বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা ও তার ছেলে সিআরআই ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল
মঞ্চে চিরকুট ব্যান্ড
>> রিয়াদ খন্দকার
রেসকোর্স ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ স্মরণ করে এবং সেই ভাষণের গুরুত্ব সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মকে অবগত করার লক্ষ্যে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে জয় বাংলা কনসার্ট।
গত ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত এই কনসার্টে হাজারো তরুণের কণ্ঠে বারবার উচ্চারিত হয়েছে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। বড় পর্দায় ভেসে ওঠা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সমগ্র স্টেডিয়ামে ছড়িয়ে দিয়েছে স্বাধীনতার উন্মাদনা। আরও একবার যেন মুক্তির চেতনায় উদ্ভাসিত হয়েছে হাজারো তরুণ। সিআরআই-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইয়াং বাংলার আয়োজনে বিকাল সোয়া ৩টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আর্মি স্টেডিয়ামে পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে এ কনসার্টটি।
সেদিন দুপুর থেকে গেইট খোলা হলেও তার অনেক আগে থেকেই আর্মি স্টেডিয়ামের পাশে এসে ভিড় করেছে তরুণেরা। ক্রমশ স্টেডিয়ামের চারপাশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সেই তরুণদের ভাষ্যে, জয় বাংলা কনসার্ট শুধু কনসার্ট নয়, এ হচ্ছে অতীতকে স্মরণ করে সেই চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলা।
ব্যান্ডদল বে অব বেঙ্গল যখন জয় বাংলা কনসার্টের মঞ্চে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’ গান দিয়ে পারফর্ম শুরু করে, তখন পুরো আর্মি স্টেডিয়াম যেন ১৯৭১-এর বাংলাদেশে পরিণত হয়। উদীপ্ত বজ্র কণ্ঠে শ্রোতারাও গেয়ে ওঠে সেই গান।
বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্রোতাদের মাতিয়ে রেখেছিল আরবোভাইরাস। ৭ মার্চকে স্মরণ করে দেশাত্মকবোধক গানের মধ্য দিয়ে তারা পারফর্ম শুরু করে। এর পর তারা ‘হারিয়ে যাও’, ‘আর মানব না তোমাদের’ গানে মুখরিত করে আর্মি স্টেডিয়ামের চত্বর। তাদের গাওয়া ‘ও আমার দেশের মাটি’র সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছে হাজারো শ্রোতা। সেই সময়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় আর্মি স্টেডিয়াম।
শ্রোতারা তাদের পছন্দের ব্যান্ডগুলোর নাম লিখে প্ল্যাকার্ডে দেখাচ্ছিল, কেউ পছন্দের গানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে হারিয়ে যাচ্ছিলেন গানের জগতে, আবার কেউ সেই সময়টিকে স্মরণীয় করে রাখতে মুঠোফোনের ক্যামেরায় বন্দি করছিলেন মুহূর্তগুলো।
এই কনসার্টে প্রদর্শিত হয়েছে অগ্নিঝরা মার্চ নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র। লাখো বাঙালির হূদয় কাঁপানো বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের সুরে তখন প্রকম্পিত হয়েছে পুরো স্টেডিয়াম। সেই সময়ে তরুণেরা একই ভঙ্গিতে বজ্রকণ্ঠে উচ্চারণ করেছে ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’।
রাত ৯টায় মঞ্চ মাতাতে আসে অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড চিরকুট। গিটারে জাতীয় সংগীতের সুর তুলে শুরু করেন তাদের সংগীত পরিবেশনা। চিরকুট ব্যান্ডের শিল্পী সুমীর বক্তব্যে উঠে আসে ৭ মার্চের তাত্পর্য। চিরকুটের জনপ্রিয় গানগুলোর পাশাপাশি স্বাধীন বাংলা বেতারের গানও পরিবেশন করেন তারা।
অনুষ্ঠানের সর্বশেষ আকর্ষণ ছিল জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেল। দীর্ঘ নয় বছর পর সাজু, সেজান, লিংকন একসঙ্গে মঞ্চে আসেন। তাদের সুরের মূর্ছনা, বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে হেড ব্যান করা ছিল চোখে পড়ার মতো। ‘দুঃখ বিলাস’, ‘আমার পথ চলা’, ‘কাণ্ডারি হুঁশিয়ার’ গানের সঙ্গে আসন্ন অ্যালবামের একটি গান ‘সংশয়’ পরিবেশন করেন তারা।
বাংলাদেশের মেটাল ব্যান্ডের অগ্রদূত ক্রিপটিক ফেইট ‘জাগো বীর বাঙালি’, ‘কূলহারা এই ঢেউ’ ও ‘চলো বাংলাদেশ’ দিয়ে শ্রোতাদের বিমোহিত করেছেন।
এর আগে ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ নিয়ে মঞ্চ মাতিয়েছেন শূন্য ব্যান্ড। আর লালন ব্যান্ডের সুমীর কণ্ঠে শ্রোতারা শুনেছেন ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ ও ‘শেখ মুজিবের মুক্তি চাই ….. মুক্তি চাই’ গান দুটি।
এছাড়া নেমেসিস ‘সংগ্রাম আমি দেখিনি’, ‘আলোকিত হয়ে ওঠো’, ‘মা গো ভাবনা কেন’ গানের সঙ্গে নিজেদের ব্যান্ডেরও কিছু গান পরিবেশন করেন।
বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে সেই কালজয়ী ভাষণের মর্যাদা ও তাত্পর্য তুলে ধরতে এবারের কনসার্টে ছিল বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের ৮টি ব্যান্ডের নিজেদের গান এবং স্বাধীন বাংলা বেতারের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা দেওয়া ঐতিহাসিক গানের পরিবেশনা। ব্যান্ডগুলো হলো বে অব বেঙ্গল, নেমেসিস, আরবোভাইরাস, লালন, ক্রিপটিক ফেইট, শূন্য, আর্টসেল ও চিরকুট।