লঞ্চ ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই ঝালকাঠির যাত্রীরা ঢাকা যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় ঝালকাঠি ঘাট থেকে ছেড়ে যায় সুন্দরবন-১২ নামের একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ। প্রথম দিনের কেবিনের টিকিট এদকিন আগেই শেষ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। অনেক যাত্রী ডেকেও আসন ঠিক রাখার জন্য চাঁদর বিছিয়ে রেখে গেছেন। লঞ্চ ছাড়ার সময় ঢাকাগামী মানুষের ঢল নামে। তবে পুলিশ অতিরিক্ত যাত্রীদের বাড়ি ফিরিয়ে দেয়। যাত্রীরা অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই লঞ্চে ধারণ ক্ষমতা পূর্ণ করেই লঞ্চ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তবে লঞ্চের স্থানীয় ঘাট সুপারভাইজাররা দাবি করেছেন, সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই লঞ্চ ছাড়া হয়। সন্ধ্যায় লঞ্চ ছাড়লেও অনেক যাত্রীরা সকালেই এসে আসন দখল করেছেন। চাকরিতে যোগদান করতে ঝুঁকিনিয়ে হলেও ঢাকা যেতে হবে বলে জানান যাত্রীরা।
জানা যায়, করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় সরকার ২৪ মার্চ থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। সেই থেকে ঝালকাঠি-চাঁদপুর-ঢাকা রুটে বন্ধ হয়ে যায় লঞ্চ চলাচল। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবার স্বল্প পরিসরে লঞ্চ চলাচলের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধির দিকে নজর না দিয়ে কর্তৃপক্ষ অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে আজকের ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া সুন্দরবন-১২ লঞ্চের কেবিনের টিকিট বুকিং শেষ হয়েছে। একটি কেবিনও নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ঘাট সুপারভাইজার।
লঞ্চ কর্তৃপক্ষ জানায়, ঝালকাঠি থেকে প্রতিদিন একটি করে লঞ্চ ছেড়ে যায় চাঁদপুর ও ঢাকার উদ্দেশ্যে। আবার ঢাকা থেকেও একটি লঞ্চ আসে এখানে। এর মধ্যে একটি সুন্দরবন-১২ অপরটি ফারহান-৭ লঞ্চ। সুন্দরবন লঞ্চের ধারণ ক্ষমতা ৬৪০, কেবিনে আসন রয়েছে ৯৮টি। ফারহানের ধারণ ক্ষমতা ৬৩৯, কেবিনের আসন রয়েছে ৯৬টি। দুটি লঞ্চেই ঝালকাঠি থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য রবিবার ও সোমবারের কেবিন বুকিং হয়ে গেছে।
বিকেল ৫টায় লঞ্চঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, লঞ্চে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। লঞ্চের প্রবেশদ্বারেই রয়েছে জীবাণুনাশক টানেল। হাত ধোয়ারও ব্যবস্থা রেখেছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। তবে এসব কিছুই মানছেন না যাত্রীরা। বিকেল চারটার মধ্যেই লঞ্চের ডেকে যাত্রী পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বিকেল ৫টার পরে শুধুমাত্র কেবিনের বুকিং করা যাত্রীদের ঢুকতে দেওয়া হয়। তবে লঞ্চ ছাড়ার সময় হুমড়ি খেয়ে যাত্রীরা লঞ্চে উঠে পড়ে।
আসাদুর রহমান মঈন নামে এক যাত্রী ঢাকা যাওয়ার জন্য টিকিট নিতে গিয়ে জানতে পারেন কেবিন অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। তিনি বলেন, লঞ্চ ছাড়ার খবর শুনেই টিকিট শেষ হয়ে গেছে। এখন যাত্রীরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিভাবে যাবে! আমার মনে হয় লঞ্চের কোথাও জায়গা পাওয়া যাবে না।
সকালে লঞ্চে এসে চাঁদর বিছিয়ে আসন দখলে রাখা এক নারী বলেন, আমাদের অফিস খুলছে। এখনো ঢাকা যেতে পারিনি। শুনেছি বিকেলে লঞ্চে ভিড় থাকবে, তাই সকালেই এসে বসে আছি। স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা চিন্তা করলে কাজ হবে না, ঢাকা না গেলে চাকরি থাকবে না।
সুন্দরবন-১২ লঞ্চের ঝালকাঠি ঘাট সুপারভাইজার আবু হানিফ বলেন, লঞ্চের কেবিনের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। ডেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রীরা যেতে পারবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যাত্রীদের গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হবে। অতিরিক্ত কোন যাত্রীকে আমরা লঞ্চে উঠতে দেইনি।
ফারহান লঞ্চের ঘাট সুপারভাইজার মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, আমাদের লঞ্চে জীবাণুনাশক স্প্রে করার ব্যবস্থা রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং তিন ফুট নিরাপদ দূরত্বে যাত্রীদের রাখা হবে। লঞ্চে ইতোমধ্যে দূরত্ব বজায় রেখে রং দিয়ে এঁকে দেওয়া হয়েছে আসন।
ঝালকাঠি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু তাহের বলেন, অতিরিক্ত কোন যাত্রীকে লঞ্চে উঠতে দেওয়া হয়নি। যারা ডেকে বিছানা বিছিয়ে যাচ্ছেন, তাদেরকেও সাবধান করে দেওয়া হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।