মে ১৪, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ঢাকা দূর্ঘটনা নারী ও শিশু প্রশাসন

বিয়ে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ তারাবনিয়া ইউনিয়নের কিরণনগর জাফর আলী মালকান্দি গ্রামের কামাল চোকদারের মেয়ে খাদিজা আক্তারের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল শুক্রবার। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বোন জামসেদা বেগম, তার স্বামী দেলোয়ার হোসেন প্রধানিয়া, সাত মাস বয়সী শিশুপুত্র জোনায়েদ ঢাকা থেকে শরীয়তপুরের উদ্দেশে রওনা হন। সঙ্গে ছিলেন চাচাত ভাই শাহজালাল চোকদার, তার স্ত্রী শাহিদা বেগম, তাদের দুই সন্তান মিম ও মাহি।

বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বহনকারী নৌকাটি লঞ্চের ধাক্কায় বুড়িগঙ্গা নদীতে তলিয়ে যায়। আহত অবস্থায় শাহজালাল চোকদারকে উদ্ধার করা হলেও বাকি ছয়জন এখনও নিখোঁজ। লঞ্চের ধাক্কায় শাহজালালের দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাকে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

শুক্রবার জামসেদার ছোট বোন খাদিজা বেগমের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল গ্রামের বাড়িতে। বিয়েতে যোগ দিতে জামসেদা ও তার চাচাত ভাই শাহজালালের পরিবার একসঙ্গে ঢাকা থেকে গ্রামের উদ্দেশে রওনা হন। রাতে নৌকাযোগে তারা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের দিকে যাচ্ছিলেন। রাত পৌনে ১০টার দিকে সদরঘাটে কাছাকাছি পৌঁছালে সুরভি-৭ নামের একটি লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাটি ডুবে যায়।

buriganga

শাহাজালালকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হলেও বাকিদের কোনো সন্ধান এখনও মেলেনি। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে খাদিজার বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। বিয়ে বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম।

অনেক স্বজন তাদের সন্ধানে ঢাকায় বুড়িগঙ্গার তীরে ছুটে আসেন। শুক্রবার দুপুরে বাড়ির উঠানে বসে বিলাপ করছিলেন জামসেদার মা ইয়ারুন নেছা ও বাবা কামাল চোকদার। তারা বারবার বলছিলেন, আমার মারে আর নানু ভাইরে আইন্না দে। অগো কইছিলাম রাইতের লঞ্চে আহিস না। একদিন আগে দিনে আয়। আমার সব শেষ হইয়া গেল।

শাহজালাল চোকদারের বাবা মহসিন চোকদার বলেন, আমরা গরিব মানুষ। অভাবের সংসার হওয়ায় শিশি বয়সেই ছেলেকে কাজে ঢাকায় পাঠাই। সেখানে দর্জির কাজ শিখেছিল। ভালোই আয়-রোজগার করত। তার পাঠানো টাকায় আমরা চলতাম। বৌ আর নাতনি দুটার খোঁজ পাচ্ছি না। ছেলেটার দুইটা পা বিচ্ছিন্ন হইয়া গেছে। আল্লাহ কেন এত বড় বিপদ দিল আমারে।

buriganga

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহম্মেদ বলেন, নৌ-দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ছয়জন নিখোঁজ থাকার বিষয়টি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। সরকারি সংস্থাগুলো নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান করছে। ওই পরিবারগুলোর পাশে উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক থাকবে।

নিখোঁজ পরিবারটির মধ্যে ছয় মাস থেকে আট বছর বয়সী তিনটি শিশু রয়েছে। লঞ্চের পাখার আঘাতে ওই পরিবারের সদস্য শাহজালালের দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শুক্রবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নৌ-পুলিশের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল জামসেদার মরদেহটি উদ্ধার করে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পোশাক শ্রমিক শাহজালাল মিয়া (৩৮), স্ত্রী, দুই মেয়ে, চাচাতো বোন, চাচাতো বোনের স্বামী ও চাচাতো বোনের ছয় মাস বয়সী শিশুসন্তান নিয়ে কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ থেকে নৌকায় করে রওনা দিয়েছিলেন। সদরঘাটের কাছাকাছি পৌঁছালে সুরভি-৭ নামের একটি লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাটি ডুবে যায়। এতে নিখোঁজ হন শাহজালালের স্ত্রী সাহিদা বেগম (৩২), দুই মেয়ে মিম (৮) ও মাহি (৬), শাহজালালের চাচাতো বোন জামসেদা বেগম (২০), বোন জামাই দেলোয়ার হোসেন (২৮) ও তাদের সাত মাস বয়সী সন্তান জুনায়েদ।

buriganga

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার সময় লঞ্চের পেছনে থাকা পাখার আঘাতে শাহজালালের দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পাশেই থাকা নৌপুলিশের একটি টহল দল শাহজালালকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। সেখান থেকে তাকে অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়। নৌকার মাঝি সাঁতরে পাড়ে উঠতে সক্ষম হন।

সদরঘাট নৌথানার উপপরিদর্শক শহিদুল ইসলাম জানান, রাত থেকে উদ্ধার অভিযান চলছে। শুক্রবার দুপুরে নিখোঁজ একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ আছেন পাঁচজন। উদ্ধার অভিযান চলছে।

শাহজালালের শ্বশুর আব্দুর রশিদ জানান, রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঢাকায় ছুটে আসেন। তার জামাতা শাহজালাল কেরানীগঞ্জে পরিবার নিয়ে থাকতেন। সেখান থেকে তারা গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের বজেশ্বরের উদ্দেশে রওনা দেন। শাহজালাল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। মেয়ে–নাতনিসহ অন্যদের খোঁজে তিনি রাত থেকে অপেক্ষা করছেন বুড়িগঙ্গার তীরে।

buriganga

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ঢাকা জোন-৩ এর সহকারী পরিচালক মোস্তফা মহিউদ্দিন জানান, নৌকাটিতে সাতজন যাত্রী ও একজন মাঝি ছিলেন। সাতজনের মধ্যে একজনকে দুই পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একজনের মরদেহ আজ দুপুরে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিরা এখনও নিখোঁজ। তারা সবাই একই পরিবারের সদস্য।

লঞ্চের পেছন দিকের সঙ্গে নৌকাটির ধাক্কা লাগে বলে তিনি জানান। সদরঘাট নৌথানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। সেখান থেকে শাহজালালকে তারা উদ্ধার করেন।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে চেষ্টা করছেন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি, নৌপুলিশ ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সদস্যরা।

সম্পর্কিত পোস্ট

হিজবুত তাহরীরের মিছিল, পুলিশের টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

banglarmukh official

সাংবাদিকরা ভুয়া নিউজ করে আমাদের ১২টা বাজিয়ে দিচ্ছে

banglarmukh official

রমজানে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে বরিশাল

banglarmukh official

ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা এখন এক নর্দমা

banglarmukh official

ডেভিল হান্টে গ্রেফতার আরও ৬৭৮

banglarmukh official

ফিল্মি স্টাইলে আদালত চত্বর থেকে আসামি ছিনতাই চেষ্টা

banglarmukh official