মে ১০, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জেলার সংবাদ বরিশাল

ঝাড়ফুঁকে সব রোগ সারিয়ে তোলার নামে প্রতারণার এজেন্ট বরিশালেও

আধ্যাত্মিক ক্ষমতার দাবিদার বেলাল পাগলা প্যারালাইসিস, বোবা, অন্ধ, মানসিক প্রতিবন্ধীসহ সব ধরনের রোগীকে সুস্থ করে দেয়ার চ্যালেঞ্জ করছেন। বন্ধ্যা নারীকেও সন্তান পাইয়ে দেবেন বলে নিশ্চয়তা দেন। পানিপড়া, তেলপড়া, বিশেষ ধরনের মলম এবং রোগীর কানে কানে কিছু একটা বলে চলছে তার চিকিৎসা। হাজার হাজার মানুষ বিশ্বাস করে তার কাছে চিকিৎসা নিতে আসলেও স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীলরা বলছেন এটা অপচিকিৎসা, প্রতারণা।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার হরগজ গ্রামে নিজ বাড়িতে বিশাল জায়গাজুড়ে তিনি গড়ে তুলেছেন আস্তানা। সবাই বলে বেলাল পাগলার আস্তানা। সেখানে রয়েছে তার দরবার শরিফ। সাইনবোর্ডেও লেখা রয়েছে বেলাল পাগলার দরবার শরিফ। দরবার শরিফে নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা হলঘর।

প্রতি শুক্রবার তিনি রোগী দেখেন। এদিন কমপক্ষে এক হাজার রোগী এবং তাদের সাথে সহযোগী হিসেবে আরো অন্তত তিন-চার হাজার লোক জড়ো হয়। তাদেরকে ঘিরে বেলাল পাগলার আস্তানায় গড়ে উঠেছে দোকানপাট। রিতিমতো মেলা বসে সেখানে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাস, মিনিবাস, প্রাইভেটকার, স্কুটারে করে আসে রোগী।

দরবার শরিফের বাইরে রয়েছে কমপক্ষে ২০টি দোকান, যেখান থেকে সংগ্রহ করতে হয় পানির বোতল এবং তেলের বোতল। বেলাল পাগলা মূলত এই পানি ও তেল পড়ে দেন রোগীদের। পানি ও তেলের বোতল বাবদ নেয়া হয় ৩০ টাকা। এছাড়াও বিশেষভাবে তৈরি প্রতি কৌটা মলমের দাম নেয়া হয় একশ টাকা। এই মলম বিক্রি করেন তার লোকজন।

বেলাল পাগলার ছেলে মোহাম্মদ বাবুর সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বেলাল পাগলা এক সময় বিআইডব্লিউটিএ তে (বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ কতৃপক্ষ) গ্রীজম্যান হিসেবে চাকরি করতেন। ২০০৬ সালে তিনি অবসরে যান। তবে তার অনেক আগেই বেলাল পাগলা আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী হন বলে দাবি করেন। তখন থেকেই তিনি মানুষজনকে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।

তবে অবসরে যাওয়ার পর তিনি এই আস্তানা গড়ে তোলেন। বাবু বলেন, তার বাবা একজন কামেল লোক। মূলত তার ছোঁয়াতেই অসুস্থরা সুস্থ হয়ে ওঠেন। তিনি দাবি করেন, বিদেশ থেকেও অনেকে তার বাবার কাছে চিকিৎসা নিতে আসেন।

ছয় মাস আগে স্ট্রোক হওয়ার পর থেকে বাম হাত ও বাম পা অবস হয়ে যায় আব্দুল্লা রাহির। ঢাকা থেকে মেয়েকে নিয়ে তিনি এসেছেন বেলাল পাগলার আস্তানায়। কলেজ পড়ুয়া মেয়ে কানিজ ফাতেমা বলেন, ঢাকায় চিকিৎসা হচ্ছে তার বাবার। আগের চাইতে অনেক সুস্থ। কিন্তু তার বাবার তর সইছে না। লোকমুখে এই আস্তানার খবর পেয়ে আসতে চেয়েছেন। তাই বাবাকে নিয়ে তিনিও এসেছেন।

কিন্তু ফাতেমা নিজে এই পাগলার চিকিৎসা বিশ্বাস করেন না। কেবল বাবার মনের শান্তির জন্য এসেছেন।

সাত বছরের ছেলে মাহিনকে নিয়ে তৃতীয় বারের মতো এসেছেন শাহিনা বেগম। তিনি জানালেন, ছেলে অত্যন্ত চঞ্চল এবং পাগলামী করে। তাই পাগলার কাছে এসেছেন। পাগলা প্রতিবারই পানি ও তেল পড়া দিয়ে দেয়। আর এক ধরনের মলম দেয়। এপর্যন্ত তিনি নয়শ টাকায় নয় কৌটা মলম কিনেছেন। তবে ছেলের কোনো উন্নতি হয়নি।
জন্মের পর সুস্থ সবল ছিল আজাদ। কিন্তু ১০ বছর বয়স থেকে হাঠাৎ করে পা অবস হয়ে যায়। ঠিকভাবে হাটতে পারে না। ডাক্তার দেখিয়েও কাজ হয়নি। ভ্যান চালক বাবা জহির জানান, লোকমুখে এই পাগলার কথা শুনে আরো ১০-১২ জনের সাথে তিনিও গাইবান্ধা থেকে এসেছেন। এ নিয়ে চারবার আসলেন তিনি।

এপর্যন্ত ১৪ কৌটা মলমের সাথে পানি ও তেলও কিনতে হয়েছে। তবে ছেলের কোনো উন্নতি দেখছেন না। সময় লাগলেও ঠিক হয়ে যাবে বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন পাগলা। তাই এসেছেন।

আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে শুভ। মাস ছয়েক আগে হটাৎ করে ডান চোখে কিছু দেখতে সমস্যা হয়। ঢাকায় ইসলামিয়া হাসপাতালে দেখানোর পর চিকিৎকরা জানান, কমপক্ষে সাতটি ইনজেকশন দিতে হবে। প্রতিটি ইনজেকশন ৩৫ হাজার টাকা। আর ডান চোখের জন্য মাইনাস ১৩ .২৪ পাওয়ারের চমশা দেন।

শুভর বাবা হামিদুর রহমান আলী ভারতে চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে সম্পর্কে খালা এই পাগলার খবর দেন। ওই খালা পাগলার দরবারেই থাকেন। তার কথা মতো এর আগে দুই দফায় ছেলেছে পাগলার দরবারে এনেছেন। তিনি বলেন, পাগলা কানে কানে কিছু একটা বলেছে শুভকে। কিন্তু তা কাওকেই জানানো যাবে না। কেবল শুভই জানবে। সেভাবেই চিকিৎসা চলছে। তবে কোনো উন্নতি হয়নি এখন পর্যন্ত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কয়েকজন জানান, দিনে দিনে বেলাল পাগলার আস্তানা বড় হয়ে উঠছে। তেল, পানি আর মলম বিক্রি করেই প্রতি শুক্রবার মোটা অঙ্কের টাকা আয় হয়। এছাড়াও আছে ভক্তদের মোটা অঙ্কের হাদিয়া। তারা জানান, বেলাল পাগলার দেশ জুড়ে একটি নেটওয়ার্ক আছে। বিশেষ করে নোয়াখালী, কুমিল্লা, বরিশাল, ময়মনসিংসহ উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় রয়েছে তার এজেন্ট। তারাই কমিশনের ভিত্তিতে রোগী ম্যানেজ করে। যে কারণে বাসে, মিনিবাসে করে একসাথে রোগীরা আসেন। বেলাল পাগলা মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে ব্যবসা করছেন।

গত তিন দিন আগে এ প্রতিবেদক তার আস্তানায় গিয়ে মুঠো ফোনে সে কোথায় আছে জানতে চাইলে বিলাল পাগল বলেন, আমার স্ত্রী অসুস্থ তাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। আপনি শুক্রবার আসবেন দেখা হবে বলে ফোন কেটে দেন। হাজার হাজার লোকদেরকে আপনার বাবা চিকিৎসা দেন আর আপনার মাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান কেন জানতে চাইলে পাগলের ছেলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন, আমার মায়ের মেরুদণ্ডে হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে। তাই ডাক্তার দেখানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

তবে বেলাল পাগলা দাবি করেন, তিনি কোনো রোগীর কাছ থেকে টাকা পয়সা নেন না। বিশ্বাসই তার শক্তি। তিনি বলেন, মানব সেবাই পরম ধর্ম। তিনি সেই ধর্ম পালন করছেন। তিনি আরো বলেন, আমাকে নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলে, কিন্তু আমাকে কেউ এই ধর্ম পালন থেকে পিছু হটাতে পারেনি।

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. লুৎফর রহমান বলেন, বৈজ্ঞানিকভাবে ঝাড়-ফুঁ দিয়ে চিকিৎসার কোনো ভিত্তি নাই। এগুলো করে রোগীর উপকারের থেকে অপকার বেশি। এজন্য রোগীর বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এগুলো ভুয়া অপচিকিৎসা। এসব ভণ্ডদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের এসব লোকদের কাছে না গিয়ে সচেতন হবার পরার্মশ দেন তিনি।

সম্পর্কিত পোস্ট

সাতলায় বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে আ’লীগ নেতা মিজানকে অর্থের বিনিময়ে দলীয় সনদপত্র প্রদান করার অভিযোগ

banglarmukh official

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম পুলিশের বসত ঘরে ভাংচুর

banglarmukh official

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার জানাজায় অংশ নিতে মাগুরায় মামুনুল-হাসনাত-সারজিস

banglarmukh official

বরিশালে দুর্ঘটনায় নিহত ২

banglarmukh official