28 C
Dhaka
এপ্রিল ২৯, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জাতীয় প্রচ্ছদ বরিশাল

বাবাই বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন আরিফাকে

আরিফা চৌধুরী হিমেল পেশায় সহকারী জজ। বর্তমানে কর্মরত মানিকগঞ্জে। জন্ম ১৯৯২ সালের ৩০ জুন। জন্মস্থান বরিশাল। বাবা মো. হান্নান চৌধুরী এবং মা হেনা চৌধুরী। শিক্ষাগ্রহণ করেছেন ব্যাপটিস্ট মিশন বালিকা বিদ্যালয়, অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। সম্প্রতি তার স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন । সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাহিদ হাসান—

ছোটবেলা কেমন কেটেছে? বেড়ে ওঠার গল্প শুনতে চাই—
আরিফা চৌধুরী হিমেল: ছোটবেলা কেটেছে বরিশাল শহরে। আমার বড় হয়ে ওঠা যৌথ পরিবারে। ছোটবেলা থেকেই আমি একটু দুরন্ত ছিলাম। স্কুল-কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, গান, নাচ—সবকিছুতেই অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করতাম। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কখনো কিছু শেখার সুযোগ হয়নি। আমার ফুফু এবং বোন তাসমী চৌধুরীর কাছে ছোটবেলায় ঘরে বসেই নাচ, গান শিখেছি। পরবর্তীতে আমার মা একজন গানের শিক্ষকের কাছে নিয়ে যান। তার কাছে কিছুদিন গানের হাতেখড়ি হয় এবং নতুন কুড়িতে অংশগ্রহণের সুযোগ পাই। পরিবার থেকে নিয়ম করে দেওয়া ছিল রেজাল্ট ভালো না হলে কোনো কিছুই করা যাবে না। তাই পড়াশোনা ঠিক রেখেই সবকিছু করতে হতো। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার পর পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়। তাই কলেজে প্রথম আলো বন্ধুসভায় কাজ করার অনুমতি পাই। সেখানে আবারও গান, নাচ, অভিনয় করাসহ সাংগঠনিক কাজ শেখার সুযোগ তৈরি হয়।

পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?
আরিফা চৌধুরী হিমেল: ছোটবেলায় একটি জিনিসই বেশি শুনেছি, পড়াশোনা না করলে আর কিছুই করা যাবে না। তাই প্রতিবন্ধকতার প্রশ্ন ওঠে না বরং আমার দাদা পড়ার টেবিলের পাশে বসে থাকতেন। চাচি আসমা খন্দকার ছিলেন আমার শিক্ষিকা। তাই স্কুল-বাসা সব জায়গায়ই পড়াশোনায় অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষায় বাবা-মা ২ জনই পরীক্ষার হলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলোয়ও বাবা কলা ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন তৈরি হলো কখন থেকে?
আরিফা চৌধুরী হিমেল: আমার ফুফু শামীমা আক্তার আর্ন্তজাতিক সংস্থায় চাকরি করতেন। তিনি দেশ-বিদেশ ঘুরে আমদের সাথে গল্প করতেন। উৎসাহ দিতেন পড়াশোনা করার, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন প্রথম তৈরি হয়; যখন কলেজের এক শিক্ষক একদিন বলেন, শুধু এখানে ভালো ফলাফল করলে চলবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে। তখন আসলে স্বপ্নের চেয়ে বেশি জেদ হয়। যেভাবেই হোক ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ে পড়তেই হবে। তবে আমার শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া সহযোগিতা করেছিলেন বলে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য শেষ মুহূর্তে ঢাকায় কোচিং করার সুযোগ পাই। তা না হলে আমি সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারতাম না।

jagonews24

বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
আরিফা চৌধুরী হিমেল: সত্যি বলতে বিচারক হওয়ার স্বপ্ন আমার নয়, আমার বাবার। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ৫ম হওয়ার কারণে আমার জন্য সব বিষয় উন্মুক্ত ছিল। কিন্তু আমার বাবা রেজাল্ট জানার সাথে সাথেই বলেছিলেন, ‘আইন পড়তে হবে’। যাতে আমি বিচারক হতে পারি। আমি আইন পড়া শুরু করলেও ছাত্রজীবনে ১ দিনের জন্যও বিচারক হওয়ার কথা ভাবিনি। সবসময় বিতর্ক, ম্যুট কোর্ট, বিভিন্ন এনজিওতে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করি। ফলশ্রুতিতে আমার বন্ধুরা বিজেএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও আমি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করা শুরু করি। তবে কিছুদিন পর বুঝতে পারি, আমার কাজে আমার বাবা-মা খুশি নন। তারা চান আমি বিচারক হই। তাই ২০১৭ সালে ঠিক করি, একবার অন্তত সর্বোচ্চ চেষ্টা করে দেখি। না হলে আর কখনো পরীক্ষা দেওয়া যাবে না। তবে প্রথম ধাপ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেই আমি জানতে পারি যে, মা হতে যাচ্ছি। পরবর্তী সময়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে কষ্ট হলেও আমার স্বামী এরশা উল্লাহ, বাবা, মা ও পরিবারের সবার সহযোগিতায় সুস্থভাবে পরীক্ষা দিয়েছি। ফলাফল পাওয়ার কিছুদিন পরে আমার ছেলে আরহানকেও কাছে পেয়েছি।

ক্যারিয়ারের স্মরণীয় গল্প এবং কাজের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে জানতে চাই—
আরিফা চৌধুরী হিমেল: বিচারক হিসেবে আমার কাজের প্রতিটি দিনই স্মরণীয় এবং চ্যালেঞ্জময়। তবে আমার অল্প দিনের ক্যারিয়ারে এ মুহূর্তে স্মরণীয় ঘটনা মনে হচ্ছে—একটি পারিবারিক মামলায় বাবা তার মেয়ে সন্তানের ভরণ-পোষণ দিতে রাজি ছিলেন না। তিনি স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। মেয়ের মা পড়াশোনা জানতেন না। কোনো চাকরিও করতেন না। তবুও বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমার মেয়ের দায়িত্ব আমার। আমি যেভাবে পারি, মেয়েকে সবকিছু দিয়ে মানুষ করে তুলবো।’ পরবর্তীতে আদালতের মধ্যস্থতায় বাবা মেয়ের ভরণ-পোষণ দিতে রাজি হন। তবে সেই নারী ভরা এজলাসে যেভাবে মেয়ের দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেছিলেন, মনে হচ্ছিল মায়েরাই হয়তো পারে এভাবে নিজের কথা না ভেবে সন্তানের জন্য অবলীলায় যুদ্ধের ময়দানে ঝাপিয়ে পড়তে।

বিচারকদের নারী হিসেবে আলাদা করে মূল্যায়নের কোনো সুযোগ আছে কি-না?
আরিফা চৌধুরী হিমেল: আমি মূলত জেন্ডার ইক্যুয়ালিটিতে বিশ্বাস করি। তাই গর্ববোধ করি। কারণ এ সার্ভিসে নারী বা পুরুষ হিসেবে নয় বরং সবাইকে বিচারক হিসেবে সমভাবে মূল্যায়ন করা হয়। যদিও নারী বিচারকের সংখ্যা অনেক কম। তবে দিন দিন আশানুরূপভাবে নারী বিচারকের সংখ্যাও পুরুষের সমপরিমাণে বাড়ছে।

jagonews24

বিচারক হিসেবে নারীর অবস্থান, কর্মস্থলের পরিবেশ, নিরাপত্তা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন—
আরিফা চৌধুরী হিমেল: আগেই বলেছি, বিচারকদের জেন্ডারের ভিত্তিতে নয় বিচারক হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। তবে বাস্তবিকভাবে আর্থিক এবং পারিপার্শ্বিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও কর্মস্থলে আমরা ইতিবাচক পরিবেশে কাজ করি। আমরা সব বিচারকই আসলে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থাকলেও আমাদের পরিবার কিংবা আদালত প্রাঙ্গণের বাইরে আমরা নিজেরাও কিছুটা নিরাপত্তাহীনতা বোধ করি। তবে এসব বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাজ করছেন। সময়ের সাথে এসব প্রতিকূলতারও সমাধান আসবে বলে আশা ব্যক্ত করি।

যারা বিচারক হতে চান, তাদের উদ্দেশে পরামর্শ—
আরিফা চৌধুরী হিমেল: যারা বিচারক হতে চান, তাদের উদ্দেশে প্রথম পরামর্শ থাকবে—আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, বিচারিক জীবনের সব সুবিধার সীমাবদ্ধতা জেনে-বুঝে তবেই আপনি বিচারক হতে চান কি-না। যেদিন সিদ্ধান্ত নেবেন; সেদিন থেকে মূল আইনগুলো সঠিকভাবে পড়া শুরু করুন। সাথে অন্যান্য বিষয় তো আছেই। আপনার বিভাগীয় ফলাফল খুব আহামরী হতে হবে এমনটা নয়, মানসম্মত ফলাফল থাকলেই চলবে। আইনের যে বিষয়গুলো প্রতিদিন আদালতে বেশি দরকার হয়, সে বিষয়গুলো পরিচিত কারও কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন। তাছাড়া প্রিলি বা লিখিত পরীক্ষায় কিছু আইন বাদ দিলেও ভাইভায় আপনাকে যেকোনো ধরনের প্রশ্ন করা হবে। তার কোনো নির্দিষ্ট সিলেবাস নেই। তাই সব আইনের বিষয়ে ধারণা স্পষ্ট থাকতে হবে। সেই সাথে সমসাময়িক আন্তর্জাতিক এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার দিকেও নজর রাখতে হবে। মোটকথা, ছন্নছাড়া ভাবে বা কিছু বাদ দিয়ে না পড়ে রুটিন করে গুছিয়ে সব বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে তবেই পরীক্ষায় বসতে হবে।

সহকারী জজ হিসেবে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আরিফা চৌধুরী হিমেল: ছাত্রজীবনে স্বপ্ন দেখতাম, বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করতে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে পড়তে যাব। স্বপ্নটাকে এখনো প্রতিদিন যত্ন করে লালন করছি। আপাতত তাই ছেলেকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা এবং নিজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার মধ্যেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সীমাবদ্ধ রয়েছে।

jagonews24

দেশ নিয়ে কোন স্বপ্নটি দেখেন, কোন বিষয়টি পাল্টে দিতে খুব ইচ্ছে হয়?
আরিফা চৌধুরী হিমেল: দেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে খুব ভালোবাসি। দেশকে ঘিরে যেকোনো সুসংবাদ আমাকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে দেশের জন্য কিছু করতে। মাঝে মাঝে হতাশও হয়ে যাই, যখন দেখি এদেশের অনেক স্বপ্নবাজরা দেশের জন্য কিছু করতে গিয়ে দেশের মানুষের দ্বারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে কোনো দিন যদি সৃষ্টিকর্তা সুযোগ দেন, তবে পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করতে চাই। কেননা বর্তমানে আমাদের পরিবেশ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ভবিষ্যতে আমাদের ভুলের জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

সাতলায় বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে আ’লীগ নেতা মিজানকে অর্থের বিনিময়ে দলীয় সনদপত্র প্রদান করার অভিযোগ

banglarmukh official

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম পুলিশের বসত ঘরে ভাংচুর

banglarmukh official

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে: আইন উপদেষ্টা

banglarmukh official

শুক্রবার কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

banglarmukh official