রাজপথে আন্দোলন করে নয়, বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে বিএনপিকে আইনি পথেই হাঁটতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলেন, প্যারোলে মুক্তির আবেদন করা হলে তা মানবিকভাবে বিবেচনায় নেবে সরকার। রাজধানীতে আলাদা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তারা।
রবিবার (০৭ মার্চ) সকালে রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। সেখানে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে এখনো কোনো আবেদন সরকারের কাছে আসেনি। আবেদন জমা পড়লে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে কেউ যদি আবেদন করেন, আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবো আইনের কোনো বাধা আছে কিনা, তারপর জানাবো।
এদিকে, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন আয়োজিত যুব সম্মেলন-২০১৯ এর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করছে।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, মির্জা ফখরুলের কথা অবান্তর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, একমাত্র খালেদা জিয়া আবেদন করলেই প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিবেচনা করা হবে, না হয় বিবেচনার কোনো প্রশ্নই আসে না।
আন্দোলন করে বেগম জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। একই দিন দুপুরে ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।
মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আসেন। তাকে মুক্ত করতে হলে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত করা ছাড়া দ্বিতীয় আরেকটি উপায় আছে, তা হলো রাষ্ট্রপতির কাছে তার অপরাধের দায় স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তবে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করতে পারেন।
বেগম জিয়ার মুক্তি রাজনৈতিক কোনো বিষয় নয়, বরং এর সমাধানে বিএনপিকে আইনি পথে হাঁটার পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
ওদিকে, কুমিল্লায় বাসে আগুন দিয়ে ৮ জনকে হত্যার মামলায় বেগম জিয়ার জামিন আজ রবিবারও বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। তার আইনজীবীরা বলছেন, প্যারোল নয় আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম জিয়ার মুক্তি হবে। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন, অসুস্থতার কথা বিবেচনায় নিয়ে প্যারোলের কথা ভাবছে সরকার, কিন্তু বিএনপি এটা নিয়ে রাজনীতি করছে।
বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে নাশকতার যে কয়টি মামলা হয়েছে তার মধ্যে কুমিল্লায় বাসে আগুন দিয়ে আটজনকে হত্যা মামলাটি অন্যতম।
এ মামলায় হাইকোর্টের জামিন আজ রবিবার বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এরপর তার আইনজীবীরা বলছেন, প্যারোল নয়, আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত হবেন বেগম জিয়া।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে যদি নতুন করে কোনো মামলা না দেয়া হয়, তাহলে বাকি দুই মামলায় জামিন পেলে খালেদা জিয়া জেল থেকে বের হতে পারবে। চাই আইনগতভাবে তাকে মুক্তি দেয়া হোক। সরকার যদি প্যারোল তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়, সেটা তিনি কতটুকু মেনে নেবেন সেটা হচ্ছে কথা।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন, মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে বেগম জিয়ার প্যারোলের কথা বলছে সরকার। কিন্তু বিএনপি এটা নিয়ে রাজনীতি করছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এটা খুব মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই বলা হয়েছে। কিন্তু এটাকে নিয়ে রাজনীতি করার কোনো অবকাশ নেই।
বেগম জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, মুক্তি পেতে জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় এবং মানহানির এক মামলায় জামিন নিতে হবে তার।
২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ চলাকালে বাসে পেট্রোল ঢেলে দেয়া আগুনে ৮ জন নিহত হয়। এ ঘটণায় বেগম জিয়াকে হুকুমের আসামি করে বিএনপি -জামায়াতের ৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করে পুলিশ।