নিউজ ডেস্ক:
বরিশাল ক্লাব অভ্যন্তরে নির্মিত একটি বহুতল ভবন ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিকালে ভবনটির একপাশের কিছু অংশ আকস্মিক দেবে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এই বিষয়টি সম্পর্কে ক্লাব কর্তৃপক্ষ অবগত থাকলেও রয়েছে অনেকটা নীরব। ফলে দিনে দিনে ভবনটি নিয়ে বরিশাল ক্লাবের মেম্বর ও সংশ্লিষ্টদের মাঝে আতঙ্কের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এমতাবস্থায় বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) কর্তৃপক্ষও ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনটির বিষয়ে কোন ধরণের পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যে কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনটি নিয়ে ক্লাব মেম্বর ও সেখানকার কর্মচারীদের মাঝে আতঙ্কের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে সিটি কর্পোরেশন যে তথ্য-উপাত্ত¡ প্রকাশ করেছে তা শুনে হয়তো অনেকেই হকচকিয়ে যাবেন।
এই ভবনটি সংক্রান্ত কোন নথিপত্র নেই বিসিসির সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। ফলে ভবনটি যে আইন বর্হিভুতভাবে নির্মিত হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অবশ্য সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল একটি সূত্রও এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তাদের ভাষায় তৎকালীন সিটি মেয়র বরিশাল ক্লাব সভাপতি প্রয়াত শওকত হোসেন হিরন তার শাসনামলে ২০১৩ সালে ক্লাব অভ্যন্তরে ভবনটি নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কিন্তু এই ভবনটি নির্মাণের ক্ষেত্রে কোন আইন মানেননি তিনি। যে কারণে কর্পোরেশনে ভবনটি সম্পর্কিত কোন কাগজপত্র নেই।
ক্লাব সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে- আওয়ামী লীগ নেতা শওকত হোসেন হিরন বরিশালের সু-কোম্পানি ‘ফরচুন লিমিটেড’র মালিক মিজানুর রহমানকে ক্লাবে সদস্য পদ দিয়ে ২৫ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। সেই টাকা দিয়ে চারতলা ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। যে কারণে ভবনটির নিচতলার নামকরণ করা হয় ‘ফরচুন ক্যাফেটেরিয়া’ নামে। ওই সময় আকস্মিকভাবে শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যু হলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল ইসলাম শহিদ ভাবনটির দ্বিতীয় তলার কাজ শুরু করেন।
অবশ্য তিনিও সুরভী লঞ্চ নেভিগেশন কোম্পানির কাজ থেকে ২৫ লাখ টাকা নিয়েছিলেন নির্মাণ কাজের জন্য। ফলশ্রæতিতে ভবনটির দ্বিতীয় তলার নামকরণ করা হয় ওই লঞ্চ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা গোলাম মাওলার নামে। যেটি এখন ‘গোলাম মাওলা কনভেনশন সেন্টার’ নামে পরিচিত। পরবর্তীতে ইঞ্জিনিয়ার শহীদ প্রয়াত হলে ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পান কাজী মফিজুল ইসলাম কামাল। মূলত তিনি দায়িত্ব নিয়েই ৩/৪ তলার কাজ শেষ করেন। এই দুই তলার কাজের ব্যয় বহন করা হয় ক্লাবের ফান্ড থেকে। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে- পুরো ভবনটি নির্মাণ কাজ শুরু থেকে সদস্যরা বিরোধীতা করলেও ক্ষমতার প্রভাবের কাছে তা টেকেনি। এই বিষয়টি নিয়ে তখন কেউ মুখ না খুললেও এখন প্রকাশ পাচ্ছে।
ভবনটির ‘ফরচুন ক্যাফেটারিয়া’ অর্থাৎ নিচতলার দায়িত্বে থাকা বরিশাল ক্লাবের পরিচালক সিটি কর্পোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর লিয়াকত হোসেন খান লাবলুর সাথে আলাপচারিতাই তা অনুমান করা গেল। এমনকি বরিশাল ক্লাবের অভ্যন্তরে নির্মিত কোন ভবনের নাম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের হওয়ায় তিনিও নাখোশ বটে। তাছাড়া ভবনটি দেবে যাওয়ার কারণে তিনিও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন বলে দাবি করেছেন। কিন্তু ভবনটি নির্মাণ সংক্রান্ত কোন তথ্য উপাত্ত দিতে পারেননি।
এই বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্লার্নিং শাখায় যোগাযোগ করা হলে সেখানকার কর্মকর্তা স্থপতি হৈমন্তী শুক্লা বসু সময়ের আলোকে জানিয়েছেন- ভবনটি সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র তাঁর দপ্তরে নেই। তাছাড়া ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ কীনা তা সম্পর্কেও তিনি অবগত নন।
অবশ্য একই কথা জানিয়েছেন- সিটি কর্পোরেশনের তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ আনিচুজ্জামানও। এই কর্মকর্তার ভাষায়- যেহেতু ভবনটি নির্মাণ সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র দপ্তরে নেই সেক্ষেত্রে এটিকে অবৈধই বলা যায়। তবে তিনি এর বাইরে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
এক্ষেত্রে বরিশাল ক্লাব সভাপতি কাজী মফিজুল ইসলাম কামাল বলছেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ কীনা সেই বিষয়টি প্রকৌশল বিভাগ বলতে পারবে। বরিশালের ইঞ্জিনিয়ারা দেখে গেছেন এখন রাজধানী ঢাকা থেকে ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে আসার প্রস্তুতি চলছে। তাঁরা এসে পরীক্ষা করে দেখার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তবে তিনিও নির্মাণ সংক্রান্ত তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলছেন- সাবেক সিটি মেয়র ক্লাব সভাপতি শওকত হোসেন হিরন ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে তাঁর মৃত্যু হলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল ইসলাম শহিদ দুইতলা পর্যন্ত নির্মাণ করেন। মূলত তাঁর মৃত্যুর পরেই ক্লাবের অর্থে বাকি দুই তলার কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।