রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখতে আজ শনিবার বাংলাদেশে আসছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। একটি বিশেষ বিমানে ঢাকায় আসার পর আজই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের জন্য কক্সবাজার যাবেন। সেখানে তারা নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বললেন।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে স্থায়ী পাঁচটি হলো- চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র। সূত্র জানায়, সফরে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ দেশের মধ্যে জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি এই প্রতিনিধি দলে থাকছেন। বাকি চার স্থায়ী দেশের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধিরা থাকবেন। অন্যদিকে অস্থায়ী সদস্য ১০ দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিরা এই সফরে থাকছেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন চলতি মাসের (এপ্রিল) জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি পেরুর স্থায়ী প্রতিনিধি গুস্তাভো মেজা-কুয়াদ্রা।
শনিবার রাতে কক্সবাজারের একটি হোটেলে বিশ্রাম নিয়ে পরের দিন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে সরাসরি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্য রেখায় চলে যাবেন তারা। স্বচক্ষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শনের পর আগামীকাল রবিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে প্রতিনিধি দলটির। পরের দিন সোমবার ঢাকা থেকে মিয়ানমারের নেপিদো’তে যাবেন তারা। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করবেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিককালে সমস্যাসঙ্কুল অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের এটাই এ ধরনের প্রথম সফর।
সূত্র জানায়, প্রতিনিধি দলের সফরে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাদের চালানো সহিংসতার চিত্র এবং মানবিক সংকট মোকাবেলায় গৃহীত পদক্ষেপের বিস্তারিত তুলে ধরবে বাংলাদেশ সরকার। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ কামনা করা হতে পারে।
সফরে আসার আগে পেরুর রাষ্ট্রদূত গুস্তাভো মেজা-কুয়াদ্রা গণমাধ্যমকে বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের যেসব এলাকা থেকে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং নৃশংসতা চালানো হয়েছে, সেসব এলাকা পরিদর্শন করবেন তারা। মিয়ানমার সরকার তাদের অনুমতি দেবে।
গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাদের চালানো জাতিগত নিধনযজ্ঞের মুখে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এসব রোহিঙ্গারা বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে থাকছে। তাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি হলেও এখন পর্যন্ত প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। সূত্র আরো জানায়, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের অনাগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে এ সফরকে খুবই তাত্পর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদের কঠিন পদক্ষেপ ছাড়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো কঠিন বলে অনেকে মনে করেন। ফলে নিরাপত্তা পরিষদ এ ব্যাপারে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয় তা জানার জন্য পরিষদের সদস্যদের সফরের দিকে সবাই তাকিয়ে আছেন।
প্রতিনিধিদের সফরকালে রোহিঙ্গারা তাদের ওপর রাখাইনে যে নিষ্ঠুরতা চালানো হয়েছে তার বর্ণনা দেবেন। পাশাপাশি নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার লক্ষ্যে নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ কামনা করতে পারেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারাও মনে করেন, নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব।