28 C
Dhaka
জুলাই ৭, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জাতীয় প্রচ্ছদ

‘অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যম বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে’

গণমাধ্যমের আয়ের প্রধান খাত বিজ্ঞাপন। এর উল্লেখযোগ্য অংশ ক্রমেই ডিজিটাল নানা মাধ্যমে ধাবিত হচ্ছে। আয় কমে যাওয়ায় আর্থিক সক্ষমতার বিচারে দুর্বল হয়ে পড়ছে প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমগুলোও। পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ আরো বেশকিছু কারণে সংকটের মুখোমুখি দেশের গণমাধ্যম। এসব বিষয় নিয়ে সম্প্রতি বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন তথ্যমন্ত্রীড. হাছান মাহমুদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুমন আফসার ও তানিম আহমেদ

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন ওঠে। এ নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?

বাংলাদেশে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করছে। অনেক ক্ষেত্রে অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে বাংলাদেশের গণমাধ্যম। উদাহরণ হিসেবে বলব, যুক্তরাজ্যে যদি কেউ কারো বিরুদ্ধে ভুল কিংবা অসত্য সংবাদ পরিবেশন করে, তাহলে পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা হলে তাদের মোটা অংকের জরিমানা দিতে হয় এবং সেখানে এটা হরহামেশাই হয়ে থাকে। একটি ভুল সংবাদ পরিবেশনের কারণে কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে ১৬৭ বছরের পুরনো পত্রিকা নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডকে। সেটি দিতে না পারার কারণে তাদের পত্রিকা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। কিছুদিন একজন এমপির বিরুদ্ধে ভুল সংবাদ পরিবেশনের কারণে বিবিসিকে ক্ষমা চাইতে হয়েছে এবং বিবিসির পুরো টিমকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি।

গণমাধ্যমকে অবশ্যই স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। আমরা একটি যুক্তিভিত্তিক, তর্কভিত্তিক সমাজের মধ্যে বাস করি। যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এটি করার জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য। বর্তমান সরকার এ স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্বও রয়েছে, যাতে করে কারো বিরুদ্ধে কোনো ভুল সংবাদ পরিবেশন না হয়; ভুল কিংবা অসত্য সংবাদ প্রকাশ পেলে সে যেন প্রতিকার পায়, সে ব্যবস্থাও করা প্রয়োজন। আমাদের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যেমন উন্নত রাষ্ট্রের মতো হওয়া প্রয়োজন, একই সঙ্গে আমাদের দায়িত্ববোধও সে জায়গায় নিয়ে যেতে হবে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা নিয়েও কিন্তু আপত্তি আছে…

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হয়েছে দেশের সব মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তার স্বার্থে। এটি কারো বিরুদ্ধে কিংবা পক্ষে নয়। এটা নিয়ে কারো উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ ধরনের আইন পৃথিবীর সব দেশেই হচ্ছে। বেশির ভাগ দেশ এমন আইন প্রণয়ন করেছে। যারা এখনো করেনি তারাও করছে। তবে এ আইনের অপব্যবহার করে কেউ যেন কাউকে হয়রানি করতে না পারে, সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।

গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু নানা সংকটে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বিবেচনায় বরং দুর্বল হয়ে পড়ছে খাতটি। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

গত ১০ বছরে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। ১০ বছর আগে দৈনিক পত্রিকা ছিল ৭৫০টি, এখন এ সংখ্যা ১ হাজার ২৫০। আগে টেলিভিশন চ্যানেল ছিল ১০টি। এখন ৩০টির বেশি, যদিও ৪৪টির লাইসেন্স দেয়া আছে। অনলাইন নিউজ পোর্টাল ছিল হাতেগোনা কয়েকটি, এখন কয়েক হাজার। সুতরাং গণমাধ্যমের ব্যাপক বিকাশ হয়েছে। কোনো জিনিসের যখন ব্যাপ্তি ঘটে, তখন তার সঙ্গে কিছু সমস্যাও তৈরি হয়। গণমাধ্যমও এ থেকে মুক্ত নয়। সারা পৃথিবীতে বহুমাত্রিক গণমাধ্যম চালু রয়েছে। আগে সংবাদ প্রচারের জন্য পত্রিকা কিংবা টেলিভিশনের ওপর নির্ভর করতে হতো। এখন অনলাইন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে পত্রিকা ও টেলিভিশন ছাড়াই যেকোনো সংবাদ মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পারে।

আবার সংবাদ মাধ্যমগুলো প্রতিযোগিতার কারণে নিজেরাই বিজ্ঞাপনের দর কমিয়ে দিচ্ছে। আগে টেলিভিশনে ১ মিনিটের বিজ্ঞাপন প্রচার করতে যত টাকা লাগত, এখন তার চেয়ে অনেক কম টাকায় তা প্রচার করা যায়। এতে বিজ্ঞাপনের রেটটাই কমে গেছে। মোটাদাগে এগুলোই হচ্ছে গণমাধ্যম খাতের দুর্বলতার কারণ। আমরা কারণগুলো চিহ্নিত করে গণমাধ্যমের ব্যাপ্তির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।

বিজ্ঞাপনই এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ফেসবুক, ইউটিউবের মতো ডিজিটাল নানা মাধ্যমে এসব বিজ্ঞাপনের উল্লেখযোগ্য অংশ চলে যাচ্ছে। এতে সরকারও রাজস্ববঞ্চিত হচ্ছে।

আমাদের দেশের গণমাধ্যমগুলো প্রধানত বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল। সেই বিজ্ঞাপন এখন ভাগাভাগি হয়ে গেছে। পত্রিকা ও টেলিভিশনের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু বিজ্ঞাপনের পরিমাণ সেভাবে বাড়েনি, বরং অনেক ক্ষেত্রে কমেছে। এখন অনেক বিজ্ঞাপন চলে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আবার অনেকে আইন-বহির্ভূতভাবে বিদেশী টেলিভিশন চ্যানেলগুলোয় বিজ্ঞাপন পাঠাচ্ছে। এটা যাতে না হয় সেজন্য এখন আমরা কঠোর হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী আমাকে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে আমরা অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। বিদেশী চ্যানেল আমাদের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারবে না। বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন যাতে বাইরে যেতে না পারে, এ বিষয়ে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করার উদ্যোগ নিয়েছি।

ইউটিউব, ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের একটা অংশ চলে যাচ্ছে। এ থেকে সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না বললেই চলে। কীভাবে এটিকে একটা নিয়মনীতির মধ্যে আনা যায়, তা নিয়ে কাজ চলছে। এক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের উদাহরণ বিশ্লেষণ করে দেখছি। শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব আমরা।

গণমাধ্যম খাতকে আরো সুশৃঙ্খল ও দৃঢ় ভিত্তি দিতে সরকারের পক্ষ থেকে নীতিগত কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে কি?

এজন্য গণমাধ্যমকর্মী আইন প্রণয়ন করছি। বর্তমানে এ আইনের খসড়া কয়েক ধাপ পার হয়ে ভেটিংয়ের শেষ পর্যায়ে আছে। জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে এটি উত্থাপন করা যায় কিনা, সে চেষ্টা করছি আমরা। সম্প্রচার আইনও ভেটিংয়ের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সেটিকেও আগামী অধিবেশনে উত্থাপনের চেষ্টা করব, তবে পারব কিনা জানি না। এ আইনগুলো যখন হবে, তখন গণমাধ্যমের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের চাকরির নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে আইনি একটি কাঠামো দাঁড়াবে এবং আইনি সুরক্ষা হবে।

নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি কমিটি আছে। এ কমিটির চেয়ারম্যান হলেন আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি অসুস্থ হওয়ার কারণে এটা পিছিয়ে গেছে। এরই মধ্যে ফিরে এসেছেন তিনি। শিগগিরই এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে।

ভুয়া সংবাদ প্রচার ও ভুইফোঁড় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। একইভাবে ইউটিউব বা ফেসবুকভিত্তিক যে ধরনের প্রচারণা চালানো হয়, সেগুলোর বিষয়েও আপনার মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ রয়েছে নিশ্চয়?

বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। সম্প্রচার আইনের মাধ্যমে এক্ষেত্রে শৃঙ্খলা নিয়ে আসা সম্ভব হবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারে অনুষ্ঠানের মান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। মানসম্মত অনুষ্ঠান তৈরিতে কী পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন?

বিটিভি অনুষ্ঠানের মানের বিষয়ে একটা সমস্যা ছিল। সেখানে ফরমায়েশি অনেক প্রোগ্রাম হতো। নানা দিক থেকে চাপ প্রয়োগ করে সে প্রোগ্রাম করা হতো। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর তা বন্ধ করে দিয়েছি। কেউ প্রোগ্রাম করার জন্য প্রস্তাব দিতেই পারে, সেটা মানসম্মত কিনা, তা বিটিভির একটা প্যানেল যাচাই করবে, তারপর প্রচার হবে। এরই মধ্যে অনুষ্ঠানের মান আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আরো ভালো হবে।

ভারতে বাংলাদেশী চ্যানেল সম্প্রচারের বিষয়ে যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সেটার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাই…

আমি সহসা একটা সুসংবাদ দিতে পারব। এখনই কিছু বলতে চাই না, কারণ ভারতে এখন নির্বাচন চলছে।

দেশে মানসম্মত সিনেমা না থাকায় দর্শক হলবিমুখ হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনারা কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

বাংলাদেশে মাঝে কিছু সময় সিনেমায় বন্ধ্যাত্ব ছিল, মানসম্মত সিনেমা ছিল না। কিন্তু গত কয়েক বছরে কিছু তরুণ ও স্মার্ট পরিচালক-প্রযোজক ভালো সিনেমা নির্মাণ শুরু করেছেন। এরই মধ্যে বেশকিছু মানসম্মত সিনেমা তৈরি হয়েছে, যে সিনেমাগুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে দেখার মতো এবং মানুষ দেখছেও। সিনেমায় যে বন্ধ্যাত্ব ছিল তা কেটে গেছে বলে আমি মনে করি। তার পরও আমি বলব আজ সিনেমার যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তা কয়েক দশকের নানা প্রতিকূলতার কারণে হয়েছে। এটি থেকে উত্তরণের জন্য আমরা একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। পরিকল্পনাগুলো হলো সরকারি অনুদানে সিনেমা বানানো, অনুদানের পরিমাণ ও সিনেমার সংখ্যা বাড়ানো। অনুদানে তৈরি সিনেমা অবশ্যই হলে মুক্তি দিতে হবে। সরকারি অনুদানে কিছু আর্টফিল্ম হতেই হবে। কিন্তু বেশির ভাগ সিনেমা যাতে হলে মুক্তি পায়, সেটা দেখতে হবে।

এফডিসির উন্নয়নের জন্য আমরা ৩৫০ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছি। বঙ্গবন্ধু ফিল্মসিটির যাত্রা শুরু হয়েছে। এটি উন্নয়নের জন্য আমরা একটা মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। পাশাপাশি দেশের বড় জেলাগুলোয় আমরা তথ্যভবন নির্মাণ করব, যেটিতে একটি সিনেমা হলও থাকবে। কিন্তু শুধু ভালো সিনেমা হল হলেই হবে না, ভালো সিনেমাও আসতে হবে। তা না হলে মানুষ সিনেমা হলে যাবে না। এজন্য প্রথমে সিনেমা বানানোর জন্য প্রণোদনা এবং বানানোর পর সিনেমা যদি ভালো হয়, সেটিকে প্রণোদনা দেয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি আমরা।

সিনেমা হল মালিকরা ভারতীয় হিন্দি সিনেমা আমদানির জন্য দাবি জানাচ্ছেন। এটা কীভাবে দেখছেন?

সীমিতসংখ্যক ভারতীয় হিন্দি সিনেমা আমদানি করতে দেয়া একটা দাবি সিনেমা হল মালিকদের রয়েছে। তারা বছরে ছয়টি কিংবা ১০টি সিনেমা আমদানি করতে চায়। এটা নিয়ে আমি বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি। যদি সিনেমা প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী সবাই একমত হন, তাহলে আমরা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেব।

সম্পর্কিত পোস্ট

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে: আইন উপদেষ্টা

banglarmukh official

শুক্রবার কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক, দ্রুত বিচার নিশ্চিতের নির্দেশ

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

২০২৬ সালেই বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণ করা হবে

banglarmukh official