পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরীবিক্ষন কমিটির আহবায়ক (মন্ত্রী মর্যদা) আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাবনা ছিল একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়তে হলে চাই স্বাস্থ্যবান জাতি। সেই লক্ষ্যে তাঁর গৃহীত ১০ শয্যার থানা স্বাস্থ্য কেন্দ্র বিশ্বে আজ সমাদৃত মডেল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাঁধাগ্রস্থ হয়।
মঙ্গলবার সকাল ১১টায় আগৈলঝাড়ায় সরকারী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রী কলেজ মাঠে ন্যাশনাল আই কেয়ার এবং জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট কর্তৃক আয়োজিত বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা ও ছানি অপারেশন কার্যক্রম উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৬ হতে ২০০১ এবং ২০০৮ হতে ২০২২ মেয়াদকালে স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। গত ৫০ বছরে দেশের স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে তাঁর ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক অন্যতম।
আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা পান। এখান থেকে প্রয়োজনীয় ২৭ ধরণের ঔষধ বিনামূল্যে রোগীদের বিতরণ করা হয়। এছাড়া ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ, ৫টি সামরিক বাহিনী পরিচালিত মেডিকেল কলেজ এবং ৯৬টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালের মাধ্যমে জনগণ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রস্তুতকৃত ঔষধ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের ৫৭টি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। আগে ধারণা ছিল, আমেরিকা, ইউরোপ, ইতালির মতো উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খুব ভাল। কিন্তু করোনা মহামারি আমাদের সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছে। কারণ বিশ্বের ঐসব উন্নত দেশ বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস সামাল দিতে হিমসিম খেয়েছে। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে আমাদের দেশের চিকিৎসক ও নার্সবৃন্দের অক্লান্ত পরিশ্রমে বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা ১ম, ২য় ও ৩য় ডোজ টিকা দিতে সক্ষম হয়েছি। উন্নত বিশ্বের তুলনায় করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশে মৃত্যুর হার অনেক কম।
গৌরনদীর কৃতিসন্তান লোকমান হোসেন মিয়া আজ স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গৌরনদী এবং আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দুটি ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীত হয়েছে। এখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোভিড টেষ্ট করার সরঞ্জাম বসানো হয়েছে। দুটি এ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করা হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্স পোষ্টিং দেয়া হয়েছে। তবে হাসপাতাল দুটিতে আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলো দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আমি তাকে অনুরোধ জানাচ্ছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন ন্যাশনাল আই কেয়ার এবং জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনষ্টিটিউট এর উদ্যোগে চারটি কেন্দ্রে চক্ষু চিকিৎসা সেবা ও ছানি অপারেশনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এই চক্ষু চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীরা তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে বলে আমি আশা করছি। সভার সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল আই কেয়ার এবং জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এর পরিচালক প্রফেসর ডা. গোলাম মোস্তফা।
এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হুমায়ন শাহীন খান, বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দীন হায়দার, বরিশাল পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, আগৈলঝাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত।
সভায় উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামীলীগ নেতা সেরনিয়াবাত আশিক আব্দুল্লাহ, বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান, আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাশেম, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুন, গৌরনদী উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস, পৌর মেয়র হারিছুর রহমান হারিছ, আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক আবু সালেহ মো. লিটন সেরনিয়াবাত প্রমুখ। পরে সরকারী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রী কলেজে রোগী বাচাইয়ের বুথ পরিদর্শন করেন অতিথিরা। বাছাইকৃত রোগীদের বিনামূল্যে ২৩ মার্চ গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন করা হবে বলে জানান আয়োজকরা।