শ্রমের সঙ্গে জড়িত ৪৩ শতাংশ শিশু আগে থেকেই স্কুলে যেত না। করোনা মহামারির কারণে তা বেড়ে ৮৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলেও নতুন করে ৪৬ শতাংশ শিশু শ্রমিক আর স্কুলে ফেরেনি। এর অন্যতম কারণ দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ও পরিবারের আর্থিক দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে না পারা। এডুকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এডুকো) বাংলাদেশের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
রোববার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের শিশুশ্রম :অভিজ্ঞতা ও করণীয়’ বিষয়ক আলোচনা সভায় এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এ তিন মাসে রাজধানী ঢাকার পাঁচ এলাকার ৪৪৩ শিশু শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে এ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু। বিশেষ অতিথি ছিলেন নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি।
সভায় গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য উপস্থাপন করেন শিশুশ্রম বিশেষজ্ঞ শারফুদ্দিন খান। তিনি জানান, করোনার সময় শিশু শ্রমিকদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ কাজে নিয়োজিত ছিল। তাদের মধ্যে প্রায় ৫৬ শতাংশই পরিবারের আয় কমে যাওয়ায় কাজ করেছে। এ ছাড়া লকডাউনের সময় সহায়তা পায়নি ৭০ শতাংশ শিশু শ্রমিক।
অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় শিশুশ্রম নিরসনে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। শিশুশ্রম নিরসনে সরকার জোর দিয়েছে কারিগরি শিক্ষা এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার ওপর।
নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, শিশুদের জন্য সেফটিনেট প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে দারিদ্র্য কমানো হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও শিশুশ্রম নিরসনে কাজ করছে। এভাবে কাজ চলমান থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব।
এডুকো বাংলাদেশের ডিরেক্টর অব প্রোগ্রামস ফারজানা খান বলেন, মহামারিতে অনেক পরিবারই উপার্জন বৃদ্ধির জন্য শিশুদের কাজে পাঠাচ্ছে। যেহেতু স্কুল বন্ধ ছিল, অনেক শিশুকই বাড়তি উপার্জনের জন্য কাজে যুক্ত হতে বাধ্য হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম নির্মূলের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, যেন কোনো শিশু পড়াশোনা শেষ না করা পর্যন্ত শ্রমে যুক্ত না হয়। এটি কঠোরভাবে আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।