28 C
Dhaka
জুলাই ১৩, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জাতীয়

স্টোরি অব আ রিয়েল ম্যান

আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২০, ১৩:৩২

 

উপমহাদেশে প্রথম জেল হত্যাকাণ্ড ঘটে ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল। রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে। রাজবন্দীদের ওপর চালানো গুলিতে সাতজন রাজবন্দী শহীদ হন। অন্য রাজবন্দীদের প্রায় সবাই কমবেশি আহত হন। নির্মম এ ঘটনাটি প্রথম জনসমক্ষে আসে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের সময় দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য উপলব্ধি করে সাধারণ মানুষ। ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী আতাউর রহমান খান খাপড়া ওয়ার্ড নিয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিলে বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। ১৯৬২ সালে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের জন্য ছাত্রদের সংগ্রামের আংশিক সফলতার পটভূমিতে খাপড়া ওয়ার্ডের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। খাপড়া ওয়ার্ডে সেই নির্মম ঘটনার শিকার এক লড়াকু রাজবন্দী ছিলেন নূরুন্নবী চৌধুরী (?-২০০৪)। আহত হয়ে তাঁকে বাঁ পা কেটে ফেলতে হয়েছিল। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন মতিউর রহমান।

নূরুন্নবী চৌধুরী।

নূরুন্নবী চৌধুরী।

সেদিন বুধবার, ১৬ মার্চ ১৯৮৮ সাল। কলকাতাজুড়ে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। অফিসফেরত মানুষের দারুণ ভিড় তখন পার্ক স্ট্রিট আর সাকু‌র্লার রোডের ক্রসিংয়ে। ট্রাম, বাস, ট্যাক্সি আর মানুষের গাদাগাদির মধ্যে আমি দাঁড়িয়ে। রাস্তা পার হব। আমার ভেতরে তখন ঈষৎ এক কম্পন।

 

আমি একা নই। আমার সঙ্গে একজন, যাঁর সঙ্গে সেদিন দুপুরেই সরাসরি পরিচয়—যদিও তাঁকে আমি জানি দীর্ঘদিন—তিনি দুই ক্রাচে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে। তিনিও কলকাতার সন্ধ্যার ওই ভিড় অগ্রাহ্য করে রাস্তা পার হবেন। আমরা যাচ্ছি রাস্তার ওপারের এক স্টুডিওতে তাঁর ছবি তুলতে। আমি তাঁর একটি ছবি রাখতে চাই।

 

 

তিনি নূরুন্নবী, বাঁ পা ঊরু থেকে কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে সেই কবে, আটত্রিশ বছর আগে। আর এই আটত্রিশ বছর ধরে তিনি দুই ক্রাচে ভর দিয়ে চলেন। তাঁর বয়স এখন ষাট। কিন্তু দেখলে তা মনে হয় না। সুন্দর সৌম্য চেহারা। যুবা বয়সের সুঠাম দৈহিক গড়ন আন্দাজ করতে অসুবিধা হয় না।

 

১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহীর খাপড়া ওয়ার্ডে রাজবন্দীদের ওপর গুলি চালানোর ফলে সাতজন শহীদের সঙ্গে নূরুন্নবী গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন। পায়ে গুলি লেগেছিল। ক্ষতস্থানে গ্যাংগ্রিন হলে পা কেটে ফেলে দিতে হয়। তারপর থেকে ক্রাচ দুটিই তাঁর সঙ্গী, আশ্রয় আর বন্ধু। কাজ করেন একটি মাসিক কাগজে। থাকেন কলকাতার এক মেসে। স্ত্রী, ছেলেমেয়ে থাকেন বর্ধমানের নিজামপুর গ্রামে। সেখানেই তাঁর পৈতৃক বাসভূমি।

 

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলে নূরুন্নবী নিজের ইচ্ছায় সরকারি চাকরিতে যোগ নিয়ে তৎকালীন পূর্ব বাংলায় চলে এসেছিলেন। খুলনায় সিভিল সাপ্লাই অফিসের চাকরিতে যোগ দেন। গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলনে অংশ নিয়ে এই নতুন দেশটি গড়ার লক্ষ্যে তিনি এক সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেদিন। সে সময় আরও অনেকেই এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়ে পূর্ব বাংলায় এসেছিলেন। অনেকে চরম অত্যাচার, নির্যাতন আর সীমাহীন দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও এ দেশে থেকে গেছেন মাটির টানে, আদর্শের জোরে।

 

নূরুন্নবী ১৯৪৭ সালেই কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করেছিলেন। খুলনায় প্রথমে তিনি রেলশ্রমিক ইউনিয়নের গোপন সংগঠক হিসেবে রাজনীতিতে অংশ নেন। ১৯৪৮ সালের ৯ মার্চের রেল ধর্মঘটের পর তিনি আকস্মিকভাবে গ্রেপ্তার হন। প্রায় এক বছর খুলনা জেলে থাকার পর ১৯৪৯ সালের মে মাসে নূরুন্নবীকে রাজশাহী জেলে পাঠানো হয়। সেখানে খাপড়া ওয়ার্ডে তিনি জায়গা পান। তখন দেশের বিভিন্ন স্থানের নানা বয়সের ৩৯ জন রাজবন্দী রাজশাহী জেলে ছিলেন।

 

সে সময়টায় বামপন্থী ও কমিউনিস্ট আন্দোলনের মধ্যে তুমুল তর্কবিতর্ক চলছে। কৌশল হিসেবে গৃহীত হয়েছিল এক চরম হঠকারী নীতি। সে জন্য সমস্যা-সংকটের অন্ত ছিল না। রাজবন্দীদের জেলজীবনও এসব থেকে বাইরে ছিল না। পাকিস্তান নামের নতুন কৃত্রিম রাষ্ট্রের শাসন পরিচালনার ভার যাদের ওপর ন্যস্ত হয়েছিল, সেই প্রতিক্রিয়াশীল মুসলিম লীগ সরকারের শাসন-শোষণ আর অত্যাচারও চরমে উঠেছিল। শুরু থেকেই এ দেশের যেকোনো গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনকে নিমূ‌র্ল করতে সচেষ্ট ছিল তারা। আর সে জন্য দেশের সব কটি কারাগারই বিনা বিচারে আটক শত শত রাজবন্দীতে পূর্ণ ছিল।

 

জেলে রাজবন্দীদের দুর্দশার শেষ ছিল না। সাধারণ কয়েদিদের মতো একই ব্যবস্থা ছিল তাঁদের। ব্রিটিশ শাসনামলে বহু সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত রাজবন্দীদের সুযোগ-সুবিধাগুলোও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। সে জন্য রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে বিশেষ মর্যাদা ও তদানুযায়ী খাদ্য, পরিধেয়, পড়াশোনার ব্যবস্থার জন্য ঢাকা ও রাজশাহীর রাজবন্দীরা ১৯৪৯ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চারবারে মোট ১৫০ দিনের মতো অনশন ধর্মঘট করেছিলেন। এসব অনশন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজবন্দীদের কিছু সুযোগ-সুবিধা আদায় হলেও বহু প্রতিশ্রুতি কর্তৃপক্ষ রক্ষা করেনি।

 

সে সময় রাজশাহী জেলের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। আর কয়েদিদের সঙ্গে করা হতো পাশবিক আচরণ। এমনকি তাঁদের দিয়ে ঘানি পর্যন্ত টানানো হতো। খাবার যা দেওয়া হতো, তা ছিল মানুষের খাওয়ার অযোগ্য। ১৯৫০ সালের এপ্রিল মাসে এসব ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সাধারণ কয়েদিরা অনশন ধর্মঘট করেছিলেন। রাজশাহী জেলের রাজবন্দীরাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন।

 

অনশন ধর্মঘটের কয়েক দিনের মধ্যেই জেল কর্তৃপক্ষ কয়েদিদের ঘানি টানানো বন্ধ ও উন্নত খাদ্য সরবরাহের দাবি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু রাজবন্দীদের ওপর ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়ে উঠেছিল তারা। দাবিদাওয়া, অনশন ধর্মঘট প্রভৃতি নিয়ে রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডের রাজবন্দী আর জেল কর্তৃপক্ষের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল। কর্তৃপক্ষ রাজবন্দীদের ব্যাপারে কিছু ব্যবস্থা, বিশেষ করে খাপড়া ওয়ার্ড থেকে নেতৃস্থানীয় কয়েকজন রাজবন্দীকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। রাজবন্দীরা এ সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকার করেন।

এ রকম উত্তেজনাপূর্ণ এক পটভূমিতে ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে, কোনো সতর্কসংকেত ছাড়াই খাপড়া ওয়ার্ডের চারদিককার জানালা দিয়ে ব্যাপক গুলিবর্ষণ করা হয়। গুলিবর্ষণের পর বর্বরোচিতভাবে লাঠিপেটাও করা হয় আহত ব্যক্তিদের। পুলিশের গুলিতে সাতজন রাজবন্দী—বিজন সেন, দেলোয়ার হোসেন, হানিফ শেখ, কম্পরাম সিংহ, সুখেন্দু ভট্টাচার্য, সুধীন ধর ও আনোয়ার হোসেন নিহত হ

সম্পর্কিত পোস্ট

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে: আইন উপদেষ্টা

banglarmukh official

শুক্রবার কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক, দ্রুত বিচার নিশ্চিতের নির্দেশ

banglarmukh official

২০২৬ সালেই বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণ করা হবে

banglarmukh official

জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায়

banglarmukh official