27 C
Dhaka
জুলাই ৭, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
অপরাধ আন্তর্জাতিক প্রচ্ছদ

চুক্তি করে ঘুষ যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি গাড়ি ব্যবসা

আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কম্পানি লিমিটেডের (এপিএসসিএল) ৪৫০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে স্পেনের দুটি কম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের দুই কর্মকর্তা ৬৪ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন। তাঁরা হলেন অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ার হোসেন ও এপিএসসিএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী নূরুল আলম। ঘুষের টাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় কেনা হয়েছে দুটি বাড়ি, একটি ফ্ল্যাট ও দামি গাড়ি। গড়ে তোলা হয়েছে দুটি কম্পানি। ঘুষের টাকা স্পেন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিতে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী সাইফুল ইসলাম নামের ওই প্রবাসীকে দেওয়ার কথা ছিল মোট টাকার ৫ শতাংশ (প্রায় তিন কোটি ২০ লাখ টাকা)। তবে যুক্তরাষ্ট্রে টাকা নেওয়ার পর তাঁকে কোনো অর্থ দেওয়া হয়নি।

তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ চলছে। স্পেনের সেই দুই কম্পানিই নির্মাণকাজ করছে। তবে ঘুষ নেওয়া সেই দুই কর্মকর্তার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। উল্টো তাঁদের মধ্যে একজনকে পদোন্নতি দিয়ে সরকারের সবচেয়ে অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প রূপপুর পরমাণুবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে এ তথ্য জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিষ্ঠান এপিএসসিএল ২০১২ সালের জুলাইয়ে ৪৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের দরপত্র আহ্বান করে। যৌথভাবে তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকার কাজটি পায় স্পেনের দুই কম্পানি টেকনিকাস রিইউনিডাস ও টিএসকে ইলেকট্রনিক। স্পেনের এই দুই কম্পানিকে যৌথভাবে কাজ দেওয়ার জন্য অনিয়মের আশ্রয় নেন বিদ্যুৎ বিভাগের তৎকালীন যুগ্ম সচিব ও এপিএসসিএলের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ও এপিএসসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী নূরুল আলম। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে টেকনিকাস রিইউনিডাস ও টিএসকের কাছ থেকে তাঁরা পেয়েছেন ৮০ লাখ মার্কিন ডলার (প্রায় ৬৪ কোটি টাকা)। আইনি জটিলতা এড়াতে সেই টাকা তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরই অংশ হিসেবে প্রবাসী সাইফুল ইসলামের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়। চুক্তির একটি কপি কালের কণ্ঠ’র হাতে এসে পৌঁছেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পাওয়া দুই স্প্যানিশ কম্পানি ২০১৪ সালের মার্চে ঘুষের অর্থ স্পেনের মাদ্রিদ থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকো শহরের ওয়েলস ফার্গো ব্যাংকে পাঠানো শুরু করে। ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৮ ডলারের প্রথম চালানটি সেখানে পৌঁছে ওই বছরের ১০ মার্চ। সানফ্রান্সিসকোতে ওয়েলস ফার্গো ব্যাংকের লাদেরা ল্যাঞ্চ শাখায় এপিএসসিএলের তৎকালীন এমডি নূরুল আলমের ছেলে মাহফুজ আলমের অ্যাকাউন্টে সেই টাকা পাঠানো হয়। মাহফুজ আলম সে সময় সেখানে পড়াশোনা করতেন। তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ৫২৮৩৩১৬৬৮৪, যার সুইফট কোড নম্বর ছিল ডঋইওটঝ৬ঝ। এ অ্যাকাউন্টে প্রায় ২০ লাখ ডলারের প্রথম চালানটি পাঠানো হয়েছে স্পেনের ভিলাও ভিজকা (ইরষধঁ ঠরুপধ) ব্যাংকের মাধ্যমে। লেনদেনের চেক নম্বরটি যুক্তরাষ্ট্র ব্যাংক চেক রাউটিং নম্বর হিসেবে পরিচিত, এর নম্বর ছিল ১২১০০০২৪৮। চালানটি আসে মাদ্রিদের ১৩-এরাপ্লিস, ২৮০১৫-এ ঠিকানা থেকে। ঠিকানাটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পাওয়া স্পেনের প্রতিষ্ঠান টেকনিকাস রিইউনিডাসের প্রধান দপ্তরের। টিএসকের প্রধান দপ্তরও স্পেনের মাদ্রিদে। ওয়েলস ফার্গো ব্যাংকে মাহফুজ আলমের আরেকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

ঘুষ নেওয়া দুই কর্মকর্তার পক্ষে মাহফুজ আলম স্পেন ও বাংলাদেশ থেকে ৮০ লাখ ডলার যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর অ্যাকাউন্টে নেওয়ার জন্য ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সাইফুল ইসলামের সঙ্গে ওই চুক্তি করেন। টাকা আনতে পারলে মোট অর্থের ৫ শতাংশ তাঁকে কমিশন হিসেবে দেওয়ার চুক্তি হয়। তবে স্পেন থেকে অর্থের প্রথম চালানটি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর থেকেই সাইফুলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন মাহফুজ। এরপর সাইফুল অর্থ চেয়ে বারবার যোগাযোগ করেও মাহফুজের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে পাওনা প্রায় তিন কোটি ২০ লাখ টাকা চেয়ে গত বছরের ২৭ মে সাইফুল উকিল নোটিশ দিয়েছেন মাহফুজ আলম ও তাঁর বাবা নূরুল আলমকে। সেই নোটিশেরও কোনো জবাব আসেনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঘুষের টাকা লেনদেন করতে মাহফুজকে প্রধান করে ক্যালিফোর্নিয়ায় এমজেডএ নামে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান খোলা হয়। প্রতিষ্ঠানটিকে স্পেনের দুই কম্পানি আশুগঞ্জের বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেখিয়ে অর্থ পাঠিয়েছে। স্পেনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আদালত থেকে ঘুষ লেনদেনের অপরাধ থেকে রেহাই পেতে টেকনিকাস রিইউনিডাস ও টিএসকে এই কৌশল নেয়।

তবে বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ‘নূরুল আলম যেহেতু এপিএসসিএলের এমডি, সে কারণে তাঁর প্রতিষ্ঠানের কোনো উন্নয়নকাজের পরামর্শক তাঁর ছেলের হওয়ার সুযোগ নেই। এটি বেআইনি।’

যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাহফুজ কানসালট্যান্সি বাবদ ৮০ লাখ ডলার আমেরিকায় আনার জন্য আমার সাহায্য চায়। সে বারবার আমাকে নিশ্চিত করেছে যে এই অর্থের মধ্যে বেআইনি কিছু নেই। এ কারণে আমি তাকে আমেরিকায় অর্থ আনার ব্যাপারে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে সব কিছু করে দিয়েছি। সে তখন আমার সঙ্গে লিখিত চুক্তি করেছিল যে আমেরিকায় টাকা এনে দিলে সে আমাকে আট মিলিয়নের ৫ শতাংশ বা প্রায় চার লাখ ডলার দেবে। কিন্তু অর্থ আনার পর সে আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আট মিলিয়ন ডলারই যুক্তরাষ্ট্রে এনেছে সে।’

সাইফুল বলেন, “আট মিলিয়নের পুরোটাই যে ঘুষের টাকা তা আমি জানতে পারি ২০১৫ সালের ২৫ মে। সেদিন কালের কণ্ঠে ‘সরকারি কর্মকর্তার ছেলের যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকাউন্টে গেছে ১৬ কোটি, বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পাইয়ে দিতে ৪৮ কোটি টাকা ঘুষ’ শিরোনোমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেটি পড়ার পর পুরো বিষয়টি আমার কাছে পরিষ্কার হয়। এরপর আমি তাদের উকিল নোটিশ দিয়ে জানিয়েছি যে আমার কাছে তথ্য গোপন করে ঘুষের টাকার জন্য কেন আমাকে তারা ব্যবহার করল। আমার কাছে তাদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য রয়েছে। প্রয়োজনে আমি যুক্তরাষ্ট্রের সব পর্যায়ের গোয়েন্দা সংস্থাকে বিষয়টি জানাব।”

প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে কালের কণ্ঠ দীর্ঘদিন অনুসন্ধান চালিয়েছে। এর সূত্র ধরেই ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছিল।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, সাইফুলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে মাহফুজ ক্যালিফোর্নিয়ার আরেক প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ করিমের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। করিমের বাড়ি রাজশাহী। ঘুষের টাকায় মাহফুজ দুটি কম্পানি খুলেছেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। একটির নাম এমজেডএ কনসালটিং, আরেকটি এমজেডএটিআরকে হোল্ডিং এলএলসি। এ ছাড়া ক্যালিফোর্নিয়ায় দুটি বাড়ি, একটি ফ্ল্যাট ও দামি ব্র্যান্ডের গাড়িও কিনেছেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মাহফুজ ক্যালিফোর্নিয়ার ৭৪৯ ডাব্লিউ উডক্রেস্ট এভিনিউয়ে এক হাজার ১০৯ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন তিন লাখ ৮৮ হাজার ৫০০ ডলার (প্রায় তিন কোটি ১০ লাখ টাকা) দিয়ে। ১২৬২৪ ট্যানফ্লিড ড.-এ ঠিকানায় একটি বাড়ি কিনেছেন তিন লাখ ৭২ হাজার ডলারে (প্রায় দুই কোটি ৯৭ লাখ টাকা)। বুয়েনা পার্কের ৮৩২০ ডাল স্ট্রিটে একটি বাড়ি কিনেছেন তিন লাখ ৯৫ হাজার ডলারে (প্রায় তিন কোটি ১৬ লাখ টাকা)। নতুন নতুন মডেলের দামি গাড়িও কিনছেন। এর মধ্যে গত ডিসেম্বরে কিনেছেন মার্সিডিজ বেঞ্জের সিএলএ ক্লাস মডেলের একটি গাড়ি।

আনোয়ার হোসেন বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। ঘুষের টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সম্প্রতি তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনেক দিন আগের কথা, মুখস্থ বলা কঠিন। দেখলে বলতে পারব কী অবস্থা।’ তবে গত বছর কালের কণ্ঠ’র প্রতিবেদন প্রস্তুতের সময় তিনি বলেছিলেন, ‘এ রকম কোনো লেনদেনের কথা আমার জানা নেই। এ অভিযোগ ঠিক না।’ আর নূরুল আলম অবসরে গেছেন। তাঁর বর্তমান অবস্থান জানা যায়নি। ঘুষের অভিযোগ সম্পর্কে এর আগে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, ‘আমি এর সঙ্গে যুক্ত নই। সারা জীবনে একবার গেছি যুক্তরাষ্ট্রে। আমার ছেলে সেখানে পড়াশোনা করে। আর আপনি যদি আমাকে ব্যাংকের কাগজটি দেখাতে পারতেন, তাহলে বুঝতে পারতাম যার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সে আসলে কে।’

যেভাবে প্রকল্পটি পাশ হলো : এপিএসসিএলের ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২০১২ সালের জুলাই মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়। কাজ করতে দুই হাজার ২২৬ কোটি টাকার কথা উল্লেখ করে টেকনিকাস রিইউনিডাস ও টিএসকে ইলেকট্রনিক। কিন্তু শুরু থেকেই দরপত্রে প্রয়োজনীয় অনেক কাগজ ও তথ্য দেয়নি বলে অভিযোগ ওঠে ওই দুটি কম্পানির বিরুদ্ধে। অন্যদিকে ১২ কোটি টাকা বেশি দামে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব দেয় চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চীন ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএনটিআইসি)। এদের দর ছিল দুই হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। সিএনটিআইসির দেওয়া দরপত্রে কোনো ত্রুটি না থাকলেও ১২ কোটি টাকা কম দরদাতা দেখিয়ে টেকনিকাস রিইউনিডাস ও টিএসকে ইলেকট্রনিকসকে কাজ দেওয়া হয়। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, চীনের সরকারি কম্পানির কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার সুযোগ নেই। অন্যদিকে স্পেনের দুই কম্পানি বেসরকারি হওয়ায় তাদের কাছ থেকে ৬৪ কোটি টাকা ঘুষ সহজেই আদায় করে নিতে পারেন মো. আনোয়ার হোসেন ও নূরুল আলম। এ কাজে তখন তাঁদের সহায়তা করেছিলেন প্রকল্প পরিচালক ক্ষিতীশ কর্মকার।

জানা গেছে, আশুগঞ্জে ৪৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ দুই হাজার ২২৬ কোটি টাকায় দেওয়া হলেও পরে তা বাড়িয়ে তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকা দেখানো হয়। অথচ বাংলাদেশের পিপিআর (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট) অনুযায়ী, চূড়ান্ত দর অনুমোদনের পর আপসরফার কোনো সুযোগ নেই। এ অনিয়মের ফলে বাংলাদেশের এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ক্ষতি হলেও মাঝখান থেকে দুই কর্মকর্তার পকেটে গেছে ঘুষের ৬৪ কোটি টাকা।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, আশুগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াটের এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে নির্মাণ প্রকল্পটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগে পাঠানো হলে ২০১৩ সালের নভেম্বরে প্রয়োজনীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না থাকার বিষয়টি নজরে আসে। ভেটিংয়ে না দেওয়া প্রয়োজনীয় তথ্যের মধ্যে রয়েছে—কেন্দ্রের ড্রয়িং, দরপত্র ফরম, টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন পেপারস। এ ছাড়া কেন্দ্র নির্মাণে কোনো সমস্যা দেখা দিলে আরবিট্রেশন বা সালিসি কী প্রক্রিয়ায় হবে সে ব্যাপারটিও অস্পষ্ট রয়েছে। এ ছাড়া ভেটিংয়ে পাঠানো কাগজপত্রে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ও প্রতিমন্ত্রী কারোরই কোনো সই ছিল না। উভয় স্থানে স্বাক্ষর করেছেন বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) আনোয়ার হোসেন। স্বাক্ষর না থাকার কারণ হিসেবে সেখানে লেখা রয়েছে, সচিব ও প্রতিমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় তাঁদের স্বাক্ষর পরে নেওয়া হবে। কিন্তু পরে তাঁদের স্বাক্ষর আর নেওয়া হয়নি। প্রকল্প পাস হয়ে কেন্দ্র নির্মাণের কাজ এখন শেষের দিকে। এখনো সচিব ও প্রতিমন্ত্রীর স্বাক্ষর নেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, মন্ত্রণালয় প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ও এপিএসসিএলের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন প্রকল্পটি যথাযথ কাগজপত্র ছাড়াই পাস করিয়ে নেন। এ ছাড়া দরপত্রে অংশ নেওয়া অন্যান্য কম্পানির কাগজপত্রও মূল ফাইল থেকে গায়েব করা হয়েছে।

এ নিয়ে ২০১৫ সালের ২৫ মে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পাইয়ে দিতে ঘুষ লেনদেন বিষয়ে কালের কণ্ঠে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ওই দিন বিকেলেই উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। তবে ৩০ দিনের মধ্যে কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। ইতিমধ্যে কমিটির প্রধান পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আরাস্তু খান অবসরে গেছেন। বাকিরাও আর কোনো বৈঠক করছেন না। যুক্তরাষ্ট্র থেকে টাকা ফেরানো তো দূরের কথা, অভিযুক্তদের এখনো কমিটির মুখোমুখি করতে ব্যর্থ হয়েছেন কমিটির সদস্যরা। এমনকি প্রকল্প পরিচালক ক্ষীতিশ কর্মকারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, কালের কণ্ঠে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তড়িঘড়ি করে নূরুল আলমকে পেনশনের অর্থ তুলে দিতে সহায়তা করেন আনোয়ার হোসেন ও এপিএসসিএলের ভারপ্রাপ্ত এমডি সাজ্জাদুর রহমান।

তদন্ত কমিটির কার্যক্রমে স্থবিরতার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য এনার্জি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আহমেদ কায়কাউস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রধান আরাস্তু খান অবসরে যাওয়ায় কিছু সমস্যা হয়েছে। নূরুল আলম পলাতক থাকায় তাঁকেও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে পুলিশের কাছে বিষয়টি জানানোর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, পুলিশের বিশেষ শাখা খতিয়ে দেখছে নূরুল আলম দেশে আছেন না দেশের বাইরে।’

এ বিষয়ে কথা বলতে নূরুল আলমের ছেলে মাহফুজ আলমের ফেসবুক ঠিকানায় ইনবক্স মেসেজ দেওয়া হয়। তিনি তাঁর উত্তর না দিয়ে বরং এ প্রতিবেদককে ব্লক করে দেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায়

banglarmukh official

দিল্লির ঘরে ঘরে জ্বর!

banglarmukh official

বরিশালে দুর্ঘটনায় নিহত ২

banglarmukh official

পাকিস্তানে ট্রেনে জিম্মি দেড় শতাধিক যাত্রী উদ্ধার, ২৭ সন্ত্রাসী নিহত

banglarmukh official