী কর্মকর্তাদের নিয়ে দুটি কন্টিনজেন্ট ছিল। তবে সম্প্রতি হাইতির কন্টিনজেন্টটি বন্ধ করে দেয় জাতিসংঘ। সার্বিক বিবেচনায় মিশনে তুলনামূলক বেশি সফলতা দেখিয়েছে নারীরা, এ কারণে ভূয়সী প্রশংসাও পেয়েছেন তারা। আমার মনে হয়, সুযোগ পেলে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য হিসেবে নারীদের আরও বেশি বেশি জাতিসংঘ মিশনে অংশ নেয়া উচিত।

নারীদের এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগত অভিমত কী?

আসমা আক্তার মিলি : আমরা নয় ভাই-বোন। ছয় বোনের প্রত্যেককেই অত্যন্ত সচেতনভাবে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলেছেন আমাদের মা। যে কারণে আজ আমার এত দূর আসা। আমরা তিন বোন এখন ক্যাডার সার্ভিসে। আমি কিন্তু যোগ্যতা দিয়েই সব বাধা পেরিয়ে এ পর্যায়ে এসেছি।

কর্মজীবী নারীদের ক্ষেত্রে বলব, নারীদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কাজ জানলে পেছনে তাকাতে হয় না। একজন পেশাজীবী নারীকে মা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে পুরুষের চেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে হয়।

নিজের কথাই যদি বলি, অফিসে আসার আগে আমাকে রান্না করতে হয়েছে, ঘর গোছাতে হয়েছে। গেস্ট এলে আমাকেই সামলাতে হয়। অনেক সময় পুলিশের পোশাক পরেই রান্নাঘরে ঢুকে পড়তে হয়। নারীকে পদে পদে প্রমাণ করতে হয় যে, তারা সক্ষম। পুরুষরা আর একটু সহযোগী হলে ঘরে কিংবা পেশায় নারীরা আরও বেশি সফলতা দেখানোর সুযোগ পাবে।

চাকরির ক্ষেত্রে কিংবা সংসদে সংরক্ষিত আসন রেখে নারীর ক্ষমতায়নে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব কিনা?

আসমা আক্তার মিলি : চাকরি কিংবা সংসদে নারীর জন্য কোনো সংরক্ষিত আসন রাখা উচিত নয়। যোগ্যতার মাপকাঠিতে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়বে বলে মনে করি।

ডিসি আসমা আক্তার মিলি মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানাধীন দ্বারিয়াপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৮ সালে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ২৪তম বিসিএস দিয়ে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন।

স্পেশাল ব্রাঞ্চের বিমানবন্দর ও ইমিগ্রেশন শাখা, পরে ঢাকা জেলা পুলিশ, ডিএমপির লজিস্টিক অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট ডিভিশন, প্লানিং, রিসার্চ অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ডিভিশন এবং উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ডিসি স্টেট হিসেবে ডিএমপির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত।

২০১৪ সালে জাতিসংঘ মিশনে কঙ্গোতে (ব্যান এফপিইউ-১ মনস্ক) কমান্ডার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পেশাগত কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ অর্জন করেন বিপিএম ও পিপিএম পদক।

সম্পর্কিত পোস্ট

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার জানাজায় অংশ নিতে মাগুরায় মামুনুল-হাসনাত-সারজিস

banglarmukh official

অটোরিকশায় ছাত্রীর সঙ্গে অশোভন আচরণ, ভিডিও ভাইরাল

banglarmukh official

বগুড়ায় স্কুলছাত্রকে শ্বাসরোধ করে হত্যা

banglarmukh official

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ: ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার নির্দেশ হাইকোর্টের

banglarmukh official

বোনের বাড়ি বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার শিশু, ভগ্নিপতি ও শ্বশুর আটক

banglarmukh official