25 C
Dhaka
এপ্রিল ৩০, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ক্রিকেট খেলাধুলা প্রচ্ছদ

কার হাতে উঠবে বিশ্বকাপ শিরোপা?

অনলাইন ডেস্ক ::

বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফো বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা তাদের রিপোর্টারদের মতামত নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করলো। সেখানে সবার কাছেই একটা কমন প্রশ্ন, কে জিতবে বিশ্বকাপ?

সেখানে অংশ নিয়েছে ২০জনেরও বেশি করেসপন্ডেন্ট। ছোট্ট কথায় নিজের পছন্দ এবং কেন তিনি সেই দেশকে বেছে নিলেন তার একটা সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাও দিয়ে দিলেন। সেই রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশের পছন্দে উঠে এলো ইংল্যান্ড এবং ভারতের নাম। কেন বিশ্বকাপ জিতবে তারা, সে ব্যাখ্যাও এসেছে। শুধু তাই নয়, কেউ কেউ ওয়েস্ট ইন্ডিজকেই সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তালিকাভূক্ত করে নিয়েছে।

যে কোনো বিশ্বকাপ সামনে আসুক না কেন, স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্নটা চলে আসে, কে জিতবে এবারের বিশ্বকাপ? বিশ্বকাপ কেন, যে কোন প্রতিযোগিতা শুরুর আগেই আলোচনা শুরু হয়ে যায়, কে হবে চ্যাম্পিয়ন? ধরে নিলাম কেউ আলোচনা করছে না; কিন্তু প্রতিটি ক্রীড়ামোদীর অবচেতন মনেই ধারণা জন্মে যে, এবার এই দলটি শিরোপা জিততে পারে। সমসাময়িক সময়ের পারফরম্যান্স, দলের অবস্থা, খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতা- সব কিছুর ওপর নির্ভর করেই একটা ভবিষ্যৎ ধারণা তৈরি করে ফেলে ক্রীড়াপ্রেমীরা।

তবে কখনও কখনও সে সব ধারণার কোনোটা সঠিক প্রমাণিত হয়, আবার কোনো কোনো সময় সব ধারণা, ভবিষ্যদ্বাণীকে উল্টে দিয়ে বাজিমাত করে ফেলে অন্য কেউ। গতবছর রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলের কথাই ধরুন না কেন! কে চ্যাম্পিয়ন হবে তা নিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর আগে ছিল অনেক ধারণা, অনেক আলোচনা, ভবিষ্যদ্বাণী।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব ধারণা আর ভবিষ্যদ্বাণীকে ভুল প্রমাণিত করলো রাশিয়া বিশ্বকাপ। সবাইকে পেছনে ফেলে ফাইনালে উঠে এসেছিল এমন একটি দল (ক্রোয়েশিয়া), যাদের কথা কেউ চিন্তাতেই আনতে পারেনি। চ্যাম্পিয়ন হওয়া ফ্রান্সের কথা কেউ একটু-আধটু বললেও, চূড়ান্ত বিচারে তাদেরকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে কেউ ধরেইনি। কিন্তু সবাইকে ভুল প্রমাণ করে চ্যাম্পিয়ন হলো ফ্রান্স।

ফুটবল খেলাকে অনিশ্চয়তার খেলা বলা হয় না। তবুও ফুটবল বিশ্বকাপ পুরোটাই ঘিরেছিল অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে বন্দী। তাহলে, গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটের ক্ষেত্রে কি ঘটতে পারে? একবার ভাবুন!

এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। কারণ, এবারের বিশ্বকাপটাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ১৯৯২ বিশ্বকাপের ফরম্যাটে। সবাইকে সবার সাথে খেলতে হবে। প্রতিটি দলকে খেলতে হবে ৯টি করে ম্যাচ। এরপরই নিশ্চিত হবে সেমিফালে যাবে কারা। লম্বা এই টুর্নামেন্টে খেলোয়াড়দের কতজনের ফিটনেস থাকে, কতজন ইনজুরিতে পড়ে- তার কোনো ইয়ত্তা নেই। শেষ পর্যন্ত যে কোন দল নিজেদের টেম্পারমেন্ট ঠিক রাখতে পারে, সেটার ওপর নির্ভর করবে আসলে কে হবে চ্যাম্পিয়ন।

১৯৭৫ সালে শুরু হওয়ার পর দু’বার চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এতে বিস্মিত হয়নি কেউ। ক্যারিবীয় দলে তখন ছিল তারকা আর নক্ষত্রের ছড়াছড়ি। বিস্ময় জাগিয়েছিল ১৯৮৩ সালের আসরের ভারত। কেবল ফাইনালই খেলেনি তারা, অবিশ্বাস্যভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে শিরোপাও জিতেছিল কপিল দেবের ভারত। ক্রিকেট ইতিহাসে এখনও যাকে ধরা হয়, অন্যতম সেরা অঘটন।

এরপরের আসরেও ফেবারিটদের তালিকায় ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৯৮৭ সালে ভারত-পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত ওই আসরে স্বাগতিকরা ছিল বেশ শক্তিশালী দল। ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজও তখনও ফেবারিট; কিন্তু সেবার শিরোপা জিতলো অস্ট্রেলিয়া। ওয়েস্ট ইন্ডিজ গ্রুপ পর্বের বাধাই পার হতে পারেনি।

অথচ চ্যাম্পিয়ন হলো এমন একটি দল, যারা এর আগের ৫০ বছরে এতটা দুর্বল ছিল না। চ্যাপেল ভ্রাতৃদ্বয়, লিলি, মার্শ প্রমুখ তারকার অবসরে ভেঙ্গে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট। অ্যালান বোর্ডার সম্পূর্ণ একটি তারুণ্য নির্ভর দল নিয়ে চমকে দিলেন বিশ্বকে। ডার্ক হর্স হয়ে শিরোপা জেতার পর ১৯৯২ সালে নিজেদের মাটিতে তারা ছিল টপ ফেবারিট। সেবার বিশ্বকাপ জিতলো ল্যাংড়া ঘোড়া পাকিস্তান। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সেমিফাইনালে উঠেই তাক লাগিয়ে দিল ইমরান খানের দল। অথচ পাকিস্তান বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়ে ফেলেছিল প্রায়।

১৯৯৬তে কে ভেবেছিল শ্রীলংকা বিশ্বকাপ জিতবে! অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিজ দেশে খেলা পাকিস্তান-ভারতও ছিল ফেবারিটের তালিকায়। ভারত কোয়ার্টার ফাইনালেই পাকিস্তানকে বিদায় করে দেয়। আর সেই ভারতকে সেমি থেকে বিদায় করে দেয় শ্রীলংকা। এরপর তাদের বড় চমক ছিল লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা জয়। অরবিন্দ ডি সিলভার সেই অসাধারণ সেঞ্চুরি আজও সবার চোখে ভাসে।

১৯৯৬ বিশ্বকাপের থেকেই ফেবারিটের তালিকায় ঠাঁই করে নেয় লংকানরা। যদিও পরবর্তী আসর থেকে শুধুই অস্ট্রেলিয়ান যুগ। ১৯৯৯-তে পাকিস্তান, ২০০৩-এ ভারত এবং ২০০৭-এ শ্রীলংকাকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের হ্যাটট্রিক করে অসিরা।

কিন্তু ২০১১ সালের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার সাম্রাজে হানা দেয় ভারত। অসিরা বিদায় হয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই। টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে ওঠে শ্রীলঙ্কা এবং সেখানে লংকানদের হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয় করে নেয় ভারত।

২০১৫ বিশ্বকাপের আয়োজক অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার চলছিল তখন পুরোপুরি অন্তর্বর্তীকালীন একটি অবস্থা। তবুও ঘরের মাঠে তারা ছিল ফেবারিট। অন্য সব ফেবারিটকে পেছনে ফেলে মেলবোর্নে তারা মুখোমুখি হয় আরেক আয়োজক নিউজিল্যান্ডের। প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে পারলো না ব্ল্যাক ক্যাপসরা। হারলো শোচনীয়ভাবে।

বরাবরের মতই চিরন্তন প্রশ্ন, এবার বিশ্বকাপের শিরোপা জিতবে কে? এক কথায় কেউ বলতে পারছে না, কে চ্যাম্পিয়ন হবে। এমন ঝুঁকি নিশ্চয় কেউ নিতে চাইবে না। কারণ, সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নশিপের দাবিদার কিন্তু একটি-দুটি নয়, বেশ কয়েকটি। মাত্রই ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে বাংলাদেশের কাছে হেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তবুও তাদেরকে রাখা হচ্ছে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নের তালিকায়। এর একটাই কারণ, বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ফিরে এসেছেন দলে। তাদের সঙ্গে বোলাররা যদি ক্লিক করে যায়, তাহলে ক্যারিবীয়দের থামায় সাধ্য কার!

ইংল্যান্ড রয়েছে এখন তুঙ্গস্পর্শী ফর্মে। তাদের অবস্থা দেখে কেউ কেউ তো বলেই দিচ্ছেন, এই বিশ্বকাপে ৫০০ রানও হয়ে যেতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার মার্কওয়াহ এমনটাই জানিয়েছেন। ভারতের বিরাট কোহলির হাতে রয়েছে দারুণ একটি দল। চারজন পেসারের সবগুলোই রয়েছে ফর্মে। ব্যাটসম্যানরা ঠিকমত জ্বলে উঠতে পারলে লর্ডসে ১৪ জুলাই ট্রফিটা শোভা পেতে পারে কোহলির হাতেই।

অস্ট্রেলিয়ার সুদিন আবারও ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বকাপের আগে ভারতের মাটিতে কোহলিদের সিরিজ হারিয়ে দিয়ে এসেছে তারা। এছাড়া আরব আমিরাতে হোয়াইটওয়াশ করেছে পাকিস্তানকে। দলে ফিরে এসেছেন স্মিথ-ওয়ার্নার। অ্যারোন ফিঞ্চের নেতৃত্বে দলটির যে অবস্থা, তাতে নিশ্চিত বিশ্বকাপ জয়ের ক্ষমতা রাখে তারা।

বরাবরই চোকার্স দক্ষিণ আফ্রিকা। যদিও চোকার্স তকমাটা এবার খুলে ফেলার প্রত্যয় ফ্যাফ ডু প্লেসির দলের। ব্যাটিং আর বোলিংয়ে সময়ের সবচেয়ে সেরা পারফরমাররা এখন দক্ষিণ আফ্রিকার দলে। বিশেষ করে ডেল স্টেইন, রাবাদা আর লুঙ্গি এনগিদিদের নিয়ে সাজানো পেস বোলিং ডিপার্টমেন্টটা তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী। আমলা, ডি কক, প্লেসি কিংবা ডুমিনি-মিলাররা যে কোনো দলের জন্য হয়ে উঠতে পারেন মহা আতঙ্ক।

নিউজিল্যান্ড এবারও সামর্থ্য রাখে অন্তত ফাইনাল খেলার। কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বে এই দলটি ব্যাটিং এবং বোলিংয়ে দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ। গত বিশ্বকাপের মত এবারও নিজেদের ইংলিশ কন্ডিশনে মেলে ধরার সামর্থ্য রাখে ব্ল্যাক ক্যাপসরা। ফেবারিটের তালিকায় রাখা যায় পাকিস্তানকেও। দুই বছর আগে এই দলটিই ভারতকে হারিয়ে হয়েছিল আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চ্যাম্পিয়ন। সাম্প্রতিক ফর্ম খুব বাজে হলেও, বিশ্বকাপে যে কোনো বাজিমাত করে দিতে পারে তারা। এ কারণে ক্রিকইনফোর সেই রিপোর্টে কয়েকজন তাদের ফেবারিটের তালিকায় পাকিস্তানকে তুলেও এনেছেন। এর একটাই কারণ, পাকিস্তানের অনিশ্চিত ক্রিকেট।

এবারের বিশ্বকাপে নিশ্চিত বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তানকে নিয়ে কেউ বাজি ধরবে না। মিনোজ না হলেও এরা কিন্তু আন্ডারডগ। যেমন কেউ কেউ বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথাও বলছেন। যদিও গত চার বছরে দারুণ পারফরম্যান্স করে যাচ্ছে টাইগাররা। কিন্তু ইংল্যান্ডের বাউন্সি কন্ডিশন, সঙ্গে ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে প্রচুর রান- সব মিলিয়ে টাইগাররা কতদুর কি করতে পারে সেটাই দেখার বিষয়।

শ্রীলঙ্কার সেউ জৌলুস এখন আর নেই। সাঙ্গাকারা আর মাহেলা জয়াবর্ধনেদের বিদায়ের পর দলটির ভঙ্গুর অবস্থা, তাদেরকে কোনোভাবেই মাথা তুলে দাঁড়াতে দিচ্ছে না। তারওপর, নেতৃত্বের পালাবদলও এই দলের ওপর বেশ প্রভাব ফেলতে পারে। দিমুথ করুনারত্নেকে বলতে গেলে হঠাৎই করেই নেতৃত্বের আসনে বসিয়ে দেয়া হয়েছে।

অন্য দলটির নাম আফগানিস্তান। এবার নিয়ে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে তারা। তবে, যেভাবে দিনের পর দিন প্রতিভার জন্ম দিচ্ছে আফগান ক্রিকেট, তাতে এই বিশ্বকাপে রশিদ-নবিরা কোনো চমকের কিছু উপহার দিয়ে বসলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

এবারের বিশ্বকাপের ট্রফিটার দিকে চোখ রাখতে পারে বাংলাদেশও। যদি ঠিক দিনে ঠিক মতো জ্বলে উঠতে পারে মাশরাফিরা, তবে বাংলাদেশের জয়ে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এতটাই উন্মুক্ত এবারের আসর।

সম্পর্কিত পোস্ট

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায়

banglarmukh official

বরিশালে দুর্ঘটনায় নিহত ২

banglarmukh official

পাকিস্তানে ট্রেনে জিম্মি দেড় শতাধিক যাত্রী উদ্ধার, ২৭ সন্ত্রাসী নিহত

banglarmukh official

পাকিস্তানে যাত্রীবাহী ট্রেন হাইজ্যাক, জিম্মি শতাধিক

banglarmukh official